X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২
৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

নির্বাচনি নেতৃত্বের সংকটে বিএনপি

সালমান তারেক শাকিল
৩১ আগস্ট ২০২১, ১৫:৫০আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২১, ১৬:০১

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপিসহ বিরোধী জোটকে- এই প্রশ্নই এখন বেশি ভাবাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বকে। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবাসে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবাসে, বিকল্প কোনও চেহারাও নেই সামনে। ১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে এসে দলের নীতিনির্ধারকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এই চিন্তাই এখন সবচেয়ে বেশি।

গত কয়েকদিনে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের আলাপকালে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জিয়ার পরিবার থেকে নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব ছিলো না। আড়াই বছর পর অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর ব্যতয় ঘটছে না। এক্ষেত্রে নেতাদের একমাত্র প্রশ্ন— নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবেন কে?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার সেই পথে যাচ্ছে না বিএনপি। তবে, বিকল্প কী হবে- তাও কেন্দ্রীয় নেতারা বুঝতে পারছেন না। এমনকি দলের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মোটামুটি রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে ফিরবেন না। তার স্ত্রী ‍জুবাইদা রহমানও আগ্রহী নন। তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান সবে ব্যারিস্টারি পড়াশোনা শেষ করেছেন। সেক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের পরিবারের কেউ যে থাকছেন না, তা পরিষ্কার। ফলে কার নেতৃত্বে নির্বাচন করবে বিএনপি?’

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে এই নেতা আরও বলেন, ‘মানুষের সামনে একটাই প্রশ্ন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধীপক্ষের মূল নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে। আর এই প্রশ্নের উত্তর না মিললে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করবে। হতাশা জন্ম নেবে নেতাকর্মীদের মনে । 

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে যান, তাহলে তার অধীনে নির্বাচনের কোনও অর্থ হয় না। তাদের মতো নির্বাচন কমিশন, তাদের সরকার-- সব মিলিয়ে গতবারের মতো একই অবস্থা হবে, যা অনর্থক। যে নির্বাচনে বেগম জিয়া অংশ নিতে পারবেন না, সে নির্বাচন কতখানি অর্থবহ হবে- তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

ইকবাল হাসান বলেন, ‘এই সব বিষয় আলোচনা করেই আগাতে হবে। মাঠের কী অবস্থা হবে, তাও বিবেচনায় নিতে হবে।’ তিনি মনে করেন, এবার বিএনপিকে অলআউট ফর্মূলায় যেতে হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী একটি সূত্রের দাবি, বিএনপি এখন ৪৩ বছরে পা দিচ্ছে। ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলের বযস হবে ৪৫ বছর। দলের অস্তিত্বের জন্য যেমন, তেমনি বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ফেরানোর জন্যও  আগামী নির্বাচনটি গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে এটি হবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বড় পরীক্ষা। এরচেয়ে বেশি বর্তমান সিনিয়র নেতাদের জন্য। আসন্ন নির্বাচনে জ্যেষ্ঠনেতাদের রাজনৈতিক জীবনের শেষ পরীক্ষা বলে দাবি করে সূত্রটি।

সূত্রের ভাষ্য, জিয়াউর রহমান বাকশালের বিপরীতে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। আর গত একযুগে নেতারা এ বিষয়টি বারবার উল্লেখ করলেও জনগণের কাছে দলীয় রাজনীতিকে জনপ্রিয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির না হতে পারলে দল হিসেবে শেষ সুযোগটিও হয়তো হারাবে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় বিএনপির সিনিয়র নেতারা সরকারের সঙ্গে সংলাপে গেছেন। সংলাপে লাভ হিসেবে এককাপ চা পেয়েছি আমরা।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন শরিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার নির্বাচন নিয়ে কী চিন্তা, তা বিএনপি এখনও পরিষ্কার করেনি। আলোচনাও হয়নি কোনও। শুনেছি, এখন দলের পূর্ণাঙ্গ কন্ট্রোল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে। ফলে, টেলিফোনে কথা বলে তো আন্দোলন বা নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একনেতা বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে কে তুলে ধরবে, তাকে দেশে ফেরানো দরকার। দলের জন্য, দলের ভবিষ্যতের জন্যই এটা দরকার। কিন্তু এ কাজটি কে করবে? কেউ পারবে বলে মনে হয় না। গত নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকেও ‘ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন’ এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বিএনপি।’

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়ও দলের ভেতর থেকে নেতৃত্ব দিতে তারেক রহমান কোনও নির্দেশনা দেননি। এবার কী হবে, তা এখনও অজানা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি এবার জোট করবে কি, করবে না, এটাও এখন ডিসাইড হয়নি। তবে, জোট হলেও নেতৃত্ব বিএনপির হাতেই থাকবে বলেই মনে করি।’

দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রবাসে, সেক্ষেত্রে বিকল্প? এমন প্রশ্নের জবাবে দলের প্রবীণনেতা জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটির মধ্য থেকেই এটা হতে পারে। নির্বাচন কাছাকাছি আসুক, উপযুক্ত সময়ে এটা ডিসাইড হবে।’

/এমকে/ইউএস/
সম্পর্কিত
টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
সব নেতাকর্মীকে সহনশীল হতে হবে: তারেক রহমান
সর্বশেষ খবর
‘মেগাস্টার’ বিতর্ক: আত্মপক্ষ সমর্থনে জাহিদ হাসান
‘মেগাস্টার’ বিতর্ক: আত্মপক্ষ সমর্থনে জাহিদ হাসান
চানখারপুলে হত্যা: ৮ আসামির বিষয়ে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১৪ জুলাই
চানখারপুলে হত্যা: ৮ আসামির বিষয়ে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১৪ জুলাই
গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত লিভারপুল তারকা জোতা
গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত লিভারপুল তারকা জোতা
৫৩ বছরে এমন আলোচনার সুযোগ আসেনি: আলী রীয়াজ
৫৩ বছরে এমন আলোচনার সুযোগ আসেনি: আলী রীয়াজ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল