X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

বাজেট নিয়ে সরকারের কাছে বেশি কিছু আশা করে না বিএনপি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ জুন ২০২০, ২০:২৫আপডেট : ১২ জুন ২০২০, ২১:২৫

বাজেট নিয়ে সরকারের কাছে বেশি কিছু আশা করে না বিএনপি প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে ‘অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুরি’ বলেছে বিএনপি। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় দলটি জানায়, ‘বাজেট জনবান্ধব হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করে লাভও নেই। কারণ, জনগণের কাছে তাদের কোনও জবাবদিহি নেই।’

শুক্রবার (১২ জুন) বিকালে উত্তরায় নিজ বাসায় অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বর্তমান সরকারের কাছে এর বেশি কিছু আশা না করার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ফলে তাদের বাজেটে জনগণের প্রত্যাশিত খাতগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের দলীয় এবং ব্যক্তি বিশেষের পকেট ভারি করতেই এই বাজেট।’

অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তফা কামালের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামের এই বাজেট প্রকৃত অর্থে কথার ফুলঝুরি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই বাজেটে শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের অভিমতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আশা ছিল করোনা কাটিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে তিনি অসাধারণ বাজেটের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু নিতান্তই একটি সাধারণ বাজেট ঘোষণা দিলেন।’

বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাজেটে স্বাস্থ্য খাত সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে, এটাই সমগ্র জাতির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সরকার সবাইকে হতাশ করে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলো জিডিপির মাত্র ১.৩ শতাংশ। অথচ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম।’

২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে যাতে গার্মেন্ট কারখানাগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেই সময়টুকু টিকে থাকার মতো সাপোর্ট তাদের দিতেই হবে। তা না হলে পোশাক খাত মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে কেবল গার্মেন্ট খাতের ওপর ভরসা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিফাই করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।’

বাজেটে কৃষকদের উৎপাদনের উপকরণ, যেমন- বীজ, সার ইত্যাদির মূল্য হ্রাসের বিষয়ে তেমন কিছুই উল্লেখ নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাসায়নিক সারের গত বছরের দামই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। এই খাতও যথাযথ গুরুত্ব পায়নি বাজেটে।’

বাজেটে কর্মসংস্থানে কারিগরি শিক্ষা খাতে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘শস্য বিমার কথা দীর্ঘদিন থেকে বলা হলেও বাজেটে এ বিষয়ে কিছুই বলা নেই।’

এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের ৩০ জুনের মধ্যে কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে করোনার সময় গরিব ঋণগ্রহীতারা আরও বিপদগ্রস্ত হবেন। তাদের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছি।’

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছু সময় পিছিয়ে দিয়ে এই প্রকল্পের ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করারও পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল।

গত এক দশকের বেশি সময়ব্যাপী সরকারদলীয় যেসব ব্যক্তি নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, তাদের টাকা সাদা করার জন্য সরকার এবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৃদ্ধি করেছে বলেও দাবি করে বিএনপি।

উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেওয়ার দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তার দাবি, এই খাতে লুটপাট বেশি হয়।

বাজেটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অথচ এখনও আম্পানের ধকল চলছে। উপকূলীয় বাঁধগুলো মেরামত হয়নি। লাখ লাখ মানুষ জলাবদ্ধ রয়েছে। সামনে আরও সংকটময় পরিস্থিতি আসতে পারে। বিশেষ করে করোনার সেকেন্ড শক, যা অনেক দেশেই হচ্ছে। এমন অবস্থায় এই দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ হ্রাস করা উচিত হয়নি।’

ব্যাংকের আমানত কমে যাচ্ছে বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার ওপরে রাখলেই ৩ হাজার টাকা করে কর দিতে হবে। এক কোটি টাকার ওপরে থাকলে ১৫ হাজার ট্যাক্স দিতে হবে। এতে আমানত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।

এর আগে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই গত ৪ এপ্রিল ৮৬ হাজার কোটি টাকার একটি আর্থিক প্যাকেজ প্রস্তাব তুলে ধরে বিএনপি। তার ওপর ভিত্তি করে গত ৯ মে বাজেট ভাবনাও দেয় দলটি। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই ২০২০-২১ প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে কতগুলো সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। সেই অনুযায়ী বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব সুপারিশ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

/এএইচআর/এনএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়িতে চড়াও হলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
বার ভাঙচুর: সেই যুবদল নেতা বহিষ্কার
পঞ্চগড়ে হাসনাত আবদুল্লাহআ.লীগ চাঁদাবাজি করে ভারতে পালিয়ে গেছে, আপনারা পালানোর পথও পাবেন না
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
দীর্ঘদিন পর খাল উন্মুক্ত, ২০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ উৎফুল্ল
দীর্ঘদিন পর খাল উন্মুক্ত, ২০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ উৎফুল্ল
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল