X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটের ‘মক্কা’ লর্ডসের ছবি যেন সিলেটে

রবিউল ইসলাম, সিলেট থেকে
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:১১আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:১১

একদিকে টিলা। অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান। চারপাশ জুড়ে মনোরম পরিবেশ। গ্যালারিতেও সবুজের ছোঁয়া। মাঠের একপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ‘গ্রিন গ্যালারি’। সব মিলিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে দারুণ মনকাড়া নবনির্মিত সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এর পাশেই গড়ে উঠছে গ্রাউন্ড-টু। লাক্কাতুরা এলাকায় প্রকৃতির কোলে পরম মমতায় থাকা স্টেডিয়াম দুটি হতে পারে পর্যটন শিল্পেরও অন্যতম বিজ্ঞাপন। এ যেন ক্রিকেটের ‘মক্কা’ খ্যাত লর্ডস! অনেকে তো এর নাম দিয়ে ফেলেছেন ‘বাংলার লর্ডস’। সেক্ষেত্রে মূল মাঠ যদি হয় বাংলার লর্ডস, তাহলে বাইরের অংশটিকে হ্যাগলি ওভাল বলাই যায়!

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স থেকে পেছনে তাকালেই আয়রন ব্রিজ। সেখান গিয়ে দু’চোখ মেলে দিলে ধরা দেয় আরেক সবুজের সমারোহ। গ্রাউন্ড-টু-ও যেন ‍দৃষ্টিনন্দন সবুজ গালিচা। এখানে কৃষ্ণচূড়া গাছ মাঠকে করেছে চাকচিক্যময়। চারপাশে প্রচুর গাছপালা। একই আঙিনায় দুটি ক্রিকেট গ্রাউন্ড দেশের ক্রিকেট অবকাঠামোর আর কোথাও নেই।

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

পাহাড় ও সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গল্পটা সবারই জানা। কিন্তু পাশের এই আউটার স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য যেন ছাড়িয়ে গেছে মূল মাঠকেও। সুযোগ-সুবিধার কী নেই এই গ্রাউন্ডে! মাঠের পুরোটা জুড়ে বিশ্বমানের পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেন্টার উইকেট ৯টি। মাঠের পাশেই নেট অনুশীলনের জন্য ৬টি উইকেট। নতুন গ্রাউন্ডটিতে রয়েছে চারটি উন্নত মানের ড্রেসিং রুম। এছাড়া আছে জিমনেসিয়াম, আইস বাথ। আম্পায়ার, ম্যাচ অফিসিয়াল, স্কোরারদের জন্য রয়েছে আলাদা রুম। সংবাদকর্মীদের জন্য আছে মিডিয়া সেন্টার। ভিআইপি দর্শক কিংবা বিসিবির আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য হসপিটালিটি বক্সের ব্যবস্থাও আছে।

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

মাঠের দুই পাশে গ্রিন গ্যালারি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেডিয়ামগুলোর একপাশে দর্শকরা উন্মুক্ত মাঠে খেলা দেখেন। সেসব জায়গায় শুয়ে-বসে খেলা উপভোগ করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সিলেটেও থাকছে সেই সুযোগ। মাঠের পশ্চিম পাশের একটি টিলাকে কৃত্রিম উপায়ে গ্যালারির মতো করে সাজানো হয়েছে। ঘাস দেওয়ায় এই জায়গা রূপ নিয়েছে সবুজ গালিচায়। ওপরে ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। এছাড়া ধস ঠেকাতে প্রতিটি ধাপে ইট-কংক্রিটের ভিত্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ একসময় এই মাঠ ছিল ময়লার ভাগাড় আর ধুলোবালির আখড়া। পাশেই কাঁচা পথ ধরে মূল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে যেতে নাকে ধাক্কা দিতো দুর্গন্ধ। সেই অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তাদের কাছে নতুন এই স্টেডিয়াম মনে হতে পারে অচেনা এক রূপকথা!

