X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট

বাবা-চাচাদের উত্তরাধিকার সূত্রে ক্রিকেটে আসা জিসানের স্বপ্ন-উড়াল

রবিউল ইসলাম 
০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫৭আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৩

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জিসান আলম যখন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে অনূর্ধ্ব-১৯ আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে নামবেন, টিভি পর্দায় সেই দৃশ্য দেখে তার বাবা জাহাঙ্গীর আলমের বুকটা নিশ্চয়ই গর্বে ভরে উঠবে। হয়তো তার জাতীয় দলে খেলার সোনালী অতীত ধুলোবালি ঝেড়ে সজীব হয়ে উঠবে! সেই ১৯৮৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলা ওপেনার জাভেদ ওমরের সঙ্গে ডাবল-সেঞ্চুরি ছাড়ানো জুটি গড়েছিলেন। কিন্তু রেকর্ডবুকে সেসব কিছু লেখা নেই। এবার তার ছেলে স্বপ্নডানা মেলতে যাচ্ছে বিশ্বমঞ্চে।

জিসানের ক্রিকেটার হওয়াটা ছিল একরকম অবধারিত। অন্তত তার পরিবারের দিকে তাকালে সেটাই মনে হবে। বাবা খেলেছেন দেশের বড় বড় ক্লাবে, চাচা জুয়েল হোসেন সুনাম কুড়িয়েছেন ভালোই।অন্য অনেক ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠার গল্পে যেমন সংগ্রামের দিন থাকে, জিসানের তেমন নেই। তার গল্প বরং কেবলই ক্রিকেটকে কাছে টেনে নেওয়ার।

২০১০ সালে নারায়ণঞ্জ ক্লেমন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক দীক্ষা শুরু হয় জিসানের। তারপর দাপট দেখিয়েছেন স্কুল ক্রিকেটে। বাবার দেখানো স্বপ্ন-রঙিন ক্রিকেটজীবন, চাচার দেওয়া অনুপ্রেরণা— এসবই ছিলে জিসানের শুরুর দিনগুলোর সঙ্গী।

ভারতের সুপারস্টার ক্রিকেটার রোহিত শর্মাকে দারুণ পছন্দ জিসানের। রোহিতের মতোই তিনি ব্যাট করেন ওপেনিংয়ে। এশিয়া কাপ জেতা বাংলাদেশ দলে তিনিও ছিলেন। কিন্তু ব্যাট হাতে এই আসরে প্রায় বিবর্ণ লেগেছে তাকে। তিনি অবশ্য সেই দুঃস্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকতে চান না। বাজে দিন থেকে বেরিয়ে আসার শিক্ষাটা নিয়েছেন বাবার কাছ থেকে। নেটে খেটেছেন অনেক। এছাড়া বেশ কয়েকটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা তার সঙ্গী। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়েই স্বপ্নের ডানা আরও বিস্তৃত করতে চান এই যুবা।

অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ স্কোয়াডকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের ধারাবাহিক আয়োজনে আজ থাকছে জিসান আলমের সাক্ষাৎকার।

জিসান আলম (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

বাংলা ট্রিবিউন: বাবা-চাচাদের দেখেই কি ক্রিকেটে আগ্রহী হয়ে ওঠা?
জিসান আলম: আমাদের পরিবারের সবাই ক্রিকেটার ছিলেন। আমার আব্বু ও দুই চাচা ক্রিকেট খেলেছেন। আব্বু আর এক চাচা জাতীয় দলে খেললেও আরেক চাচা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ছিলেন। তাদের দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠেই আব্বু-চাচাদের হাত ধরে মাঠে চলে যেতাম। তারা অনুশীলন করতেন, আমি দেখতাম। আমার ইচ্ছে হতো ক্রিকেট খেলার। বাসায় সবসময় আব্বু-চাচাদের ব্যাট-বল-গ্লাভস দেখতাম। সেগুলো দেখে ভালো লাগতো। ২০১০ সালে আমাকে ছয়-সাত বছর বয়সে নারায়ণগঞ্জে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু করি। তার আগে টেপ টেনিস দিয়ে অনুশীলন করতাম।

বাংলা ট্রিবিউন: এখন আপনার বাবা কীভাবে অনুপ্রাণিত করেন?
জিসান: বলতে পারেন আব্বুই আমার কোচ। তিনিই সবকিছু খেয়াল রাখেন। আমার ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করেন। অনূর্ধ্ব-১৫’তে একবছর বাদ পড়েছিলাম। তখন আব্বুর পরামর্শে কঠোর পরিশ্রম করেছি। তখন কিছুটা মোটা ছিলাম। আমার ফিটনেসের খুব বাজে অবস্থা ছিল। ফিল্ডিং ছিলে যাচ্ছেতাই। তবে কঠোর পরিশ্রম করে পরের বছর সেরা ক্রিকেটার হই। আব্বু প্রায়ই বলেন, ‘ভালোর তো শেষ নেই। যে ভুল হচ্ছে, সেই ভুলগুলো সংশোধন করে দিচ্ছি। কোচদের সঙ্গে কথা বলো, নিজের মাথা সতেজ রাখো।’ আব্বুর সঙ্গে কথা বলে স্বস্তি পাই। তিনি যেভাবে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেন, সেটা আমার দারুণ কাজে লাগে। 

বাংলা ট্রিবিউন: বাবার স্বপ্নপূরণ করতে কতখানি আত্মবিশ্বাসী আপনি?
জিসান: সব সন্তানই চায় বাবার স্বপ্নপূরণ করতে। জাতীয় দলে খেলা স্বপ্নের মতো। তবে আমি প্রস্তুত হয়েই জাতীয় দলে সুযোগ পেতে চাই। জাতীয় দলে এখনই আমাকে সুযোগ পেতে হবে, এমন কিছু আমার মধ্যে নেই। যুব বিশ্বকাপে ভালো করতে পারলে পরের ধাপগুলোতে ভালো করা সম্ভব হবে। এখন আমার কাজ ভালো খেলা। ভালো খেলে আমার চেষ্টাটুকু করে যেতে থাকি। বাকিটা সময়ই বলে দেবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভালো খেলতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: এশিয়া কাপে ফর্মহীনতায় ভুগেছেন, এ নিয়ে কোনও অস্বস্তি আছে?
জিসান: যেহেতু এশিয়া কাপ অতীত হয়ে গেছে, তাই এ নিয়ে মোটেও চিন্তা করছি না। ২০২৩ সাল ভুলে যেতে চাই। নতুন বছরে নতুন কিছু নিয়ে ভাবছি। এশিয়া কাপ খারাপ গেছে, যেতেই পারে। তবে যুব বিশ্বকাপে চেষ্টা করবো সর্বোচ্চটা দেওয়ার। দলের জন্য যা যা প্রয়োজন হবে, চেষ্টা করবো সেগুলো ঠিকঠাকভাবে করার।

জিসান আলম (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

বাংলা ট্রিবিউন: গত যুব বিশ্বকাপেও আপনি দলের সঙ্গী ছিলেন, যদিও ম্যাচ খেলা হয়নি। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে দল নিশ্চয়ই আপনার কাছে বাড়তি কিছু প্রত্যাশা করবে।
জিসান: দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে চাই। অবশ্যই দল আমার কাছে বিশেষ কিছু প্রত্যাশা করতে পারে। আমার চেষ্টা থাকবে আস্থার প্রতিদান দেওয়ার। গত দুই বছর বড়দের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট খেলেছি। বড়দের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করার সুবাদে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এসব অভিজ্ঞতা বড় মঞ্চে কাজে লাগবে আশা করি।

বাংলা ট্রিবিউন: নিজের কোন জায়গাগুলোতে বিশেষ উন্নতি দেখছেন?
জিসান: গত দুই বছর একটু হলেও আমার ব্যাটিংয়ের উন্নতি হয়েছে। দক্ষতা অনুযায়ী উন্নতি করার পাশাপাশি মানসিকতার উন্নতিতে কাজ করেছি। বিশেষ করে ক্লাব ক্রিকেট খেলে আমার মানসিক শক্তি বেড়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধরতে গেলে সবাই ১৫-২০ বছর ধরে খেলছেন। তাদের সঙ্গে খেলা বড় একটা অভিজ্ঞতা।  

