X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যদি তিনি মঞ্চে উঠতেন!

এমরান হোসাইন শেখ
২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪৮আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৫৬

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমান

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে প্রটোকল অনুযায়ী সভা-সমাবেশে সবসময় মঞ্চে বসার সুযোগ ছিল আইভি রহমানের। তবে, তিনি মঞ্চে বসতেন না। বসতেন অন্যান্য নারী কর্মীর সঙ্গে মঞ্চের সামনে। বসতেন নিজ হাতে গড়া মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। কখনও কোনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে হলেও বক্তব্য শেষ করে আবার নিচে নেমে মঞ্চের সামনে বসতেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সেই সমাবেশের দিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সেদিনও তিনি বসেছিলেন ট্রাক মঞ্চের ঠিক সামনে। নিত্যদিনের অভ্যাস ত্যাগ করে যদি সেদিন তিনি মঞ্চে গিয়ে বসতেন অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতার মতো আহত হলেও প্রাণে হয়তো বেঁচে থাকতেন মহিলা আওয়ামী লীগের প্রিয় নেত্রী আইভি রহমান।

একুশ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সেই সমাবেশে অংশ নেওয়া কয়েকজন নারী নেত্রীর মুখে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা জানান, নেত্রীকে লক্ষ্য করে যে গ্রেনেডটি মারা হয়েছিল সেটি পড়েছিল আইভি রহমানের ওপর। ওইদিন সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড লক্ষ্য ভেদ করলে হয়তো সেটি নেত্রীর ওপরই পড়তো।

ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া ও গ্রেনেড হামলায় মারত্মকভাবে আহত হওয়া নাসিমা ফেরদৌসী বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় আইভি রহমান সম্পর্কে বলেন, ‘অন্যান্য সমাবেশের মতো ওইদিনও আইভি আপা আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। সমাবেশ শেষ সময়ে যখন সবাই মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় বিকট শব্দ শুনতে পেলাম। পরক্ষণে আইভি আপার ‘মা’ বলে চিৎকার শুনতে পেলাম। ভাবলাম আইভি আপার কিছু একটা হয়েছে। আমার শরীরেও বেশ কিছু স্প্লিন্টার লাগলো। তাকিয়ে দেখলাম আইভি আপার দুই পা নেই। আমি ডান দিকে হাত দিয়ে তাকে ধরতে যাবো আবারও শব্দ পেলাম। এবার পড়ল আমাদের ওপর। আমি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালাম। এরপর আর কিছুই আমার মনে নেই।’

কখন জানলেন আইভি আপা নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার পর আমাকে দিল্লিতে পাঠানো হলো। তখনো ভালো জ্ঞান ছিল না। তবে, চিকিৎসার সময় মাঝে মধ্যে যখন জ্ঞান ফিরতো তখন ভেসে আসত আইভি আপার সেই ক্ষতবিক্ষত শরীরের কথা। জ্ঞান ফেরার পর অনেকের কাছে আইভি আপার খবর জানতে চাইলে সকলেই বলতো তিনি ভালো আছেন। ঘটনার প্রায় মাস খানেক পর আমাকে সত্যটা জানানো হলো।

নাসিমা জানান, ‘ট্রাক মঞ্চের দিকে লক্ষ্য করে প্রথমে যে গ্রেনেডটি মারা হয়েছিল সেটা মঞ্চে না পড়ে তার পাশে থাকা আইভি রহমানসহ মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পড়েছিল। লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে ওই গ্রেনেডটিতেই হয়তো আমাদের প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হারাতে হতো। আল্লাহর রহমত ছিল বলেই তিনি বেঁচে গেছেন।

আইভি রহমানের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তার এই রাজনৈতিক সহকর্মী বলেন, আইভি আপা দেখতে যেমন সুন্দরী ছিলেন, তার অন্তরটা ছিলো আরও সুন্দর। তিনি ছিলেন খুবই পরিপাটি। ঘরদোর সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতেন। মহিলা আওয়ামী লীগকেও তিনি সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছিলেন।

আইভি রহমান তার মুক্তিযুদ্ধসহ অনান্য কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি বই লিখতে চেয়েছিলেন বলেও জানান সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসী।

মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম আইভি রহমানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সভা-সমাবেশে তিনি সব সময় মঞ্চের সামনে আমাদের সঙ্গে বসতেন। আমরা তাঁকে অনুরোধ করে মঞ্চে যেতে বললেও তিনি যেতেন না। বলতেন তোমাদের সঙ্গে বসতে আমার ভালো লাগে। আমি এখানেই থাকতে চাই। ২১ আগস্টও আমরা তাকে বার বার  মঞ্চে যাওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি গেলেন না। ওইদিন মঞ্চে গেলে হয়তো আহত হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যেতেন।’

গ্রেনেড হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রী উম্মে রাজিয়া কাজল বলেন, ‘আইভি আপা ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি সংগঠন আর কর্মী ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। তার মধ্যে কোনও অহঙ্কার ছিল না। তিনি আমাদের মহিলা কর্মীদের আগলে রাখতেন।

গ্রেনেড হামলার পর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে আইভি রহমানকে (ফাইল ছবি)

২১ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা করে কাজল বলেন, নেত্রীর (শেখ হাসিনা) বক্তব্য যখন শেষ পর্যায় তখন মতিয়া আপা মঞ্চ থেকে নেমে মিছিলের জন্য সামনের দিকে যেতে লাগলেন। তার সঙ্গে মহিলা কর্মীরাও গেলো। এ সময় আইভি আপাও মিছিলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। তার পায়ে ব্যথা ছিলো। এজন্য দাঁড়িয়ে কিছুটা রেস্ট নিচ্ছিলেন। আমরাও তাঁর পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছি এক সঙ্গে যাবো বলে। এমন সময় বিকট শব্দ। অনেকের চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। আমরাও চিৎকার শুরু করলাম। যে যেদিক পারে ছোটাছুটি শুরু করলো। আমিও মারাত্মক আহত হলাম। কে বা কারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো সেটা আর মনে করতে পারিনি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতির জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমান মারত্মকভাবে আহত হন। এরপর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাতপাতালে ৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৪ আগস্ট মারা যান।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সবসময় কি টাকার পেছনে ছুটে সময় ব্যয় করবেন?
সবসময় কি টাকার পেছনে ছুটে সময় ব্যয় করবেন?
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে