X
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শনির আছর ২০০৯ সাল থেকে

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাপি ঋণ ১০ বছরে তিন গুণ বেড়েছে: বিএনপি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:০৩আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:০৩

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। খেলাপি ঋণ গত ১০ বছরে বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, তা ২০২৩ সালের মার্চে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত।’

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘আওয়ামী সরকারের দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও লাগামহীন দুর্নীতি: অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদের পাহাড়’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। যার পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে।’

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় ধরা হয়। এর বেশি হলেই তা ঝুঁকি। বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ ঝুঁকির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। প্রলেপ দিয়ে নিয়মিত রাখা হয়েছে। এদিকে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ, অবলোপন করা ঋণ, অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল অঙ্কের ঋণ, বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করাসহ আরও অনেক ঋণ রয়েছে যেগুলো খেলাপির যোগ্য কিন্তু খেলাপি করা হচ্ছে না, এসব ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বর্তমানে খেলাপি ঋণ যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে'। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাপি ঋণ ১০ বছরে তিন গুণ বেড়েছে: বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ২% অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। এমনকি আইন সংশোধন করে সরকারঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সঠিক পর্যালোচনা ও জাস্টিফিকেশন না থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে লোন রাইট অফ করা হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাঘেঁষা লোকদের রক্ষা করার জন্য।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিন্মমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিটেন্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতোটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

‘অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কি ভয়ংকর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে।’ বলেন ফখরুল।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন— কেবলমাত্র দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন নামে একটি বিশেষ গ্রুপ তথা ইচ্ছাকৃত লোন ডিফল্টারদের হাতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জনতা ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছে।

‘সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। একটি শিল্প গ্রুপ নামে-নামে অস্তিত্বহীন ভুয়া কোম্পানির নামে কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৩০,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যোগ্য। এই গ্রুপটি ন্যূনতম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।’ উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব ‘২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর, বেসিক ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পি কে হালদার জালিয়াতি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৬২০ কোটি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১ হাজার ২০০ কোটি, এনন টেক্সটাইল ৫ হাজার ৫০৪ কোটি, ক্রিসেন্ট গ্রুপে ২ হাজার ৭৬০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ইউনিপেটু কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, এমটিএফই কেলেঙ্কারি, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএসএল) কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১০ কোটি টাকা চুরি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’গুলো উল্লেখ করে বিস্তারিত উল্লেখ করেন।

/এসটিএস/এমএস/
সম্পর্কিত
কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিলেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
সরকারের ভেতরে-বাইরে অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে: তারেক রহমান
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাউদ্দিনতিন উপদেষ্টাকে বিদায় করুন, আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য যমুনামুখী লংমার্চ করুক জনগণ
সর্বশেষ খবর
বিইউবিটিতে জাতীয় এআই অলিম্পিয়াড সম্পন্ন
বিইউবিটিতে জাতীয় এআই অলিম্পিয়াড সম্পন্ন
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা পরিয়ে যুবলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ
মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা পরিয়ে যুবলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ
আ.লীগ নেতাসহ শতাধিক ব্যবসায়ীর এনসিপিতে যোগদান
আ.লীগ নেতাসহ শতাধিক ব্যবসায়ীর এনসিপিতে যোগদান
সর্বাধিক পঠিত
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত