X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে আ. লীগে চাঙাভাব

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১২:১৪আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:১৭

আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনে আসা নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের উদ্দেশে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচনের আর বেশি সময় বাকি নাই। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তার এই নির্দেশনার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরে নির্বাচনি ভাবনা চাঙা হয়ে উঠেছে।

দলের নব নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নেতা ও সম্মেলনে আসা জেলার নেতারা সোমবার (২৪ অক্টোবর) গণভবনে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে সেখানেও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা বলেছেন সবাইকে। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনি তফসিল শুরু করলে আমরা কাজ করবো, এই চিন্তা করে বসে থাকলে হবে না।’ দল ও সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তির মুখ থেকে নির্বাচন নিয়ে এমন বক্তব্য বের হওয়ায় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পরোক্ষভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের ভেতরে। শেখ হাসিনার মুখ থেকে এসব কথা ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও। তবে তাদের কেউ এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করতে রাজি নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আওয়াজ আসাকে আগাম নির্বাচনের বার্তা হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন বিভিন্ন মহল।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকে বের হওয়া নির্বাচনের আওয়াজকে দেখছেন সহজভাবে। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কথা বলেছেন ঠিকই, সেটা আগাম নির্বাচনের কোনও ইঙ্গিত হিসেবে নয়। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সম্মেলনে বারবার নির্বাচনের তাগিদ দেওয়ার অর্থই হলো যেহেতু দলের জাতীয় সম্মেলন এখানে সর্বস্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন, তাই নেতাকর্মীরা সরাসরি শেখ হাসিনার কাছ থেকে বার্তা পেলে অনেকটাই সিরিয়াস হবেন। এজন্যেই দলীয় সভাপতি সম্মেলনে এ আওয়াজ তুলেছেন। এটাকে আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত অথবা ভিন্নভাবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।

শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো করা সম্ভব হবে না আওয়ামী লীগের জন্যে। সবার অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন করতে হবে। এর একটি ইঙ্গিত ইতোমধ্যে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের কাউন্সিল অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের সভায় তিনি বলেছেন, ‘আগামীতে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করতে আমরা চাই না।’

সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনের আগে অনেক জায়গায় ছাড়ও দিতে হবে আওয়ামী লীগকে। তাই সেই মানসিকতাও নিয়েও দলটি কাজ করছে।

বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ রাজনীতির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। আর বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করাও একেবারেই সহজ হবে না। এক্ষেত্রে বিএনপিও নির্বাচনের বাইরে থাকলেও নানা ঝামেলায় পড়তে হবে তাদের। সবচেয়ে বড় যে ঝামেলা তা হলো দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। তাছাড়া এবার বিরোধী দলের স্ট্যাটাস না পেলে রাজনৈতিকভাবে হারিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করছে বিএনপির মধ্যে। এ বিষয়গুলো নিয়ে পর্দার অন্তরালে থেকে এক দল আরেক দলকে পরোক্ষভাবে জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।

নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার (২৪ অক্টোবর) প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, ‘বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আসতে হবে। একবার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি খেসারত দিয়েছে, সংসদেও বিরোধী দলের স্ট্যাটাস নাই, বাইরেও নাই। আবার ভুল করলে ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকতে হবে তাদেরকে।’

এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কিছুটা ছাড় দিলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আর বিএনপি নির্বাচনে আসবে এই নিশ্চয়তা পেলে কিছুটা ছাড় যেমন দেবে, আগাম নির্বাচনে যাওয়ারও একটা সম্ভাবনার কথা জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি আওয়াজ তোলা মানে আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত নয়। আমাদের সরকারের ইতোমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তাই এখন থেকেই যাতে সবাই কাজ শুরু করে, এ জন্যেই এ কথা তিনি বলেছেন।’

আগাম নির্বাচন হবে, নাকি নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্বাচন হবে-এ প্রশ্নের জবাবে  সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়ে হবে।’  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অপর একটি অংশ মনে করে,নেতাকর্মীরা যাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের তাগিদ দিয়েছেন এই বলে যে আর বেশি সময় নেই। এখনই নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ শুরু করে দিতে হবে। গত ২২/২৩ অক্টোবর দলের দুই দিন ধরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনেই মূলত শেখ হাসিনা নির্বাচনি আওয়াজ তুলে নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এও বলেছেন, ‘এবার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আমরা করতে চাই না।’ আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যে নির্বাচনি আওয়াজ উঠে আসায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা 

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনের যে আওয়াজ তুলেছেন, তা সহসাই নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে তা ‘মিন’ করে বলেননি। নির্বাচনের বাকি আছে এখনও দুবছর। আওয়ামী লীগের মতো বড় একটি দলের জন্যে দুবছর সময় মোটেও বেশি নয়। তাছাড়া, সারাদেশের নেতাকর্মীদের দুবছরের আগে আর একসঙ্গে তিনি পাবেনও না। তাই এই আওয়াজ তুলে তিনি সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এটা জটিল করে দেখা ঠিক হবে না।’

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনি  আওয়াজ তোলার নানা কারণ খুঁজতে পারেন অনেকেই। তবে আমরা মনে করি, এর পেছনে অন্য কোনও কারণ নাই। নেতাকর্মীদের তাগিদ দেওয়া ও সক্রিয় করাই এর অন্যতম কারণ।’

আরও পড়ুন: ‘দুই কন্যাকে নিয়ে আমি গর্বিত’

/এসটি/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
বাড্ডায় নারীর মরদেহ উদ্ধার
বাড্ডায় নারীর মরদেহ উদ্ধার
ম্যানসিটির ওপর চাপ ধরে রাখলো আর্সেনাল
ম্যানসিটির ওপর চাপ ধরে রাখলো আর্সেনাল
এবার এক লাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ৬ হাজার টাকার বেশি
এবার এক লাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ৬ হাজার টাকার বেশি
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