X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওবায়দুল কাদেরকে বিব্রত করলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৮ এপ্রিল ২০১৬, ২১:৪৪আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৬, ১০:১৫

ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বিব্রত করলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোশাররফ হোসেন রাজা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে দলটির আসন্ন ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত দফতর উপ-কমিটির প্রস্তুতি সভায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা  বৈঠকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও চেষ্টা করেন। রাজার এই আচরণে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা বিস্মিত হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে বেয়াদবি না করতে অনুরোধ করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে দফতর উপ-পরিষদ আহ্বায়ক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওবায়দুল কাদের নিজের বক্তব্য শেষ করে উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারও কোনও বক্তব্য আছে?’ জবাবে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন রাজা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। এ সময়  ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে ভাষণ দেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিউত্তরে রাজা বলেন, ‘ভাষণ আমাকে দিতেই হবে। গত ৩৮ বছর কোথাও ভাষণ দিতে পারিনি।’ জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি পরে তোমার সঙ্গে কথা বলব।’ এ সময় রাজা বলেন, ‘না কাদের ভাই, আমার বক্তব্য শুনতে হবে।’ তখন ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তুমিতো কমিটির সদস্য নও।’ এর উত্তরে রাজা বলেন, ‘না ভাই কমিটির বিষয়ে নয়। বিষয় ভদ্রতা, সভ্যতার।’ এই সময় সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথাতো শুনতে হবে।’ রাজা উত্তরে বলেন, ‘আপনার কথা শোনাও পাপ।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেন?’ জবাবে রাজা বলেন, ‘কেন না?’ এই সময় বৈঠকের উপস্থিত একজন সদস্য বলেন, ‘রাজা অসুস্থ।’ এর প্রতিক্রিয়ায়  রাজা বলেন, ‘আমাকে কেউ অসুস্থ বলবেন না।’

আরও পড়তে পারেন: আরও সময় চায় মোবাইলফোন অপারেটরগুলো, সিদ্ধান্ত শনিবার

দুজনের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটু আগে আমি তোমাদের শৃঙ্খলার কথা বলেছি। আর তুমিই শৃঙ্খলা মানছ না।’ উত্তরে রাজা বলেন, ‘আমি নিয়ম-শৃঙ্খলা মানার লোক নই, সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। আর আমাকে এমন পর্যায়ে এনেছেন আপনিই (ওবায়দুল কাদের)।’ এরপর রাজাকে উপ-পরিষদের নেতারা থামিয়ে দেন।

আওয়ামী লীগ একটি পরিবার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে বড় ভাইয়ের কাছে অভিযোগ থাকতে পারে। বড় ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারে, আমি কষ্টে আছি। তুমিতো আমার খবর নাও নাই। এ কথাটা হয়তো অনেক অপ্রকাশিত অভিব্যক্তির মাঝে লুকিয়ে আছে। এটা হয়তো শোনা হয়নি। না শোনা থেকেই ক্ষোভটা আরও বেড়ে গেছে। এটা দলীয় জীবন কিংবা ব্যক্তি জীবনে থেকে হয়ে থাকে।’ 

আলোচনার এই পর্যায়ে সাংবাদিকদের বৈঠক স্থল ত্যাগ করার অনুরোধ জানান ওবায়দুল কাদের। এরপর বেলা বারোটার দিকে, মোশাররফ হোসেন রাজাকে তার বক্তব্য বা অভিযোগ জানাতে বলেন ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে রাজা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় ক্ষোভ হলো ১৯৮৭ সালের ২৩ নভেম্বর আমি গ্রেফতার হই। পরের দিন পত্রিকায় এসেছে (বিশেষ করে ইত্তেফাকে) আমাদের কর্মী রাজা, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ছাত্র, তার লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তিনি মনিরুজ্জামান বাদল। ওই মনিরুজ্জামান বাদলই আমাকে ছাত্র রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মোশাররফ হোসেন রাজা আরও বলেন, ‘এর আগে, মনিরুজ্জামান বাদলকে বাংলার বাণী থেকে ‘‘ওকে কমিশনের’’ চেয়ারম্যান বলেছিলেন,  ‘কয়েকজন সাহসী তরুণ সংগ্রহ করো।’  এরপর সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আমাদের বললেন, ‘আমরা ছাত্রদলের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করব।’ রাজা এই পর্যন্ত বলার পর ওবায়দুল কাদের পাশে বসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘এগুলো এখানে বলার কী আছে?’ উত্তরে রাজা বলেন, ‘অবশ্যই দরকার আছে।’ এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, এসএম কামাল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রাজাকে থামার অনুরোধ করেন। জবাবে রাজা বলেন, ‘কামাল ভাই, আপনারা এতদিন কোথায় ছিলেন? আমি মারা যাচ্ছি। আপনার কোনও খোঁজ-খবর রাখেন না। আমার মৃত্যুর আগে কয়েকটা কথা বলতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগকে যারা কলঙ্কিত করেছেন, তারা তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। অভি গ্রুপকে কেন আপনারা ছাত্রলীগে এনেছেন? তাদের এনেছিলেন, আমাদের তাড়ানোর জন্য? ’

আরও পড়তে পারেন: গণপরিবহনের ভাড়া কমাতে সরকারের নির্দেশনা নেই

ছাত্রলীগের ৯২-৯৩ সেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘তারপর ইকবাল হোসেন অপু এলেন। তিনি এসে বললেন, অভিদের খেদাইতে হবে। এই খেদানো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি হলো। ওই  ঘটনায় মামলা হলো। আসামি করা হলো আমাকে। জেল খাটলাম দুবছর। এরপর ছয়টা মার্ডার কেসে হলো। আমরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে জেল থেকে বের হলাম। আপনারা আমাদের কোনও খবর নেননি। কেউ না। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক আলম ভাইও কোনও খবর নেননি। আমি সামান্য কৃষকের ছেলে। অনেক কথা বলার আছে, বলব না। বললে এখানে অনেকের কাপড় থাকবে না।’ রাজা এ পর্যন্ত বলার পর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সম্পাদক বলেন, রাজা ভাই সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করবেন না। অনেক হয়েছে। এরপর কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রাজাকে সরিয়ে নেন।

/এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর চায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর চায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার
ইউনূস সেন্টার মিথ্যাচার করেছে, অভিযোগ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ইউনূস সেন্টার মিথ্যাচার করেছে, অভিযোগ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি