X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

জিএম কাদেরকে সরালেন এরশাদ, আলোচনায় মাসুদ

সালমান তারেক শাকিল
২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:৪৫আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ০১:২৫

এরশাদ ও জিএম কাদের পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে এরশাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। পরে এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।
এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, জিএম কাদেরের জায়গায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে দেখা যেতে পারে। তিনি এক-এগারো সরকারের সময় প্রভাবশালী সেনাকর্মকর্তা ছিলেন।
শুক্রবার রাত ১১ টার কিছু আগে জিএম কাদের ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত রহস্যজনক। জানি না, গতকালও এরশাদ সাহেবের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, পার্টিটাকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে। আমি তাকে বললাম, এটা নিয়ে আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে।’ এরপর লাইনটি কেটে যায়। 
এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ কাদেরকে কী কারণে সরানো হয়েছে স্যারের সাংগঠনিক নির্দেশেই আছে। ওইটাই কারণ। এছাড়া কোনও কারণ নেই।’
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পাঠানো এরশাদের সাংগঠনিক নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘আমি এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, আমার অবর্তমানে পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমি এটাও আশা করেছিলাম যে, পার্টির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে। কিন্তু পার্টির বর্তমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমার সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করলাম। জিএম কাদের পার্টির পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে এবং পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। পার্টির সিনিয়র নেতারাও তার নেতৃত্বে সংগঠন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এ অবস্থায় সংগঠনের স্বার্থে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব এবং কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবে তিনি পার্টির প্রেসিডিয়াম পদে বহাল থাকবেন। তিনি সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার পদে থাকতে পারবেন কিনা, তা জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি পার্টি তা নির্ধারণ করবে।’

মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এরশাদ জানান, পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’


এদিকে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিএম কাদেরের বিষয়ে তাদের আপত্তি থাকলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আচমকা। এমনকি তাকে সরিয়ে দ্রুত কাউকে বসানো হলে এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা।
জাপার প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য জানান, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে এ পদে দেখা যেতে পারে। মাসুদ উদ্দিন এক-এগারো সরকারের সময় প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।
প্রসঙ্গত, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পরে গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রেসিডিয়ামের সদস্য এবং নিজের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন এরশাদ। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
বিষয়টি ‘কোনও কর্নারের ব্লেসিং না থাকলে হবে না’ বলে মনে করেন জাপার প্রেসিডিয়ামের সদস্য ফখরুল ইমাম। রওশনপন্থী এই নেতা বলেন, ‘জিএম কাদের নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অপারগতা থাকলেও সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি হঠাৎ। আমি জানি না।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে কো-চেয়ারম্যান করা হলে কোনও কর্নারের ব্লেসিং ছাড়া তিনি আসতে পারবেন না। এটা যদি হয়, তাহলে বুঝতে হবে ঘটনা অন্যখানে।’
প্রেসিডিয়ামের আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘কে বসবে, এটা স্যার (এরশাদ) ভালো বলতে পারবেন। কেন সরিয়ে দেওয়া হলো, তাও তিনিই বলতে পারবেন।’
তবে কাজী ফিরোজ রশীদের অভিযোগ আছে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, ‘তিনি (জিএম কাদের) তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আমি তো তাকেও একথা বলেছি। তার মতো কোনও ব্যক্তি অন্য কোনও দলে নেই। কারও সঙ্গে কথা বলবে না, দেখা করবে না, তাহলে রাজনীতি কীভাবে হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের কো-চেয়ারম্যান, সংসদে উপনেতা এত বড়-বড় পদ নিয়ে বসে আছেন, কিন্তু কোনও কাজ নেই। নির্বাচনের আগে-পরে একবারও নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বসেননি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি রংপুরে জাতীয় পার্টির কর্মী সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে রওশনপন্থীরা বাধা হলে রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করেন এরশাদ।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে কাদেরকে বেছে নেন এরশাদ। ধারণা করা হচ্ছিল, দলের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন জিএম কাদের।
পরে চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এরশাদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে ছোট ভাইকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। দলে এ ধরনের সব সিদ্ধান্তই এরশাদ ২০/১/ক ধারা অনুযায়ী সম্পন্ন করেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পর জিএম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তিনি চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা কমানোর কাজ শুরু করবেন।’
পরবর্তী কো-চেয়ারম্যান কে হতে পারেন, এ প্রসঙ্গে সুনীল শুভরায় বলেন, ‘চেয়ারম্যান যেটা করবেন, ওটাই।’
আরও পড়ুন: 

জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান থেকে সরালেন এরশাদ

/এমএএ/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী