X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাত মার্চে রেসকোর্সে তিন তরুণ

সালমান তারেক শাকিল
০৭ মার্চ ২০২৪, ১০:০০আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৫

৭ মার্চ, ১৯৭১। দুপুরের মধ্যেই জনসমাগমে টইটুম্বুর ময়দান। রাজধানীর রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ভাষণের দিন। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌলিক পথ-নির্দেশনা আসে যে ভাষণ থেকে। ঐতিহাসিক এই দিবসে সেখানে ছিলেন তিন তরুণ— যারা এখন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রেসকোর্সে উপস্থিত সেই তিন তরুণ হচ্ছেন— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলছেন, ‘তাদের তিন জনের মুখ থেকেই শুনেছেন, তারা ৭ মার্চ রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শুনেছেন, সেখানে ছিলেন।’

৭ মার্চ নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রতি বছরই সমালোচনামুখর হন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, ‘জনগণ কোনও নির্দেশনা ছাড়াই ময়দান ত্যাগ করেছে’— এমন প্রভৃতি ব্যাখ্যা দেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজের লেখায় জানান, `১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।’

‘৭ মার্চ দুপুরে জনসভা। মানুষে জনসভাস্থল কানায় কানায় ভর্তি’ বলছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্সে উপস্থিত থাকা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার ভাষ্য, ‘সবার আশা আজ স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে। শেখ মুজিবুর সাহেব বক্তব্য শুরু করলেন। ওনার প্রতিটা বাক্যে জনগণ উত্তেজিত— এই বুঝি স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে। কিন্তু ভাষণে যে স্বাধীনতার ঘোষণাটা, সেটি সেদিন জনগণ পায়নি।’

বুধবার (৬ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমার জীবনে যত বক্তৃতা শুনেছি, শেখ সাহেবের ৭ মার্চের বক্তব্যটি সেরা। কিন্তু এটি স্বাধীনতার বক্তব্য নয়। আমি স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে ছোট করি না। কিন্তু সত্য কী।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য যোগ করেন, ‘৭ মার্চের পরদিন ৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে প্রেসনোট দেওয়া হলো। সেই প্রেসনোটে তাজউদ্দিন সাহেব স্বাক্ষর করলেন। সেখানে বলা হলো— বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ক্ষমতায় আসার জন্য এই ভাষণ (৭ মার্চ ভাষণ) দেওয়া হয়েছে। তাহলে সেটা যে স্বাধীনতার ঘোষণা না, আওয়ামী লীগের সেই প্রেসনোটো বোঝা গেলো।’

‘ভাষণের শেষে শেখ সাহেব বললেন, ‘জয় পাকিস্তান।’ বলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ।

প্রসঙ্গক্রমে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

মির্জা আব্বাসকে উদ্ধৃত করে বিএনপির মিডিয়া কর্মকর্তা শায়রুল কবির বলেন, ‘মির্জা আব্বাস প্রায়শই বলতেন—স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে মানুষের কীই-না প্রত্যাশা ছিল ৭ মার্চে, কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’

যদিও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার নিজের লেখায় জানাচ্ছেন— ‘ওই বছরের ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।’ একইসঙ্গে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘সবুজ সঙ্কেত’ ও ‘নতুন দিগন্তের সূচনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলায় প্রথম প্রকাশিত ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে জিয়াউর রহমান লিখছেন, ‘তারপর এলো ১ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহবানে সারাদেশে শুরু হলো ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন । এর পরদিন দাংগা হলো। বিহারীরা হামলা করেছিল এক শান্তিপূর্ণ মিছিলে।’

একই নিবন্ধে জিয়াউর রহমান উল্লেখ করেন, ‘৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন-সিগন্যাল বলে মনে হলো। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দিলাম। কিন্তু তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে তা জানালাম না। বাঙালি ও পাকিস্তানি সেনাদের মাঝেও উত্তেজনা ক্রমেই চরমে উঠেছিল।’

‘১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-বুদ্ধিজীবীদের আশ্রয় ও পরামর্শস্থল ছিল রাউজানের নূতনচন্দ্রের কু-ণ্ডেশ্বরী কমপ্লেক্স। প্রবীণ রাজনীতিক আবদুল্লাহ আল নোমানের গ্রামের বাড়ির পাশে এই কমপ্লেক্স। তিনি জানান, ‘তৎকালীন অনেক রাজনীতিকেরই যাতায়াত ছিল সেখানে।’

‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান লিখেন, ‘জিয়া অনেক দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তা না হলে তিনি ৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের প্রতিক্রিয়া দিতেন না। ভাষণে জিয়া বলেছিলেন, ‘ভাষণ যখন শুনেছিলাম, তখন বুঝলাম— নতুন দিগন্তে আমরা যাত্রা করছি।’

দলীয়ভাবে বিএনপিও প্রথমবারের মতো ৭ মার্চ পালন করেছে ২০২১ সালে। স্বাধীনতার ‍সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির বছরব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে ওই বছরের ৭ মার্চ ছিল  আলোচনা সভা।

দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ‘বিএন‌পি, স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যো‌গে ২০২১ সালে ‘৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বক্তব্য দেন।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
ইকবাল হাসান টুকুর বাসায় মির্জা ফখরুল ও আব্বাস
আন্দোলনের মুষল বৃষ্টিতে ভেসে যাবে শাসক গোষ্ঠী: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
সর্বশেষ খবর
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, আ.লীগ নেতার ভাগনে কারাগারে
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, আ.লীগ নেতার ভাগনে কারাগারে
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়