X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবারও চিঠি দেবে পরিবার

সালমান তারেক শাকিল
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৪৪আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৪৪

একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দেশের বাইরে নিতে তৎপরতা শুরু করেছেন পরিবারের সদস্যরা। আবারও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করার বিষয়ে পারিবারিক ও দলের শীর্ষ পরিমণ্ডলে আলোচনা শুরু হয়েছে। দল ও পরিবারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও তার মুক্তির দাবিতে আবারও মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, তা সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরশু (গত মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর) শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আমাদের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। আমরা সেই আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি মতামতের জন্য। আর বিদেশে যাওয়ার বিষয়টিতে আদালতের মাধ্যমেই যেতে হবে। কোর্টে যেতে হবে। কোর্ট থেকে আইনসম্মতভাবেই করা হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা এখন যে পর্যায়ে, তাতে তাকে বিদেশেও নেওয়া যাবে না। শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ।’

এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ম্যাডামের চিকিৎসকেরা বলছেন তিনি ট্রাভেল করতে পারবেন। চিকিৎসকেরা বহু দিন ধরেই তা বলে আসছেন। আর বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে পরিবারের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, এরপর সিদ্ধান্ত আসবে।’

খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, বিদেশে পাঠানোর আবেদন আসার পর বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আগানো হবে। আবেদন পেলেই তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলবেন বলে জানায় সূত্র।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষ মুক্তিতে রয়েছেন। বিগত ৯ আগস্ট থেকে তিনি রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি বলে একজন মেডিক্যাল স্টাফ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বেগম জিয়াকে বিগত ২৬ দিন ধরেই চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্তিতে রয়েছেন খালেদা জিয়া। প্রতি ছয় মাস অন্তর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ মার্চ সপ্তমবারের মতো মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর। সরকারের পক্ষ থেকে মূলত দুটি শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। একটি হচ্ছে, ঢাকায় থেকে চিকিৎসা সেবাগ্রহণ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দল থেকে, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এটা বিগত কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছে। নানা ইনিশিয়েটিভ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার তো দেবে না। সরকার ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসা চায় না। তার নাগরিক অধিকারও তারা রক্ষা করতে দেবে না।’

পরিবারের সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণেই পারিবারিকভাবে আবারও সরকারের কাছে বিদেশে পাঠানোর আবেদন করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া শেষ দুটো চিঠিতে তার স্থায়ী জামিনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এবার নতুন চিঠিতেও স্থায়ী জামিনের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সূত্র। 

৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সহোদর শামীম ইস্কান্দারের সই করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বেগম জিয়া'র জীবন রক্ষার্থে ও তার শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাইরে ‘অ্যাডভান্স মেডিক্যাল সেন্টারে’  চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।  এমতাবস্থায়, সকল শর্ত শিথিল পূর্বক তাকে স্হায়ীভাবে মুক্তি এবং বিদেশে গমনের অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর খুব খারাপ। পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও বিদেশে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে শুনেছি।’

খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল স্টাফদের সূত্র জানায়, বিগত কয়েক দিন আগে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়। এ প্রতিবেদন লেখার সময় একজন স্টাফের ভাষ্য—খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা মন্দের ভালো। তার মূল চিকিৎসার জন্য বিদেশেই নিতে হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ। দলের চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান চিকিৎসকদের বরাতে এ তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘দীর্ঘ চার বছর তার যথাযথ কোনও চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে অমানবিক পরিবেশেও তিনি অনেক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিডনি ও চোখের সমস্যা ছাড়াও পুরনো আর্থ্রাইটিস এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী জটিলতায় তার শারীরিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’

দায়িত্বশীলরা জানাচ্ছেন, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে ২০২১ সালে একটি উদ্যোগ কার্যকর অবস্থায় পৌঁছেছিল। ওই বছরের মে মাসের শুরুতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠির কোনও অগ্রগতি না হওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নির্ধারণের পাশাপাশি গুছিয়ে আনা হয়েছিল পারিবারিক অন্যান্য প্রস্তুতিও।

 খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো) খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে ২০২১ সালের ৬ মে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘আমি এখনও বলছি, আন্তরিক হই আর যা-ই হই প্রথম হচ্ছে—মানবিক কারণে দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই আন্তরিক। কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে তো আমরা যেতে পারি না। আইন বিবেচনা করে করতে হবে।’ পরে ওই উদ্যোগটি আর সামনে এগোয়নি।

২০২১ সালে তৎকালীন বিলুপ্ত বিএনপি-জোটের শরিক সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে কয়েকটি দলের নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। বিএনপির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, সেই চিঠিতেও বিএনপির চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার আহ্বান করা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০২১ সালে পাঁচটি দলের সমন্বয়ে আমার নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। আমরা আবারও চিন্তা করছি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ নিতে কয়েকটি দল মিলে আবারও আবেদন করবো।’

বর্তমানে যুগপতে যুক্ত ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিকভাবে যোগাযোগ নাই। সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ নাই। শুধু জনগণের পক্ষ থেকে দেশনেত্রীর জন্য আমরা নিজেরা আবার আবেদন করবো। ইতোমধ্যে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। আরও করবো। এরপর আশা করি এই সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আবেদন করতে পারবো।’

কর্মসূচি দেবে বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও তার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকায় ইস্যুগত সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থাকায় কোন প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি দেওয়া হবে, সে চিন্তা চলছে।

দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের ভাষ্য—কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব ভাবছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচির বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে, আমি এখনই কিছু বলতে পারবো না।’

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
সর্বশেষ খবর
দোরিয়েলতনের জোড়ায় মোহামেডানকে হারিয়ে কিংসের পঞ্চম শিরোপা
দোরিয়েলতনের জোড়ায় মোহামেডানকে হারিয়ে কিংসের পঞ্চম শিরোপা
জবিতে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে তোড়জোড়
কমানো হতে পারে ফিডার পদের সময়কালজবিতে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে তোড়জোড়
বিএনপির আন্দোলনের হেতু কী, প্রশ্ন হানিফের
বিএনপির আন্দোলনের হেতু কী, প্রশ্ন হানিফের
সুন্দরবনে আগুন: আরও ৭ কার্যদিবস সময় নিলো তদন্ত কমিটি
সুন্দরবনে আগুন: আরও ৭ কার্যদিবস সময় নিলো তদন্ত কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
মান ভাঙলো মিমির, এলো ‘তুফান’র দ্বৈত ঝলক
মান ভাঙলো মিমির, এলো ‘তুফান’র দ্বৈত ঝলক
নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করলো আমিরাত
নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করলো আমিরাত
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও