বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে থাকলেই আওয়ামী লীগ সরকারের শুরু হয় গুম ও ক্রসফায়ারের উৎসবের ঋতু। তারা শুরু করে আগুন নিয়ে খেলা।
সোমবার (৬ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানকে রবিবার (৫ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মহাখালী ওয়ারলেস গেট থেকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেলেও ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে, এখনও তার কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের সদস্য সচিব মাসুদ রানার খোঁজ নেই গত কয়েকদিন ধরে।’
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশ এদের তুলে নিয়ে যায়, কিন্তু বারবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা অস্বীকার করছে। এটা এক ভয়ানক অস্বীকৃতি পুলিশের। এভাবে অসংখ্য ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপি, সাবেক এমপি, জনপ্রতিনিধিদের গুম করা হয়েছে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে।’
দেশের সর্বত্র আতঙ্ক ও উদ্বিগ্নতা বিরাজমান
বিএনপি ঘোষিত ও সমমনা দলগুলো সমর্থিত অবরোধ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ আক্রমনে দেশের সর্বত্র আতঙ্ক ও ভয়ের যুদ্ধকালীন উদ্বিগ্নতা বিরাজমান বলে উল্লেখ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
তিনি বলেন, ‘জনসমাজে এক ভয়াল আতঙ্ক যেন ছায়াঘন নীরব নিস্তব্ধতায় ঝিমিয়ে থাকা পরিবেশ বিরাজ করছে। গ্রেফতার ও বাড়ি-ঘরে হামলা চলছে নিরন্তরভাবে। বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেফতারের আতঙ্ক, নিরুদ্দেশ হওয়া সন্তানের জন্য মা-বাবার আহাজারী, হামলা ভাঙচুর হওয়ার আক্রমনের ভয় ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় উৎপীড়নের নানামুখী পৈশাচিক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।’
বিএনপির বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের কাহিনি সাজানো
শুধুমাত্র নাগরিক স্বাধীনতাসহ গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কালিমা লেপন করার জন্য আবারও বিএনপির বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের কাহিনি সাজানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রুহুল কবির রিজভীর।
তিনি বলেন, ‘মিডিয়া তাদের হাতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হাতে, আদালত তাদের কবজায়। সে কারণে সহজেই বিএনপির কোনও নেতার নামে পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা অত্যন্ত সহজ। কারণ গ্রেফতারের ইন্সট্রুমেন্ট সরকারের হাতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাসে আগুন দিয়ে দায় চাপায় গণতন্ত্রের স্বপক্ষে বিপ্লবী কর্মীদের নামে। যার অসংখ্য ভুরি ভুরি প্রমাণ এখন মানুষের হাতে হাতে। প্রকৃত সন্ত্রাসীদেরকে আড়াল করে দলের মহাসচিবসহ জাতীয় নেতাদের ওপরে দায় চাপিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। অসংখ্য নেতাকর্মীকে ঘর ছাড়া করে, তারা পরিকল্পিত নাশকতা করে বিএনপি’র বিরুদ্ধে একতরফা দায় চাপাচ্ছে।’
কারাগারগুলোতে চলছে মানবিক বিপর্যয়
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জ কারাগারে যাদের আটক রাখা হয়েছে, সেসব নেতাকর্মীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারছে না। কারাগারের ভেতর প্রতিটি ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের ঠেসে রাখা হয়েছে। যে ওয়ার্ডে ১০-১৫ জনের বেশি বন্দিকে রাখা যায় না, সেখানে একটি ওয়ার্ডে ৪০-৫০ জন বন্দিকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনে-রাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাইরে বের হতে দেয় না।’
বর্জনই যথেষ্ট নয়
জনগণ তাদের একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারার সুযোগ আর দেবে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন ওমর সম্প্রতি একটি লেখায় বলেছিলেন ‘নির্বাচন বর্জন যথেষ্ট নয়, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
রিজভী বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদ হিসেবে যদি জনগণের পালস্ বুজতে পারতেন, তাহলে বিরোধী দলের ওপর দমনের মাত্রা এত তীব্র করতে পারতেন না। একনায়ক ফ্যাসিস্ট শাসকরা অন্ধত্ব আর মোহে হারিয়ে ফেলেন তার দৃষ্টিপথ।’