বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে— ভারত স্বেচ্ছায় জেনেশুনে বাংলাদেশকে নদীর পানি থেকে বঞ্চিত করছে। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক নদী থেকে ভারত পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ নিজেদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ও জেনেশুনে বাংলাদেশকে নদীর পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে।
শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে সেতু ও শিল্প-কারখানা করা হচ্ছে। অন্য কোনও দেশকে খুশি করার জন্য এসব করছি। এতে নদীর বিশাল ক্ষতি করছি।’
ভারত প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, তারা তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করছে।
‘দেশের জনগণের স্বার্থে নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের আলোচনায় মাথা উঁচু করে দর-কষাকষি করা উচিত’ বলেও উল্লেখ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবে দেশের নদীগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যারা নদী দখল-দূষণ করছে, তারা সরকারঘনিষ্ঠ।’
‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক এই সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি প্রত্যাহার করায় নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বাঁচলো কী মরলো, সেটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। বছরে চার বার যৌথ নদী কমিশনের সভা হওয়ার কথা, কিন্তু বছরের পর বছর কোনও সভা হয় না। সরকারকে মেরুদণ্ড সোজা করতে হবে। পানির ন্যায্য হিস্যা গ্যারান্টি করে আদায় করতে হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত মওদুদ আহমেদের স্ত্রী হাসনা জসীমউদ্দীন মওদুদ বলেন, ‘ভারত তিস্তা নদী থেকে আরও পানি সরাতে দুটি নতুন খাল খনন এবং একটি উপনদীতে দুটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে। এতে বাংলাদেশের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তিস্তা নদীর তলদেশ শুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে। পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের জন্য অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’
গবেষণা ও পরামর্শ সেবা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর নদীমাতৃক রয়েছে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন। ডাইয়িং কারখানার কারণে মেঘনা ও বুড়িগঙ্গা নদী চরমভাবে দূষিত। সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ সুন্দরবন ধ্বংস হোক— এমন কোনও প্রকল্প নেবে না, কিন্তু এই সরকার অপরিকল্পিত প্রকল্প নিয়েছে।’
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নিচে তাকালে শুধু বালুচর দেখা যায়। ৮ থেকে ১০ বছর পরে নদীতে পানিপ্রবাহ থাকবে কিনা, সেটি প্রশ্ন। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী তেল ও কয়লাবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা এখনও ঘটছে।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন— বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।