বাংলাদেশের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা আশা-নিরাশারই। সাকিবদের মতো দর্শকরা প্রতিবার আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষ হতেই দেখা যায় নিরাশার পাল্লাটা ভারী। এবার তো টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারে আশাবাদীদের প্রায় নিরাশাবাদীদের দলে ঠেলে দিয়েছে। তার পরেও আশা-নিরাশার দোলাচলের মধ্যে বাংলাদেশের এই মুহূর্তের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাটির বিশ্ব আসর শুরু হতে যাচ্ছে। আটলান্টিকের ওপারে শুরু হতে যাওয়া ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের বিশ্বকাপকে ঘিরে তাই আলোচনাও তুঙ্গে।
হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হতে যাওয়া ক্রিকেটের বিশ্ব আসরকে ঘিরে সেখানে কোনও হেল-দোল নেই। কারণ আমেরিকানরা ক্রিকেট নয়, বেশি ব্যস্ত থাকে বেসবল-বাস্কেটবল নিয়েই। ক্রিকেট সেখানে শুধুই উপমহাদেশের প্রবাসীদের খেলা! উপমহাদেশ টানলে তো স্বাভাবিকভাবে আমরাও থাকি। তাই ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যদের মতো বাংলাদেশের মানুষও অপেক্ষায় আছে টি টোয়েন্টির ধু্ন্ধুমার লড়াই দেখার জন্য।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছি কেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও টানতে হবে। সহআয়োজক হিসেবে সেখানে যে ম্যাচ বেশি হবে। আর ক্রিকেট জাতি হিসেবে তাদের ঐতিহ্য তো নতুন করে বলার নেই। তবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক-ফ্লোরিডা-ডালাসকে ঘিরেই যত ব্যস্ততা। আর এমন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কী করতে পারে তা নিয়ে হয়তো অনেকেই অনেক কিছু বিশ্লেষণ করেছেন। তবে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত কিন্তু ঢাকায় থাকতে আশাবাদের প্যারামিটার সংযত রেখেছিলেন।আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজ হেরে বড় গলায় যে কিছু বলবেন তারই বা সাহস কোথায়?
এমনিতে প্রথম বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তার ওপর ফর্মও সেভাবে কথা বলছে না। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে চাপটা যেন একটু বেশি পরে যাচ্ছে। তবে সাহস কিংবা চাপের কথা যখন আসছে, নতুন করে সাকিব আল হাসান-মাহমুদল্লাহর কথা বলতে হয়। দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজন ক্রিকেটার শান্তদের সঙ্গে আছেন। সাকিব তো ২০০৭ থেকে খেলছেন। ভারতের রোহিত শার্মা ছাড়া এবার আর কেউ নেই তার সঙ্গে। এই দুজনই শুরু থেকে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে আছেন।
সাকিবের সঙ্গে আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ আছেন, আছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। এদের কাছ থেকে শান্তসহ নতুনরা অন্যরকম প্রেরণা নিতে পারেন। ক্রাইসিস মুহূর্তে মাঠের লড়াইয়ে কীভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়, ঘুরে দাঁড়িয়ে দলকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় শামিল হতে হয়, তার উদাহরণ তো কম নয়। একটি দল হয়ে খেলার রসদ তাদের চেয়ে ভালো এই মুহূর্তে কারই বা বেশি জানা আছে!
এছাড়া সাকিব আল হাসান তো পরের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার আশাবাদ ব্যক্ত করে নতুন করে সতীর্থ ও সমর্থকদের উদ্দীপ্তও করেছেন। জাগিয়েছেন আশা। তার মানে সাকিব নিজেও নতুন করে তার ‘দ্বিতীয় বাড়িতে’ নতুন আশা দেখছেন, দেখাচ্ছেন!
যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড বাংলাদেশেরই, ২৮টি! এছাড়া টেস্ট খেলুড়ে অভিজ্ঞ দেশগুলোর মধ্যে এখনও সেমিফাইনাল অধরাই হয়ে আছে তাদের। তবে প্রতিটি আসরে যোগ্যতা অর্জন করে খেলা লাল-সবুজ দলটি সবসময় আশা জাগায়। এবার কী করবে তারই অপেক্ষা।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ‘ডি’ গ্রুপে রয়েছে। যেখানে নেপাল ছাড়াও তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কা। ৮ জুন ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে লাল-সবুজ দল।
সাকিব-শান্তরা নিজেদের সেরাটুকু যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে দেখাতে পারলে হয়তো নিরাশার চেয়ে আশাবাদী হওয়ারই সুযোগ আছে। এমনিতে সাম্প্রতিক ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি। নিচের দিক দিয়ে হয়েছে দ্বিতীয়। তাই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আরেকটি সংস্করণের ধুন্ধুমার ব্যাটিং-বোলিংয়ের বিশ্বকাপকে ঘিরে সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকবেই। সাকিব-মোস্তাফিজদের তাই যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কিছু একটা করে দেখাতে হবে। যেন ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাওয়া গভীর ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ লাগে। ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পারবে বাংলাদেশ?