X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুখ থুবড়ে পড়ছে বিএনপির ‘জাতীয় সরকার’ ফর্মুলা

সালমান তারেক শাকিল
০১ এপ্রিল ২০২২, ২১:২৮আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৫৯

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের আলোচনা চলছিল। এরমধ্যেই মাসখানেক আগে এই ইস্যুতে নতুন কৌশল নেয় বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকরা নির্বাচনের পর ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২৯ মার্চ (মঙ্গলবার) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তটি প্রকাশ্যে আসে। এর পরই একাধিক স্ববিরোধী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে দলটির কয়েকজন সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতা। 

দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এমন ‘আগাম ঘোষণা’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিএনপি ও এর বাইরের বিরোধী দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, এক-এগারোর পর রাজনীতিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা যেমন শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি, তেমনি ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার’ কৌশলও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল জানান, গত মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার’ গঠনের কথা উঠলে দুটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রথমত, পুরো প্রক্রিয়ায় জামায়াত ইস্যুটি না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা একাধিক গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসেন। দ্বিতীয়ত, পরদিন ৩০ মার্চ ঢাকার নয়া পল্টনে দলের এক সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ‘জাতীয় সরকার’ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বক্তব্য দেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যারা জাতীয় সরকার চাচ্ছে, তাদের বিষয়ে বলেছি সন্দেহ আছে। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিয়ে আমি যেটা বলেছি, সেটা পুরোটা দেয়নি। সম্ভবত বক্তব্যটা গতকালের নয়। গতকাল (২৯ মার্চ মঙ্গলবার) বক্তব্য দিয়েছি সেটা লিখেছে, কিন্তু আগের বক্তব্যও টেনে এনেছে। সভায় যে বক্তব্যটা আমি ফাইনালি দিয়েছি সেটা যোগ করেনি।’

মঙ্গলবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যারা একটু ধৈর্যহারা হয়ে গেছে তারা চাচ্ছে কী? জাতীয় সরকার। এখন জাতীয় সরকারটা কী? তার কী রূপরেখা, কী তার তাৎপর্য? এই রূপরেখা কারা করছে, এটা আবার সরকারের কূটচাল কিনা, মূল আন্দোলনকে আড়াল করার জন্য কোনও কিছু কিনা তা নিয়ে আমাদের ধারণা নেই।’

বক্তব্যটি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে শোনালে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এটা আমি কালকে (মঙ্গলবার) বলেছি। এর আগেও বলেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেটা বলেছেন, আমিও তা-ই বলেছি।  সেটা আমি বলেছি। অর্ধেক লিখলে যা হয়, আমার বক্তব্য প্রচারেও তাই হয়েছে।’

বিএনপির প্রভাবশালী সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, এর আগে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্যোগ নিলেই সেটা ভেস্তে গেছে। বছরখানেক আগে জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার যে উদ্যোগ প্রায় সম্পন্ন হয়ে এসেছিল, সেই উদ্যোগটিও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে মাঝপথে থমকে যায়। এছাড়া সম্প্রতি দুদকে একটি চিঠি দেওয়ার কথা ওঠামাত্রই সেটা প্রকাশ্যে চলে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাবটি রাজনৈতিক রূপ পাওয়ার আগেই বিতর্কের মুখে পড়লো দুই দায়িত্বশীল নেতার বক্তব্যের কারণে।

স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের দাবি, দলে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা সবসময় একটি পক্ষের ছিল। এই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। বিশেষ করে, দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও কোনও কোনও নেতার দুই মিনিটের ঝটিকা মিছিল, মহাসচিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন—ইত্যাদি বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কয়েকজন নেতার কাছে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করেছে তা থেকে উত্তরণ বিএনপির একার পক্ষে সম্ভব নয়, দরকার ঐকমত্য। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করে যারা বিজয়ী হবে, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, যারা বিজয়ী হবে না—সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এটাকেই বলা হচ্ছে জাতীয় সরকার। বাংলাদেশের রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই পদ্ধতির মধ্য দিয়েই দেশের উত্তরণ করতে হবে। বিএনপিও সেই পলিসি নিয়ে আগাবে।’

বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীলরা জানান, কনসার্ন পক্ষগুলোর সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা ছাড়া ‘জাতীয় সরকারের’ ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে কতখানি যুক্তিযুক্ত বা পরিপক্ব—তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

কয়েকজন দলীয় প্রধান মনে করেন, নির্বাচন পূর্ববর্তী আন্দোলন-কর্মসূচি গড়ে না তুলে ‘জাতীয় সরকার’ পদ্ধতির আলোচনা বিএনপির টোপ হতে পারে। ক্ষমতালোভী দলগুলোর কাছে অগ্রিম কিছু তুলে ধরার জন্যই এই ঘোষণা এসেছে।

এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার মন্তব্য, ‘উনি (তারেক রহমান) যেটা বলেছেন, তারা জিতলে কীভাবে সরকার হবে সেটা। এখনকার মূল প্রতিপাদ্য আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা। কিন্তু এটা তার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয় ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের ভাষ্য, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কথাটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন। রাজপথের ক্রিয়াশীল দলগুলোর মধ্যে সংবিধান, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করার প্রশ্নে বিশ্বাসযোগ্যভাবে দলগুলোর বোঝাপড়াও দরকার। বিএনপির জন্য যেমন দরকার, বিরোধী দলগুলোর মধ্যেও দরকার। তাহলেই আন্দোলন শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।’

‘বিএনপিকে আরও দায়িত্বশীল, অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তারপর নির্বাচন, সরকার গঠন—সেটা আরও পরে।’ এমনটা উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, ‘এটা না হলে বহু বিভ্রান্তি তৈরির অবকাশ থাকে। এমন প্রস্তাবের পেছনে ক্ষমতাকেন্দ্রিক নানা রাজনীতির ভিত্তি হলো এমপি-মন্ত্রী হওয়া। এটা ক্ষমতার জন্য যেসব শরিক রাজনীতি করে, তাদের আশ্বস্ত করতে বলা হয়ে থাকতে পারে।’

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’