জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, কোনও মানুষ যেন রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়ে জীবন না হারান, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ টি এম আজহার সাহেবের মুক্তির মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তার যে অধিকার, সেই অধিকার তিনি অর্জন করেছেন। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা যেমন ছিল, তা জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংস্কার সমন্বয় কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর: মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে হাসিনা আমলের মতো করে নয়, বরং সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, বিচারব্যবস্থার যে ইউনিভার্সাল কোডগুলো রয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই যেন বিচার সম্পন্ন হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা যে নতুন দিনের প্রত্যাশা করি, সেই দিনে কোনও নতুন দল বা গোষ্ঠী যেন মানবতাবিরোধী হয়ে কাউকে গণহত্যাকারী বা প্রতিবাদী হিসেবে না গড়ে তোলে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে যে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে, অনেকে বলছেন— নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার সম্পন্ন করবে। আমরা মনে করি, এই কথার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকের ওপর সংস্কারের দায়িত্বভার অর্পণ করে সংস্কারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরও বিদেশে চক্রান্তকারী এবং দেশের অভ্যন্তরের আওয়ামী দোসররা নানাভাবে দেশের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনোভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে না। আমরা আশা করবো, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নানা আলোচনা হতেই পারে, নানা কথা উঠতেই পারে। কিন্তু সততা, ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে মৌলিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই একমত হতে হবে।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। এর মধ্যে যেকোনও সময় নির্বাচন হতে পারে। আমরা নির্বাচনের পক্ষে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করি। তবে সেই নির্বাচন যেন চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করার পরে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলাদেশে আর কখনও এমন কোনও দুঃশাসনের সময় ফিরে না আসে, যেখানে মানুষের জীবন দিয়ে রাজপথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, অধ্যাপক দিলারা জামান, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।