X
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫
২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোনও মতামত ছাড়া বাজেট প্রণয়ন করেছে সরকার: বিএনপি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ জুন ২০২৫, ১৭:০৮আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ১৭:৫১

‘রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত ছাড়াই অন্তর্বর্তী সরকার ২০২২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বুধবার (৪ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ অভিযোগ করেন।

এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

আমির খসরু বলেন, ‘বিএনপি সব ক্ষেত্রে এ সরকারকে সহযোগিতা করছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারতো। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতো। তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হতো। দেশের বিভিন্ন কণ্ঠের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারতো এ বাজেট।’

‘কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগানো হয়নি বা  করা হয়নি। বাজেট প্রণয়ন একমুখী, অংশগ্রহণহীন ও গতানুগতিক ধারার হতো না, বরং নতুন চিন্তার প্রতিফলন ঘটতো।’

বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কেমন বাজেট করবে এবং কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেবে—তারও একটি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার (২ জুন) রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।

আমির খসরু বলেন, ‘বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির। বিশাল সুদের হারের সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে।’

‘বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্যম ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও স্কুলগুলোকে করের আওতায় আনা, অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনও কিছু না করা, অপ্রয়োজনীয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ না করাসহ বিভিন্ন খাতে বাজেটের প্রস্তাবনার সমালোচনা করেন আমির খসরু।

বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ারও সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার।’

তিনি বলেন, এটি ‘কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে। আয়কর স্লাবে কর হারের পরিবর্তন বেশির ভাগ করদাতাদের ওপর আরও অভিঘাত ফেলবে। কর ফাঁকি ও জালিয়াতি রোধ এবং কর জাল সম্প্রসারণ না করে ভ্যাটবৃদ্ধির মাধ্যমে বরাবরের মতো করের বোঝা সাধারণ জনগণের কাঁধে চাপানো হয়েছে। পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জীবনযাত্রার মান কমছে।’

আমির খসরু বলেন,‘‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ‘ডাবল ডিজিট’। তা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেতো। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে।”

‘বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ নারী। মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে থাকায় প্রকৃত আয় কমেছে। দারিদ্র্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা ব্যয়ের ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হওয়ায় আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক প্রায় সব খাতেই কর্মসংস্থান কমেছে। ফলে সমাজে ভাঙন ধরেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেটা এবারের বাজেটে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ—যা আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি।’

‘খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। অপর্যাপ্ত, ত্রুটিপূর্ণ, দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ অপর্যাপ্ত থেকে যাচ্ছে। আজ অবধি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলো অধিকারভিত্তিক হলো না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ জোসেন মাহবুব শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।

/এসটিএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঈদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন নিহত
খালেদা জিয়া ভালো আছেন, দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন: মির্জা ফখরুল
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জনগণের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে: সাইফুল হক
সর্বশেষ খবর
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পথে অটোরিকশাসহ নদীতে ডুবে শাশুড়ি-পুত্রবধূ নিহত
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পথে অটোরিকশাসহ নদীতে ডুবে শাশুড়ি-পুত্রবধূ নিহত
ঈদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন নিহত
ঈদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন নিহত
ঈদের আনন্দ নেই রায়পুরের চার শতাধিক পরিবারে
ঈদের আনন্দ নেই রায়পুরের চার শতাধিক পরিবারে
টিভিতে আজকের খেলা (৮ জুন, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৮ জুন, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
অবশেষে জুলাইয়ে চালু হচ্ছে ভূমি মালিকানা সনদ
অবশেষে জুলাইয়ে চালু হচ্ছে ভূমি মালিকানা সনদ
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: আকাশটাও কাঁদছিলো…
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: আকাশটাও কাঁদছিলো…
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের সময় ‘এপ্রিল ফুল’ হতে পারে: ১২ দলীয় জোট
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের সময় ‘এপ্রিল ফুল’ হতে পারে: ১২ দলীয় জোট