X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে মৃত্যুর রেকর্ড: কর্মসূচির চিন্তা বিএনপির

সালমান তারেক শাকিল
২৬ মে ২০১৬, ২১:১৪আপডেট : ২৭ মে ২০১৬, ০৬:০৪

বিএনপি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিগত দিনের সহিংসতার সব ধরনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ষষ্ঠ পর্বের নির্বাচনের প্রথম চারপর্বেই ১০১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পাশাপাশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডেও অতীতে সব সমীকরণ ভেঙেছে। এ পরিস্থিতিতে সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর কর্মসূচি দিতে পারে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও বিগত এক মাসে সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে দলটির স্থায়ী কমিটি গঠন ও নির্বাহী কমিটি মনোনয়নের আগেই হয়তো কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর তথ্যমতে- ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩ ও ১৯৯২-এ প্রাণহানির কোনও ঘটনা ঘটেনি। ১৯৮৮ সালে ৮০ জন, ১৯৯৭ সালে ৩১ জন, ২০০৩ সালে ২৩ জন এবং ২০১১ সালে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। অতীতের নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৮ সালে। সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনের তকমাও জুটেছিল ওই নির্বাচনের নামের পাশে। প্রাণহানির ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং তা চলছে দীর্ঘমেয়াদীভাবে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউপি’র চার পর্বে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সুজনের তথ্যমতে, নিহত ১০১ জনের মধ্যে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা বিরোধেই প্রাণ হারিয়েছে ৬৩ জনের। পাশাপাশি এই নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে কখনই নির্বাচন কমিশনকে আমরা কঠোর অবস্থানে দেখিনি। এটাও সহিংসতা বৃদ্ধির বড় কারণ।’  

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গে সুজনের তথ্য হচ্ছে- ১৯৮৮ সালে ১০০ জন,  ১৯৯২ সালে ৪ জন, ১৯৯৭ সালে ৩৭ জন এবং ২০০৩ সালে ৩৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রেও ১০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে এগিয়ে ছিল। তবে অতীতের সব রেকর্ড ম্লান হয়ে গেছে এবারের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যার কাছে। নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই সংখ্যা ২১১। প্রথম ধাপে ৫৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ জন, তৃতীয় ধাপে ২৯ জন, চতুর্থ ধাপে ৩৪ জন, পঞ্চম ধাপে ৪২ জন এবং ষষ্ঠ ধাপে এ পর্যন্ত ১৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরা সবাই ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ফলাফলে প্রথম ধাপের ৭৩৮টি ইউপির মধ্যে ১১৪টিতেই প্রার্থী নেই বিএনপির। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ৫০ জন  প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন বিএনপির প্রার্থী ছিল না ৬১ ইউনিয়নে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৩ জন নির্বাচিত হয়েছিল। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ৪৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনও প্রার্থী ছিল না। চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৭২৭টির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৫টিতে বিএনপির প্রার্থী ছিল না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইতিহাসের জঘন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এজন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায়ী। আগামী দিনে এই দুই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না।  গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, ইউপি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উত্তাপ ছিল, এর পুরোটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

কর্মসূচিরচিন্তাবিএনপির

ইউপি নির্বাচনে প্রাণহানি, কেন্দ্র দখল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেকর্ডসহ বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। এক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন- এই ইস্যুটিকে সামনে রেখে তাদের দলের কর্মসূচি দেওয়া উচিৎ। কেউ কেউ বলছেন, এখন পর্যন্ত স্থায়ী কমিটি, ভাইস-চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটি গঠিত না হওয়ায় কর্মসূচি দিতে বাধাও আছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, কর্মসূচির ক্ষেত্রে সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই রমজান শুরু হবে। ৪ জুন ষষ্ঠ পর্বে নির্বাচন দিয়ে শেষ হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এক্ষেত্রে রমজানের আগে ৫ ও ৬ জুন রবি ও সোমবার থাকায় এই দুই দিনে বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকতে পারে বিএনপি।

সূত্রমতে, ইউপি নির্বাচনকে ইস্যু করে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে স্থায়ী ও সিনিয়র নেতাদের বিগত তিনটির বৈঠকে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ফের দলটি বৈঠকে বসতে পারে। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটি এবং সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কর্মসূচি দেওয়া উচিৎ বলে মনে করি- দিতে পারে। তবে এখনও কমিটি গঠিত হয়নি। এটা গুরুত্বপূর্ণ আগে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রমজানের আগেই কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা আছে। তবে সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগতে পারে। ম্যাডাম সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা স্থায়ী কমিটির সঙ্গেও হতে পারে আবার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও হতে পারে।

একই তথ্য জানান সিনিয়র নেতা শামসুজ্জামান দুদু। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, কর্মসূচির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানি না। এটা ম্যাডামের বৈঠকের পর জানা যাবে।

তবে কর্মসূচি নিয়ে ‘কোনও বাতাস নেই’ বলে জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, যেভাবে ইউপি নির্বাচন হয়েছে। আমাদের তো প্রটেস্ট করা হয়নি। আমরা ঠিকমতো পদক্ষেপ নিয়ে হোঁচট খেয়েছি। এ কারণে কর্মসূচির সম্ভাবনা কম।

/এসটিএস/এএইচ/আপ-এনএস/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও মার্কিন থিঙ্কট্যাংকের প্রশংসা
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও মার্কিন থিঙ্কট্যাংকের প্রশংসা
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে: আইনমন্ত্রী
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে: আইনমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গাকে টপকে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়লো যশোর
চুয়াডাঙ্গাকে টপকে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়লো যশোর
দুই ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনী 
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগদুই ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনী 
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো