গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা গভীর পরিতাপ ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশে এক ধরনের মব তৈরি করে হামলা, অবমাননা, নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু হচ্ছে, এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর হাতিরপুলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময়ে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিকে সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এর আগে সংখ্যায় কম— এমন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপরে আক্রমণ হয়েছে, মাজারে আক্রমণ হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপরে আক্রমণ হয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপরে আক্রমণ হয়েছে। অভ্যুত্থানের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এসব ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর কোনও ভূমিকায় আমরা দেখতে পাইনি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি থাকলেও নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে।’
‘আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের এবং আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত সব বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখতে চাই। শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় সারলে চলবে না, অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি বলেন।
সাকি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচনের হোতা নূরুল হুদাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে জুতার বারি দেওয়া বা জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা আমরা দেখলাম। বাংলাদেশে ১৪, ১৮ ও ২৪ এর প্রহসনের নির্বাচনের পেছনে যারা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকেরই এসব নির্বাচন ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায় আছে এবং তাদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।’
‘কিন্তু বিচারের আগেই তাদের মব সৃষ্টি করে হেনস্থা করার মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে— তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনও দৃষ্টান্ত নয়। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ন্যায়বিচার দেখতে চাই, বিচারের নামে কোনও প্রহসন, কিংবা মব বিচার যাতে আর কোনোভাবেই চলতে না পারে, সেজন্য সরকারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সোমবার (২৩ জুন) জাতীয় নাগরিক পার্টির অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান সাকি। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে আহ্বান জানান।
সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান জোনায়েদ সাকি।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা এবং দলের সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
তিনি জানান, আগামী পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন আগামী ১০-১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৪ জুলাই জুলাইযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মিলন, ৫ জুলাই গণসংহতি আন্দোলনের তরুণ জুলাইযোদ্ধাদের নতুন বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও বিশেষ জাতীয় বর্ধিত সভা, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলায় জুলাই সমাবেশ, ২৫ জুলাই ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ, ১ আগস্ট শহীদ জুলফিকার শাকিলের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ, ৪ আগস্ট জুলাই-আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি কর্মসূচি ঘোষণা করে গণসংহতি আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দিপক কুমার রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, জাতীয় পরিষদ সদস্য পপী রানী সরকার, তৌহিদুর রহমানসহ আঞ্চলিক নেতারা।