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যাটিং নিয়ে সিনিয়র কোন ক্রিকেটারের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করেছেন? 
জিসান: বিসিএলে যখন ছিলাম, সাইফ ভাই, নাঈম শেখ ভাই ও নাঈম ইসলাম ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের সঙ্গে আমার ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা করেছি। কিছু সমস্যার কথা শেয়ার করেছি। আমাকে তারা বেশ কিছু উপদেশ দিয়েছেন। সেগুলো মাঠের খেলায় প্রয়োগ করতে চাই। 

বাংলা ট্রিবিউন: কন্ডিশন পাল্টেছে, শ্রীলঙ্কা থেকে বিশ্বকাপ সরে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। দলীয় পরিকল্পনায় কোনও ব্যাঘাত ঘটেছে কিনা?
জিসান: না। বিশ্বকাপ মঞ্চে সেরাটা দিতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা দশ দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যাবো। সেখানে আমরা অনুশীলন ম্যাচও খেলবো। ফলে উইকেটের ব্যাপারে ভালো ধারণা হয়ে যাবে। দলের সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সবাই ভালো চার্মে আছে। সবাই সবার সেরাটা দিতে পারলে ট্রফি আমরাই নিয়ে আসবো।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে আপনার বিশেষ কোনও লক্ষ্য আছে?
জিসান: রান করাই মূল লক্ষ্য। প্রচুর রান করতে চাই। দল আমার কাছে সেটাই প্রত্যাশা করে। আমি ভালো শুরু এনে দিতে পারলে আমার ও দলের জন্য ভালো হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন বলে টপ অর্ডারদের সংগ্রাম করতে হতে পারে। সুইং ও বাউন্সের বিপক্ষে বেশ লড়তে হবে। ধারণা করছি, ১৫-২০ ওভার পেস বোলাররাই বোলিং করবেন। আমি যদি নতুন বল ভালোভাবে খেলতে পারি, তাহলে দলের জন্য দারুণ ব্যাপার হবে। বয়সভিত্তিক লেভেলের শেষ ধাপ স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করবো।   

বাংলা ট্রিবিউন: রোহিত শর্মার খেলা ভালো লাগার আলাদা কারণ আছে?
জিসান: তিনি স্টাইলিশ ও অ্যাটাকিং ব্যাটার। তার ব্যাটিং বেশ ভালো লাগে। টিভিতে তার খেলা মুগ্ধ হয়ে দেখি। মূলত তাকে অনুসরণ করি আমি। একদিন তার মতোই আক্রমণাত্মক ব্যাটার হতে চাই।

জিসান আলম (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

একনজরে
পুরো নাম: জিসান আলম
ডাক নাম: জিসান
জন্ম: ১০ নভেম্বর, ২০০৪
জন্মস্থান: নারায়ণগঞ্জ
বাবা: জাহাঙ্গীর আলম
মা: ইভা আক্তার সুমি
উচ্চতা: ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি
পড়াশোনা: এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষ
প্রথম ক্লাব: নারায়ণগঞ্জ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি
বর্তমান ক্লাব: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব
বোলিং স্টাইল: অফ-স্পিন
বোলিংয়ে শক্তির জায়গা: টার্ন
ব্যাটিং স্টাইল: ডানহাতি ব্যাটার
প্রিয় শট: পুল
প্রিয় মানুষ: বাবা-মা
প্রিয় ক্রিকেটার: রোহিত শর্মা
ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত: বাংলাদেশ গেমসে ১৬৯ রান

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
এশিয়া কাপ জিতিয়ে খুলনার টিকিট পেলেন তামিম
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয়এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় যুবাদের প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপযে সমীকরণে সেমিফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ
সর্বশেষ খবর
ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ? দূর করার ৬ উপায় জেনে নিন
ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ? দূর করার ৬ উপায় জেনে নিন
খাগড়াছড়িতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারিসহ ৬ নির্দেশনা
খাগড়াছড়িতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারিসহ ৬ নির্দেশনা
দিনের শুরুতে এবাদতের বিদায়ে পড়লো নবম উইকেট
দিনের শুরুতে এবাদতের বিদায়ে পড়লো নবম উইকেট
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
সর্বাধিক পঠিত
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’