রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বিএনপির ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানবিরোধী গ্রাফিতি। এসব গ্রাফিতির কোনোটাতে দেখা যায়—তারেক রহমান বাংলাদেশের মানচিত্রকে পাকিস্তানের মানচিত্র আকৃতির ডাইনোসরের মুখে তুলে দিচ্ছেন। আবার কোনোটাতে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশের মানচিত্রকে শিকলে বেঁধে পেছনের দিকে টানছেন এবং বলছেন, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ, পিছিয়ে দাও বাংলাদেশ।’
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে এগুলো দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফলে কৌতূহল দেখা দিয়েছে রাজধানীবাসীর মনে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষকরা বলছেন, এটা খুবই স্পষ্ট যে কারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে আজও যুক্ত এবং কারা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য রেখেছে যে পাকিস্তানের কাছে ফিরে যেতে চায়। আর এই গ্রাফিতি যারা করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এবং তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, সেটা টের পাওয়া যায়। আমাদের শক্তি হলো—যখনই বাংলাদেশের ওপর কোনও আঘাত এসেছে, তখনই আমাদের তরুণ প্রজন্ম তা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে। এবারও পারবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্টসহ বেশ কিছু এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি— ‘বিবেক কোথায়, খাম্বা বিবেক নিয়ে গেছে।’ গ্রাফিতিগুলো দেখলে বোঝা যায়, বিএনপির স্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বিরোধীরাই এটা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিক দাঁড়িয়ে গ্রাফিতির ছবি তুলছিলেন। কী মনে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর একটা গ্রাফিতি দেখলাম। বুঝতে পারলাম বাংলাদেশকে যারা পেছনে নিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে এই গ্রাফিতি। আমি প্রথমে ফেসবুকে দেখেছি। তারপর দুই বন্ধু রিকশা নিয়ে বের হয়েছি খুঁজতে।’
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষার্থী গ্রাফিতির টেক্সট নিয়ে কথা বলছিলেন। কারা এটা করলো জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা তো জানি না। তবে এই গ্রাফিতি নিয়ে আজকে ক্যাম্পাসে কয়েক দফা টেনশন লক্ষ করা গেছে। এতে মনে হয়েছে গ্রাফিতি যাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বলতে তারা কী বুঝে জিজ্ঞাসা করলে বুয়েটের এই দুই শিক্ষার্থী বলেন, এটা তো পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া আর কী মানে হবে।’
কী কী গ্রাফিতি খুঁজে পেলেন প্রশ্নে তারা বলেন, বাংলাদেশকে পেছনের দিকে টানছেন বিএনপি নেতারা—‘জোরসে বলো হেইয়ো, টেক ব্যাক বাংলাদেশ, পিছিয়ে দাও বাংলাদেশ।’ ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আরও অনেক গ্রাফিতি। যার একটিতে দেখা যায়, পাকিস্তানের পতাকা আকৃতির একটি ডাইনোসরকে বাংলাদেশের মানচিত্র খেতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারেক রহমানের আদলের এক ব্যক্তি। আর লেখা আছে টেক ব্যাক বাংলাদেশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তারেক রহমান বাংলাদেশকে শিকল দিয়ে টেনে পেছনে নিতে চেষ্টা করছেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগান দিয়ে।
এই টেক ব্যাক বাংলাদেশ বলার সাহস কীভাবে হয় উল্লেখ করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের রাজনীতিক টেক ব্যাক বাংলাদেশ স্লোগান দিতে পারে, এটা আমার কল্পনারও বাইরে। একমাত্র জার্মানির নাৎসি পার্টি ছাড়া বিশ্বের কোনও রাজনৈতিক দল, তার দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেনি। তারা স্লোগান দিয়েছিল টেক ব্যাক জার্মানি।’’
তিনি বলেন, ‘‘তারেক রহমানের পাকিস্তান প্রেম নতুন কিছু না। কয়দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, ‘পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম।’ ফলে তারা চাইবেন বাংলাদেশকে পাকিস্তানভুক্ত করতে। তার বিপরীতে যারা প্রতিরোধমূলক গ্রাফিতি এঁকেছে, তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই বিষয়টি নানাভাবে তুলে ধরা উচিত। টেক ব্যাক বাংলাদেশ যে ঘটতে দেওয়া যাবে না, তরুণদের এই সচেতনতার জন্য তাদের অভিনন্দন।’’
গ্রাফিতির বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার চোখে পড়েনি। তবে তারেক রহমান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বলেছেন—একাত্তরে গণতন্ত্রের জন্য যে যুদ্ধ করা হয়েছিল, যে বাংলাদেশ মানবাধিকারের জন্য যুদ্ধ করেছে, যে বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে চেয়ে। এটাকে অপব্যাখ্যা করে রাজনীতি করলে বিএনপির কিছু যায় আসে না।’
