X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

হঠাৎ হরতালে কেন বিএনপি?

সালমান তারেক শাকিল
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২৩:১১আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২৩:৩২

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে নেই বিএনপি। এতদিন ছোটখাটো মিছিল বা সভা-সেমিনারের মধ্যে দলীয় কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখলেও অবশেষে ৩ বছর ১০ মাস ১১ দিন পর ঢাকায় রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে দলটি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটার দিকে দলের নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনেকটা হঠাৎই এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে ‘অনিয়ম’সহ ‘ধারাবাহিকভাবে ভোটাধিকার লঙ্ঘন’-এর প্রতিবাদ জানাতেই এই হরতাল ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

জানতে চাইলে শনিবার সংবাদ সম্মেলনের পর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকা সিটিতে যে ভোট হয়েছে, তাতে অনেক অনিয়ম হয়েছে। ফলে, আমাদের প্রতিবাদ জানানো দরকার বলে মনে করেছি।’

হরতাল নিয়ে রাত আটটায় করা সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনও সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন অযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। জবরদস্তিপূর্বক নির্বাচন করে, জনগণের রায়কে পদদলিত করে, দলীয়করণ করে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ভোট লুট করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।’

তবে, শনিবার নির্বাচনের সময় বিএনপির গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের আলোচনায় হরতালের মতো কর্মসূচির কোনও প্রসঙ্গ তোলা হয়নি। শনিবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শেষ পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, নির্বাচনের নানা অনিয়মের খবর পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া, প্রার্থী ও দলের কর্মীদের অভয় দেওয়ার কাজটি করেছেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা। তবে ফাঁকে ফাঁকে ঢাকা মহানগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখা গেছে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। সকাল ১১টার আগে তৃণমূল নেতাকর্মী ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নয়াপল্টন অফিসে গিয়ে মির্জা ফখরুলের কাছে কেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ দিলেও তাদের কেন্দ্রে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সারাদিন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে কথা বলার চাপ থাকলেও একাধিকবার স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবস্থান তুলে ধরা হবে। বারবারই বলেছেন, মাঝপথে ভোট নিয়ে অনিয়মের কথা তুলে ধরা হলে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত হবেন। পরে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে কথা বলতে যান মির্জা ফখরুল। ওই সময় নির্বাচনে অনিয়ম, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আচরণবিধি লঙ্ঘন’ নিয়ে কথা বললেও কর্মসূচির প্রশ্নে ছিলেন নিরুত্তর। সংবাদ সম্মেলনে একবার শুধু বলেছেন, ‘আগে ফল দেখবো, এরপর অবস্থান জানাবো।’

রাত আটটার সময় হরতালের ঘোষণা আসার পর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিটি ভোটের অনিয়মের প্রতিবাদে শক্ত প্রতিবাদ করার প্রয়োজন থেকেই এই কর্মসূচি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল কর্মসূচি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। রাত সাড়ে নয়টার দিকে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময় দল যা করে, সেটাই মেনে চলি। এখন তো আমি প্রার্থী, তাই ফল আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন প্রভাবশালী নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হঠাৎ করে বিএনপি হরতালের দিকে যায়নি। হরতাল দিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা থেকেই। আর এটা হঠাৎ করে নয়, অন্তত গত দুই-তিন দিনে অনেক উন্নতি হয়েছে। তাদের সামনে কোনও বিকল্প নেই। বরং চাপ ছিল কর্মসূচির। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরও মানুষের চাপ ছিল কর্মসূচি দেওয়ার। ওই সময় তো এড়িয়ে গেছে। এখন তো প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে এই কর্মসূচিই দরকার ছিল।’

বিএনপি মহাসচিব অবশ্য বলছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট ছিল। অনেক দল ছিল। ২০ দল ছিল। সবাই একমত হতে পারেনি, সেজন্য কর্মসূচি দেওয়া হয়নি।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের মানুষের ভোট চুরি হয়েছে। এভাবে তো চলছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে তো স্ট্রং প্রটেস্ট দিতেই হবে। একটা দেশের নাগরিকের ভোট বারবার তারা কেড়ে নিয়ে যাবে, গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে যাবে, একটা পর্যায়ে গিয়ে তো প্রটেস্ট করতে হবে। এসব মনে করেই হরতাল দেওয়া হয়েছে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানান, হরতালের মধ্য দিয়ে প্রায় চার বছরের মাথায় এসে কঠোর কর্মসূচির দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়টি ধারাবাহিক হবে কিনা, তা আরও দুই-তিন দিন অতিবাহিত হলে স্পষ্ট হবে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য ভিন্নভাবে বলছেন। তিনি বলেন, ‘যেটা দরকার সেটা দিয়েছি। এটা খুব জরুরি। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে এই অনিয়মের প্রতিবাদ ডেকেছি।’

এক প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাজনীতিতে কী ঘটবে, তা তো আগে থেকে কিছু বলা যায় না। আর এই ভোট চুরির বিষয়টিকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক করে ফেলেছেন। তাদের কোনও পরিবর্তন নেই। হুট করে নিয়েছি না পরিকল্পনা করে নিয়েছি, তা বলতে পারবো না, এটার প্রয়োজন ছিল।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সর্বশেষ হরতাল দিয়েছিল বিএনপি।

বিএনপির ডাকা হরতালে নাগরিক ঐক্যের সমর্থন জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপি হরতাল ডেকেছে, ঠিক হয়েছে। যা হয়েছে তা তো নির্বাচন নয়, গুণ্ডামি হয়েছে। এই হরতালে আমাদের সমর্থন আছে। তবে, বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয়নি।’

এদিকে, হরতালের দিনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানিয়েছেন, হরতালে তিনি অফিসে যাবেন। এছাড়া, স্থায়ী কমিটির কেউ কেউ যেতে পারেন বলে সম্ভাবনার কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনকে।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়ে যা বললেন জান্তা প্রধান
সেনেগালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ম্যাককিনি‘বাংলাদেশের মতো রাশিয়ার নির্বাচনেও হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র’
সর্বশেষ খবর
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’