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

সিলেট স্টেডিয়ামকে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের মতো গড়ে তুলতে চান বিসিবি পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে মাউন্ট মঙ্গানুইতে গিয়ে সেখানকার স্টেডিয়াম আমার মনে ধরে যায়। মাঠটি তৈরির সময় বাংলাদেশের বাস্তবতায় যতটুকু সম্ভব মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে মতো করেই গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। আরও গাছপালা সংযুক্ত করার পর ধাপে ধাপে অন্যান্য কাজ শেষ হলে এই মাঠ দেখতে আরও মনোরম লাগবে।’

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

স্টেডিয়ামের পাশেই অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একাডেমিক ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিসিবির আঞ্চলিক একাডেমির ক্রিকেটাররা থাকবেন সেখানে। এতে থাকবে ডরমিটরি, সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, ইনডোর অনুশীলন সুবিধা। নামাজ আদায়ের জন্য মাঠের পাশে ইতোমধ্যে মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে।

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

শফিউল আলম নাদেলের কথায়, ‘আমাদের পরিকল্পনা হলো, সিলেটকে একটি ক্রিকেট কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলা। বিসিবি সিলেটে একাডেমি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। এখানে একাডেমি ভবন হবে। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে ৩০-৪০ জনের আবাসন ব্যবস্থা সংবলিত ডরমিটরি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্যাম্প করতে আসা ক্রিকেটাররা এখানে থাকতে পারবে।’

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

সিলেটের দুটি মাঠেই যেহেতু বিসিবির ম্যাচ ও ক্যাম্পের ব্যস্ততা থাকবে, তাই স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করলেন শফিউল আলম নাদেল, ‘মূল স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ২ নম্বর মাঠেও বিসিবি এখন প্রচুর খেলা রাখবে। এছাড়া এখানে বিভিন্ন দলের টানা ক্যাম্প হতেই থাকবে। সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের সুযোগ খুব একটা হবে না। তাদের জন্য পাশেই আমরা আরেকটি মাঠ তৈরি করছি। সেখানেও সিমেন্টের টার্ফ উইকেট থাকবে। দিনে তিন-চারটি স্লটে ১২০-১৫০ জনের মতো স্থানীয় ক্রিকেটার অনুশীলন করতে পারবে। সব মিলিয়ে সিলেট দেশের উল্লেখযোগ্য একটি ক্রিকেট কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

পৃথিবীর বিভিন্ন স্টেডিয়ামে জাদুঘর থাকলেও বাংলাদেশে এমন কিছু নেই। বিসিবির এই পরিচালক জানালেন, সেটি নিয়েও ভাবনা আছে তাদের, ‘সত্যি বলতে আমরা শুরু থেকেই জানি, এখানে জাদুঘর একটি উচ্চভিলাসী পরিকল্পনা। আমাদের ক্রিকেট তো আর অনেক বছরের নয়, অর্জন বা স্মরণীয় কিছুও খুব বেশি নয়। তারপরও যা আছে, টুকটাক কিছু নিয়ে হলেও জাদুঘরটা আমরা করে যেতে চাই। তারপর সময়ের সঙ্গে এটি সমৃদ্ধ হতে থাকবে।’

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

পরিকল্পনার শুরুতে মূলত অনুশীলনের জন্যই এই মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন নাম দেওয়া হয়েছিল আউটার স্টেডিয়াম। পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম গ্রাউন্ড-টু। ২০২১ সালে এর পথচলা শুরু। ১ হাজার ১ টাকা নামমাত্র মূল্যে পাওয়া ৮ দশমিক ৭৩ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে স্টেডিয়ামটি। এজন্য খরচ হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
নতুন নির্বাচক প্রধানের নিয়োগে বিস্মিত সুজন
নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ হবে ঢাকা ও সিলেটে
তামিমই এখন পর্যন্ত আমাদের অধিনায়ক: বোর্ড প্রধান
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা