অনেক পরিচয়ে পরিচিত মিশু চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের পাশাপাশি বগুড়ার মঞ্চে কাজ করতেন। একটু একটু করে ঢাকার মঞ্চ ছাপিয়ে চলে যান রূপালি পর্দায়। নতুন করে আম্পায়ারিংয়ে যুক্ত হওয়াতে পর্দায় খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না মিশুকে। ভবিষ্যতেও নিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই। তবে এরই মধ্যে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয়ে গেছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। নারী ক্রিকেটারদের আদ্যোপান্ত নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন তিনি। মিশুর দাবি এই বইটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের আর্কাইভ।
চলমান একুশে বইমেলাতে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে মিশু চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের অভিযাত্রা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। রাকিবুল হাসান-গাজী-আশরাফ হোসেন লিপু-আকরাম খান-সাকিবদের হাত ধরে কঠিন সংগ্রাম পেরিয়ে সাকিব-তামিম-মুশফিকরা বাংলাদেশকে পুরুষ দলকে একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। নারী দলের এই সংগ্রামটা ছিল আরও কঠিন। ১৯৮৬ সাল থেকে সেইসব সংগ্রামী সংগঠক, ক্রিকেটার, ম্যানজারদের গল্পগুলো উঠে এসেছে মিশুর বইতে। প্রথম যুগে কারা ছিলেন এর কাণ্ডারি? বইটিতে পাওয়া যাবে সেই ইতিহাস। একইসঙ্গে বিশ্বের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসও যুক্ত আছে।
প্রথম যুগের অভিযাত্রী হিসেবে মুসারাত কবির আইভী, তাজকিয়া আক্তার, সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদসহ অনেকেই বলেছেন তাদের ক্রিকেটার হওয়া ও দেশ-বিদেশে ক্রিকেট খেলার গল্প। এ গল্প শুধু খেলার নয়, বাংলাদেশে নারী হিসেবে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার আপসহীন সংগ্রামেরও। এই বইয়ে নারী ক্রিকেটের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত সংগঠকদের কথাও রয়েছে। এইসব গল্পও দেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসের অংশ। বর্তমানে আম্পায়ারিং পেশায় নিয়োজিত মিশু নিজে ক্রিকেটার ছিলেন। ফলে দেশের নারী ক্রিকেটের ভেতরের দিকটা তিনি এই বইয়ে সহজে তুলে ধরতে পেরেছেন।
নারী ক্রিকেটকে পুরো এক মলাটে আনার ভাবনা কীভাবে এলো? মিশু বাংলা ট্রিবিউনকে শুনিয়েছেন সেই গল্প, ‘আজ থেকে পাঁচ বছর আগেই বই নিয়ে আমি পরিকল্পনা করেছি। যদিও অনেককেই আমি নারী ক্রিকেট নিয়ে বই লেখার আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউই সাড়া না দেওয়াতে আমি নিজেই লেখার সিদ্ধান্ত নেই। কাজটা শুরুর আগে আমি অনেক নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে এই নিয়ে আলাপ করি। তারা আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়ে শুরু করতে বলে।’
মিশু আরও জানিয়েছেন, ‘আমি খেয়াল করতাম, ইন্টারনেটে আমাদের নারী ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি তথ্য নেই। আমি ভেবেছি ভবিষ্যতের জন্য কিছু তথ্য তো আসলে থাকা উচিত। আমার বইটা পড়ে পরের জেনারেশন জানতে পারবে নারী ক্রিকেটারদের উত্থান, এতটা সহজ ছিলো না। বইটা একটা ডকুমেন্টারি। এই বইটাকে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের আর্কাইভ বলতে পারেন। কারণ যারা নিজেরাই খেলেছে তাদের মুখের কথা শুনেই বইটা লেখা হয়েছে। এটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও বইটি অমূল্য হয়েই থাকবে।‘
চলতি বই মেলায় ‘বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের অভিযাত্রা’ বইটি প্রকাশিত হলেও বইটি বের করা এতটা সহজ ছিলো না। বইটির লেখার কাজ শেষ হয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু সম্পাদনার কাজ ঠিকমতো না হওয়াতে যথাসময়ে বইটি বের করা সম্ভব হয়নি। কেন এত দেরি সেই গল্পও জানা গেলো মিশুর কথায়, ‘তিন বছর আগে বইটার কাজ শেষ করলেও তেমন কাউকে পাচ্ছিলাম না এডিটিং করার মতো। কেননা কেউই আসলে নারী ক্রিকেট সম্পর্কে ওই রকম কোনও তথ্য জানে না। ফলে কাজটা কেউ নিলেও শেষ পর্যন্ত ফেরত দিয়ে দিতো। এইসব কারণে আমার সময়টা বেশি লেগে গেছে। ফাইনালি যখন বের হলো, এর চেয়ে দারুণ অনুভূতি আর কিছুতে হয় না।’
এমনিতে ক্রীড়া বিষয়ক বইয়ের চাহিদা বাংলাদেশ খুব বেশি নেই। বাস্তবতা উপলব্ধি করেই মিশু নিজের বই বিক্রয় নিয়ে সন্তুষ্ট। বইমেলায় ইতিমধ্যে তার ২০০ কপির মতো বই বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন তিনি, ‘ক্রীড়া বিষয়ক বই আসলে কেউই খুব একটা কিনতে চায় না। এবারের বই মেলাতে মানুষ বেশি থাকলেও বই কেনার লোক নেই। তারপরও আমি সন্তুষ্ট। দুইশর মতো বই বিক্রয় হয়েছে। আমি নিয়মিত বই মেলায় যাচ্ছি। আশা করি সামনে ভালো বিক্রয় হবে।’