সরকার পদত্যাগের একদফার সমাধান ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনেই আসবে বলে আশাবাদী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আজকে আমরা সবাই—দেশের সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে হয়েছি এবং একটা দফার মধ্যে এসেছি— এই রেজিমের (সরকার) পদত্যাগ। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা স্বচ্ছ অবাধ নির্বাচন চাই বলে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই।’
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ও ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিন বিকাল সোয়া চারটার দিকে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেক শোরে এই সেমিনার শুরু হয়।
দলের বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় কি-নোট পাঠ করেন কমিটির টিম লিডার ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা আজকে যেভাবে ঐক্য হয়েছি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের সেই দাবি অর্জন করতে পারবো। আমরা বিশ্বাস করি, যেটা সবসময় বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে, চেষ্টার মধ্য দিয়ে—সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জয়ী হয়েছে। আমরা এবারও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।’
মূল প্রবন্ধে আমির খসরু উল্লেখ করেন, আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাকশন প্ল্যান হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপি বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিকের মধ্যে এবং বাইরে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে শামিল হওয়া এসব মূল লক্ষ্যগুলোর অন্যতম। ইন্দো-প্যাসিফিকের সঙ্গে বৃহত্তর একীভূতকরণের জন্য আমাদের মূল কৌশল এবং কর্মগুচ্ছ হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ। ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য একটি গণতান্ত্রিক এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ সমর্থন করা। ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য একটি উদার, উন্মুক্ত, মুক্তবাজারের ভবিষ্যৎ, একটি সবুজ জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক উল্লেখযোগ্য।
খসরু বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক, মুক্ত, উদার এবং প্রগতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এমন একটি স্থান হওয়া উচিত, যেখানে সরকারগুলো আন্তর্জাতিক আইন এবং জনগণের ম্যান্ডেট অনুসারে তাদের সার্বভৌম পছন্দগুলো বজায় রাখতে পারে।’
তিনি যোগ করেন, ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্য রুটগুলো যাতে উন্মুক্ত এবং প্রবেশযোগ্য থাকে, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে। আমরা দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরসহ সামুদ্রিক ডোমেনে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি সমর্থন করবো।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-কৌশলগত অবস্থানের দাবি অনুযায়ী, আমরা এই অঞ্চলজুড়ে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় অংশীদারদের গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করতে চাই। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, কোরিয়া রিপাবলিক এবং এ অঞ্চলের আরও অন্যান্য দেশের সক্রিয় সহায়তায় এটি অর্জন করতে চাই।’
‘দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, জাপান, ভারত, কোরিয়া রিপাবলিক, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক সহযোগিতা জোরদার করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, বলে উল্লেখ করেন খসরু। তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকের বাণিজ্য পথগুলোকে উন্মুক্ত এবং নিরাপদ রাখতে এই দেশগুলো একসঙ্গে গভীর নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারে।’
আমির খসরু মাহমুদ আরও বলেন, ‘বেসামরিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ব্যবহারের জন্য টেকসই প্রযুক্তি অর্জনের জন্য উন্নত পশ্চিমা অর্থনীতির সক্রিয় সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপক প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রোহিঙ্গা সংকটের একটি মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই সমাধান শীর্ষক শিরোনামে আমির খসরু বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকটের একটি ন্যায্য, গ্রহণযোগ্য এবং মর্যাদাপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক উভয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াবো। জাতিসংঘের উচিত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের তত্ত্বাবধান করা, যাতে প্রত্যাবর্তনকারী শরণার্থীদের বিষয়ে জাতিসংঘের চুক্তি, প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনে চলা যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত বার্মা আইনকে স্বাগত জানাই এবং এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করি, যা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক কর্মীদের এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াইরত প্রতিরোধ শক্তিকে সমর্থন করে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, তুর্কি, ওআইসি, ইইউ, জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে আমাদের প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সমস্যা মোকাবিলার জন্য এই আইনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেই।’
সেমিনারে বিএনপির শাহজাহান ওমর, তাবিথ আউয়াল, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহেদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ) হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির শামসুল আলম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুনুর রশীদ, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণঅধিকার পরিষদ নুরুল হক নূর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান ও খন্দকার লুতফুর রহমান, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।