X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

কোর্টও এখন ‘গায়েবি’ রায় দিচ্ছে: কায়সার কামাল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৯আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৩

পুলিশ এতদিন ‘গায়েবি’ মামলা করতো, এখন দুঃখজনকভাবে নিম্ন আদালতের কিছু কিছু কোর্ট ‘গায়েবি’ রায় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন-বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

কায়সার কামাল বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বে কোনও নজির নেই—মৃত ব্যক্তির নামে রায় দিয়েছে। এমন নজির নেই যে গুম হওয়া ব্যক্তির নামে রায় হয়েছে। দুঃখজনকভাবে এই স্বাধীন বাংলাদেশের নিম্ন আদালত সেই নজির স্থাপন করছে। যা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে গণ্য হবে। রায়গুলোর রেজাল্ট দেশের মানুষ বিবেচনা করবে।’

তিনি বলেন, ‘উনারা তড়িঘড়ি করে মনে হচ্ছে কারও নির্দেশে এই রায়গুলো কার্যকর করছেন। আইনি সহায়তা অব্যাহত আছে। কিন্তু বিচারের বাণী আজ নিভৃতে কাঁদে। আমাদের আইনজীবীরা পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। একতরফা রায়গুলো হচ্ছে—রাজনৈতিক বিবেচনায়। পুলিশ প্রশাসন এতদিন গায়েবি মামলা করতো, এখন দুঃখজনকভাবে নিম্ন আদালতের কিছু কিছু কোর্ট মনে হচ্ছে গায়েবি রায় দিচ্ছে।’

গত দুই মাসে ঢাকার আদালতে ২১টি রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির ২৭১ জন নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর  গত এক বছরে ২৯টি মামলায় ৩০৪ জন নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপির নেতা আবু তাহের দাইয়া এবং ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া আমিনুল ইসলাম জাকিরকে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কায়সার কামাল বলেন, ‘গত ২০ নভেম্বর ঢাকার দুটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চারটি মামলায় চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবু তাহের, ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া আমিনুল ইসলাম জাকির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি  সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানসহ ৫৪ নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড প্রদান করেছে।’

এছাড়া উল্লেখযোগ্য যেসব নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া করা হয়েছে, তারা হলেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবীব), ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলিম (নকি), বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। এমনকি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নূরে আলম সিদ্দিকী (সোহাগ)-কেও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক একটি মামলায় গত ১৫ নভেম্বর দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আইনজীবী হিসেবে সাজা প্রদানকৃত প্রতিটি মামলা পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি—সাজাপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অপরাধের সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনও ফৌজদারি অপরাধ প্রমাণ করতে হয় সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে। বেশিরভাগ মামলায় সাক্ষী হিসেবে শুধু পুলিশ সদস্যকে হাজির করিয়ে সাজা প্রদান করা হয়েছে। কোনও নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত বিচারিক স্তরগুলোও অনুসরণ করা হয়নি। ফলে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তড়িঘড়ি করে বিএনপির নেতাদের সাজা প্রদান করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের একের পর এক সাজা প্রদানের মাধ্যমে বিচারিক আদালতের প্রতি সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ আমরা বারবার করে আসছিলাম, তা-ই প্রমাণ হলো। সংবিধানের দৃষ্টিতে ‘সব নাগরিক সমান'—এ কথা আর বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বিচারের নামে বিরোধী দল নিধনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে এ রায়গুলো ইতিহাসে স্থান করে নিলো। আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ এ রায়গুলো।

তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আমরা লজ্জাবোধ করছি। এ রায়গুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে যে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, তার সত্যতা প্রমাণিত হলো।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল, ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম মহাসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাহাবুব ও ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমানসহ শতাধিক আইনজীবী।

 

/বিআই/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া একটি লেমুর উদ্ধার, আরেকজন গ্রেফতার
গণতন্ত্রের কোনও বিকল্প নাই: মির্জা ফখরুল
সংস্কার করতে আর কত সময় লাগবে আপনাদের, প্রশ্ন রিজভীর
সর্বশেষ খবর
দিনাজপুরে ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের দেওয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ
দিনাজপুরে ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের দেওয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন উৎসর্গ করা ৭ নারী কারা
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন উৎসর্গ করা ৭ নারী কারা
আবেশ খানের বোলিংয়ে শেষ ওভারে হারলো রাজস্থান
আবেশ খানের বোলিংয়ে শেষ ওভারে হারলো রাজস্থান
ক্ষুব্ধ সমুদ্রকে শান্ত করতে ইন্দোনেশীয় নারীর বৃক্ষরোপণ
ক্ষুব্ধ সমুদ্রকে শান্ত করতে ইন্দোনেশীয় নারীর বৃক্ষরোপণ
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৩ ভুল
রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৩ ভুল