X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি কেন নির্বাচনের পর ‘জাতীয় সরকার’ চায়?

সালমান তারেক শাকিল
০৩ মার্চ ২০২২, ২৩:২০আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ২১:২৭

কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবি-দাওয়া উঠলেও তাতে সায় নেই বিএনপির। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, “নির্বাচনের আগে নয়, বরং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটসঙ্গীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করাই হবে কল্যাণকর।”

বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘জাতীয় সরকার’ পরিকল্পনাটির পেছনে ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা থাকতে পারে। বিশেষ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এতে শেখ রেহানার থাকার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ায় প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। আর যেসব দল এই পরিকল্পনায় আগ্রহী, তাদের মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার এবং এমন সরকার হলে কার কী ভূমিকা থাকবে সেসব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি ও একাধিক বিরোধী দলের প্রধান নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা জাতীয় সরকার চাইছে, তাদের যুক্তি– আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়লে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে। সেই অস্থিরতা মোকাবিলার জন্যই জাতীয় সরকার দরকার।’

জাতীয় সরকার নিয়ে যারা সোচ্চার, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার ভাষ্য, ‘একবছর আগে থেকেই বলছি, অন্তত দুই বছরের জন্য হলেও জাতীয় সরকার প্রয়োজন। এটি প্রতিষ্ঠিত না হলে এদেশে কোনোভাবেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা যাবে না এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতীয় সরকারে আমাদের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকবে, বিশিষ্ট দুই-চার জন নাগরিকও থাকতে পারেন। তারা সত্যিকার অর্থেই ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই জাতীয় সরকারে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিও থাকবে। হয়তো শেখ রেহানাও প্রতিনিধি হতে পারেন।’

জাতীয় সরকারের ফর্মুলাটি আলোচনায় আসে মূলত ওয়ান-ইলেভেনের সময়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও এটি আলোচিত হয়। যদিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় তখন এই আলোচনা ছিল অনেকটা ক্ষীণ। গত একবছর ধরে ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, অলি আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ড. রেজা কিবরিয়া, নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন রাজনীতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ‘জাতীয় সরকার’ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছেন।

বিএনপি সূত্রগুলো বলছে,  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আসন্ন মতবিনিময় শুরুর প্রাক্কালে দলীয়ভাবেই ‘জাতীয় সরকার’ ইস্যুতে সংকটে পড়েছে বিএনপি। বিশেষত বিএনপি যেখানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে, সেখানে এই প্রক্রিয়ায় আগ্রহী দলগুলোর অবস্থান সর্বদলীয় ঐক্যমত সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের প্রতি সমর্থন নেই বিএনপির। বিশেষ করে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনও পদ্ধতিতেই ক্ষমতায় আসার বিপক্ষে নীতিগত অবস্থান রয়েছে দলটির।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন নেতার বিভিন্ন মত থাকতেই পারে। বিএনপি মনে করে, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের ভোটাধিকার নেই এবং মানুষের জীবিকার অধিকার নেই। দুটি বিষয়ই প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মতে, “একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে, তাহলে তাদের মনোনীত একটি সরকার আসতে পারে। ফলে মূল বিষয় হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচন একমাত্র নিরপেক্ষ সরকার করতে সক্ষম, জাতীয় সরকার নয়। জাতীয় সরকার তো নিরপেক্ষ হবে না। কারণ যারা এই প্রক্রিয়ার কথা বলছে, তারা তো আওয়ামী লীগের লোকজনের থাকার কথাও বলছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দিনে গুণগত পরিবর্তন আনার পক্ষে আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে চায় বিএনপি। সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইতোমধ্যে জোটশরিকদের বাইরে বাম ও ডানপন্থী দল মিলিয়ে অন্তত ১০-১২ জন শীর্ষনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। প্রত্যেকের সঙ্গে আলাপেই দাবি-দাওয়া বিনিময় করছে বিএনপি। এসব দাবির মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয় উঠে আসছে।

বিএনপি ও বিভিন্ন দলের শীর্ষনেতারা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাচ্ছে। এর বাইরে গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মৌলিক ভারসাম্য রক্ষা, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদে দুই কক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য– আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি সাফল্য এলে সরকার গঠনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশেষত, দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে দলীয় ভাবমূর্তি আরও উন্নত করতে সর্বদলীয় ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের পক্ষে বিএনপি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব বিষয় প্রস্তাব আকারে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক দলের প্রধান।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের মন্তব্য, ‘আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও যে আগামী দিনে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হবে না, সেই নিশ্চয়তা চায় রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো। এসব গুণগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বের প্রতি আস্থা তৈরিতে সহায়ক হবে।’

বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে কাজ করছেন, এমন একটি দলের প্রধান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর সংসদীয় গণতন্ত্রের পদ্ধতি তো সবার জানা। যারা জিতবে, তারাই সরকার গঠন করবে। এখন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পর বিএনপি জিতে আসে, তাহলে তো তারাই সরকার করবে। নির্বাচনের পর সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবে বলে তো তারা প্রলোভন দেখাচ্ছে, বদান্যতা দেখাচ্ছে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ যেসব অল্পসংখ্যক লোক জাতিকে বিভাজিত করেছে, যারা ইতোমধ্যে জাতিকে নির্যাতন করে গুম-খুন অপহরণে লিপ্ত হয়েছে, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার হতে পারে না।’

মাহমুদুর রহমান মান্নার মন্তব্য, “নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের কথা বলা বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তারা হয়তো উদারতা দেখাতে চেয়েছে। এতে করে দলটি উদ্ধুদ্ধ করছে যে– ‘আসো তোমাদের নিয়েই সরকার গঠন করবো।’ কিন্তু যারা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। এখন তারা যদি জাতীয় সরকারের কাঠামো নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করে, তাহলে সেইসব দল এই সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে আগে কিছু বলার কোনও সুযোগ নেই। আগে যারা বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে– তাদের আগ্রহ নিবৃত্ত করার জন্য এমন কথা বলা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন-

পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বিএনপির, লক্ষ্য যৌথ সরকার ব্যবস্থা

জাতীয় সরকার নিয়ে আ.লীগ-বিএনপি একমত না হলে ভয়ানক অমঙ্গল হবে

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চলছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘অল দ্য ওয়েদারস’
চলছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘অল দ্য ওয়েদারস’
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা
সালাউদ্দিনের সমালোচনা আর ঢাকার গরম নিয়ে বাংলাদেশ কোচ যা বললেন
সালাউদ্দিনের সমালোচনা আর ঢাকার গরম নিয়ে বাংলাদেশ কোচ যা বললেন
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