সদ্য সমাপ্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে দাবি করে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেছেন, তারা একজন এমপির হুমকি সামাল দিতে পারেনি, জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ এমপিকে সামাল দিতে পারবে না। তাই এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনার সচিবালয়ের অর্থ বরাদ্দের ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সুষ্ঠু দেখানো সরকারের পুরানো খেলা উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই নাটক দেখেছি। কিছু দিন আগে দেখলাম, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখলাম মাত্র একজন এমপির হুমকি-ধামকি নির্বাচন কমিশন সহ্য করতে পারেনি। বারবার তাকে অনুরোধ করা হয়েছে, চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাকে এলাকা থেকে সরাতে পারেনি।
তিনি বলেন, ইসির যে নতজানু, মেরুদণ্ড ভাঙা অবস্থা; তাতে খুব পরিষ্কার বোঝা যায় আগামীতে যে জাতীয় নির্বাচন হবে সেটা কোনোভাবেই এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। যে কমিশন একজন এমপিকে সামাল দিতে পারে না, সেই কমিশন কী করে ৩০০ জন সিটিং এমপিকে সামাল দিয়ে নির্বাচন করবে? সেটা বড় প্রশ্ন।’
কুসিক নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার জন্য চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এলাকায় ছিলেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাচন যে মল্ল যুদ্ধ তার একটা বড় প্রমাণ শপথ নেওয়ার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জেলেনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে। ভোট কি যুদ্ধ যে জেলেনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে?’
গোপন কক্ষে ডাকাত ধরাই বড় চ্যালেঞ্জ ইসির এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ডাকাত যে শুধু দলীয় ক্যাডার তাই নয়, এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, প্রশাসন। এদের পরে যেভাবে পুরস্কৃত করা হয়, সেই পুরস্কার দেখে বোঝা যায়, ভবিষ্যতে এই ডাকাতের সংখ্যা বাড়বে। ২০১৮ সালের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদকে নির্বাচনের পরে পুরস্কার হিসাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে। অবসরে যাওয়ার আগে তার বিদেশ সফরের বিষয়টিও উল্লেখ করেন রুমিন ফারহানা। মেয়াদ শেষের পরে নির্বাচন কমিশনাররা সত্য বলা শুরু করে বলে জানান তিনি।
বিগত ১০ বছর ধরে নির্বাচন নিয়ে মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে জানিয়ে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, এখানে নির্বাচন কমিশনের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, এটি জনপ্রশাসন ও জননিরাপত্তা বিভাগে অপর্ণ করা যায়। ইসি নির্বাচন করে না, স্থানীয় প্রশাসন, জননিরপত্তা ও জনপ্রশাসন বিভাগ নির্বাচন করে।
তিন বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই নির্বাচন সঠিক করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনও রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না। ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রথানমন্ত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আজকে বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? পারবেন না।
হারুন বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে আনবেন, সেটি আপনাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের জন্য অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে।
সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এমন উত্তর দিয়েন না যাতে সবাই হাসে। কারণ মন্ত্রীরা উত্তর দিচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে নাকি দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো। এটা তথ্যমন্ত্রী বলেছেন। আবার সাবেক সিইসি বলেছেন, আমেরিকার চেয়েও বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ভালো। এ ধরনের অদ্ভুত উত্তর দিয়েন না। এমন উত্তর দেন যাতে আগামী নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেন। নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা যেন থাকে।