গত ৯ আগস্ট থেকে টানা হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই দিন কাটছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। শারীরিক পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
হাসপাতাল ও মেডিক্যাল স্টাফরা বলছেন, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দিনে-রাতে বেশ কয়েকবার উত্থান-পতন হয়। কখনও খারাপ পর্যায়ে যায়, কখনও আবার স্থিতিশীল থাকে। সব মিলিয়ে বাসায় নেওয়ার মতো ন্যুনতম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। উপরন্তু চলতি মাসের শুরুতে বেগম জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে পারিবারিকভাবে যে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, দিনে-দিনে তাও কমে এসেছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন, শুরুতে কেবল অসুস্থ রোগীর চিকিৎসাজনিত বিষয় হিসেবে থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বেগম জিয়ার বিষয়টিতে ‘রাজনীতি’ ঢুকে গেছে। সম্প্রতি সরকারপ্রধানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আরও স্পষ্টতা পেয়েছে।
তারা বলছেন, সরকার কোনোভাবেই খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে দেবে না।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মানবিক আবেদন করতে হলে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত চাইতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক কথার কথা। বেগম জিয়াকে আদতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেবে না সরকার।’
গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল জানান, বেগম জিয়া বিদেশে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেছিলেন, বেগম জিয়া বিমানযাত্রা করতে সক্ষম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টিতে আদালতের মাধ্যমেই যেতে হবে। আদালতের মাধ্যমেই আইনসম্মতভাবে (অনুমোদন) করাতে হবে।’
দলের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, ‘ম্যাডামের বিষয়টি সমাধান হচ্ছে না। স্বাভাবিক সমাধানের রাস্তা আর নাই।’
বিএনপির মিডিয়া সেল ও চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান শনিবার চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় আনার মতো অবস্থা এখনও হয়নি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
শনিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল স্টাফসূত্র জানায়, আজ সারা দিন কেবিনে রেখেই বেগম জিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে কয়েক দফায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।