জাতীয় পার্টিকে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা এ পরামর্শ দেন। বৈঠকে সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কো-চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী বিএনপিসহ অন্যান্য ছোট ছোট বিরোধী দল নিয়মিত রাজপথনির্ভর কর্মসূচি দিলেও জাতীয় পার্টি পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভাকেন্দ্রিক বক্তব্য দিলেও রাজপথে অনুপস্থিতির কারণে জনগণের সামনে জাতীয় পার্টির আবেদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে মত দেন নেতারা।
আলোচনায় নেতারা উল্লেখ করেছেন, জাতীয় পার্টির রাজপথ নির্ভরতা একেবারেই নেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্যান্য দল এগিয়ে গেলেও জাপা রাজপথে নেই। এ কারণে দলকে শক্তিশালী করতে হলে রাজপথে নামতে হবে। নেতাকর্মীরা চায় দল ঠিক হোক, কর্মসূচিনির্ভর হোক।
জানতে চাইলে জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিভাগসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করার কথা বলেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’
‘রাজনৈতিক সব সিদ্ধান্ত দেবেন জি এম কাদের’
জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে—প্রেসিডিয়াম ও সদস্য সদস্যদের সভায় রাজনৈতিক সব সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এই সভায়।
জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমন একটা সময় আসবে ইমারজেন্সি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে দুই মত
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কী যাবে না, এ নিয়ে দলের মধ্যে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। প্রেসিডিয়াম বৈঠকের পর কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা কেউ নির্বাচনের পক্ষে, আবার কেউ এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে উল্লেখ করেন। তবে একাধিক নেতা জোর দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন হবে। জাপাও নির্বাচনে যাবে।’
দলের একজন কো-চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়েই হবে। জাপা সেটাতে যাবে কী যাবে না, সেটা নেতৃত্ব বলতে পারবে। তবে দলের আরেক অংশ রওশন এরশাদের বিষয়টি সামনে রাখলে জটিলতা সৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত অর্থে নির্বাচন বয়কট করবে কিনা, সেটা এখনই বলার সুযোগ নেই।’
জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগ সরাসরি জি এম কাদেরই করেছেন। বুধবার নিজের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি সরকারের উদ্দেশে অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার পার্টির অভ্যন্তরে গ্রুপিং সৃষ্টি করে আমাদের দুর্বল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় পার্টির একক নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে সরকার।
রওশন এরশাদের প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করেন জি এম কাদের। তার মন্তব্য, ‘আমাদের মাতৃতুল্য রওশন এরশাদকে জিম্মি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। জাতীয় পার্টি কখনও আপসের রাজনীতি করবে না। যারা দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করবে, তাদের স্থান আর জাতীয় পার্টিতে হবে না।’
দলের সিনিয়র একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাপা নির্বাচন করবে শতভাগ নিশ্চিত। তিনশত এলাকায় (আসনে) করার নিয়তই দলের আছে। তবে গণতন্ত্র, উন্নয়নের স্বার্থে জোট-মহাজোট হতে পারে। বা ইসলামি মনোভাবাপন্ন দলগুলোকেও কাছে টেনে নিতে পারে জাপা।’
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অঙ্গীকারার্থে যথাসময়ে নির্বাচন করবেন। সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমাদের নির্বাচনে যেতে হবে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক ও ইসলামি চেতনার শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকালে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি—এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেই দলে। জোট বা মহাজোট নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই আজকে প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের বৈঠকে চেয়ারম্যান সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি যখন প্রয়োজন মনে করবেন, তখনই করবেন। এসব কিছু সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান সাহেব নেবেন।’
জাপার একজন কো-চেয়ারম্যানের ভাষ্য—পার্টি নির্বাচনে যাবে কী যাবে না এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নিতে। বৈঠকে অনেক নেতা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলের কো-চেয়ারম্যানদের মতামত ও তাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য জি এম কাদেরকে মত দিয়েছেন।
খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি।
সভায় আরও ছিলেন—প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আবুল কাশেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আলহাজ সাহিদুর রহমান টেপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ.টি.ইউ. তাজ রহমান, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, আব্দুর রশীদ সরকার, আলহাজ শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লে. জোনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখ্ত, নাজমা আখতার এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও ছিলেন রওশন আরা মান্নান, শেরীফা কাদের এমপি, পনির উদ্দিন আহমেদ, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, নুরুল ইসলাম তালুকদার, পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, আহসান আদেলুর রহমান।