X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

সাকিব-মিরাজের স্পিনে পাকিস্তানের ‘পেস দাম্ভিকতা’ ভেঙে চুরমার

স্পোর্টস ডেস্ক
২৫ আগস্ট ২০২৪, ২০:৪২আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ২২:৫৫

পাকিস্তানের পেস বিভাগকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা। নিজেদের ঘরের মাঠে যখন খেলা, আর পিচ কন্ডিশনও পেস বান্ধব তখন পেসারদের ওপর আস্থা আরও বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই তো দ্বিতীয়বারটি না ভেবেই বাংলাদেশের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের জন্য স্কোয়াডে থাকা একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার আবরার আহমেদকে বাদ দিয়েছিল তারা। স্পিনের শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব পড়ে আগা সালমানের কাঁধে।

পাকিস্তান যখন পেস নির্ভর একাদশ সাজিয়েছে, যেখানে পেসার চার জন- শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, খুররাম শেহজাদ ও মোহাম্মদ আলী, সেখানে তরুণ তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদের সঙ্গে অনভিজ্ঞ নাহিদ রানাকে নিয়ে বাংলাদেশের পেস বিভাগ। আর অলরাউন্ডার হিসেবে দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তানের পেস আক্রমণের বিপরীতে তিন পেসারের সঙ্গে দুজন বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে রাখায় হয়তো অনেকের মনে সংশয় জেগেছিল। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে সাকিব-মিরাজের বিবর্ণ বোলিং তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষে মুশফিকের মতো তারাও জয়ের অন্যতম নায়ক। 

এক কথায়, পাকিস্তানের পেস শক্তির দাম্ভিকতা ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার। শেষ দিনে পাকিস্তান ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামে। বাংলাদেশ তবুও স্বপ্ন দেখছিল ঐতিহাসিক জয়ের। এজন্য দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ার বিকল্প ছিল না তাদের সামনে। ১ উইকেটে ২৩ রানে দিনের খেলা শুরু করে তারা। শেষ দিন দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিরোধ গড়ে হয়তো ড্র করতে চেয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু সকালের সেশনে টপ অর্ডারে আঘাত করে বাংলাদেশ। শান মাসুদকে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে শুরুটা করেন হাসান মাহমুদ। আম্পায়ার আপিল প্রত্যাখ্যান করলে রিভিউ নিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ককে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠাতে হয়। 

সাকিব নেন তিন উইকেট

বাবর আজম তো দুই ইনিংসেই ডাক মারার পথে ছিলেন। শরিফুল ইসলামের বল তার ব্যাট ছুঁয়েছিল, কিন্তু বল ধরতে পারেননি লিটন। আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে বাবর যখন প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন, তখন নাহিদ তাকে ২২ রানে বোল্ড করেন। ৬৩ রানে ৩ উইকেটে হারানো পাকিস্তান তারপর সাকিব ও মিরাজের স্পিনে দুর্বিপাকে পড়ে। বাবরের বিদায়ের এক ওভার পর স্বাগতিকরা হারায় প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সৌদ শাকিলকে। চার বলে ডাক মারেন তিনি, সাকিবের বলে স্টাম্পড হন।

মোহাম্মদ রিজওয়ান দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন। শফিককে নিয়ে দলীয় স্কোর একশ পার করেন। পঞ্চম উইকেটের এই জুটি যখন থিতু হচ্ছিল, তখন সাকিব তাতে ছেদ ঘটান। বাঁহাতি স্পিনারের বল চার্জ করতে গিয়ে সাদমান ইসলামের ক্যাচ হন। তিন বল পর পাকিস্তান ১০৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায়, যখন সালমান মিরাজের বল নিক করে ফার্স্ট স্লিপে সাদমানের অসাধারণ ক্যাচ হন।

রিজওয়ান একপ্রান্ত আগলে রাখলেও তার কিছুই করার ছিল না, দ্রুত অষ্টম উইকেট হারায় পাকিস্তান। লাঞ্চের পর মিরাজের নিচু বলে শাহীন শাহ আফ্রিদি এলবিডব্লিউ হন। নাসিম শাহ সাকিবের বলে শর্ট মিড উইকেটে মুশফিকের ক্যাচে বিদায় নেন। 

বাংলাদেশের দুর্দান্ত স্পিনের বিরুদ্ধে শাহজাদকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে নিজের ৭০ বলে হাফ সেঞ্চুরি আদায় করে নেন রিজওয়ান। শাহজাদ বল বুঝেশুনে ক্রিজে টিকে থাকার লড়াই করে গেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে পানি পানের ছোট্ট বিরতির পর মিরাজ অ্যাঙ্গেল পাল্টে রিজওয়ানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান। বাংলাদেশি অফস্পিনার রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করেন, পাকিস্তানি ব্যাটার ঝুঁকি নিয়ে সুইপ করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন। মিরাজ তার চতুর্থ উইকেট নেন ১১ নম্বর ব্যাটার মোহাম্মদ আলীকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে।

শেষ দিনে পেস স্বর্গে স্পিনেই যে এভাবে ধরাশায়ী হতে হবে, পাকিস্তান সেটা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন ১৪৬ রানে গুটিয়ে গেলো। সাকিব ও মিরাজ সাতটি উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেছেন। সাকিব নেন তিনটি, চারটি মিরাজের। তাদের ঘূর্ণিতে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিয়ে ৩০ রানের লক্ষ্য সহজেই ছুঁয়েছে সফরকারীরা।

মিরাজ ফেরালেন রিজওয়ানকে

ম্যাচ শেষে পিচের অচেনা আচরণকে অজুহাত না দিলেও কিছুটা দায়ী করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক মাসুদ, ‘এটাকে অজুহাত হিসেবে কখনও দেখাতে চাই না। কিন্তু আমরা যেভাবে ভেবেছিলাম, সেভাবে এটা আচরণ করেনি। ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির আবহাওয়াই ধরুন, প্রথম দিনের খেলার ৮-৯ দিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল। পিচ নিয়ে প্রথম দেখায় আমরা আশা করেছিলাম, এটা আরও কার্যকরী হবে। তারা হয়তো তিন পেস বোলার নিয়ে সীমিত পারফর্ম করবে। কিন্তু দিন শেষে আমরা বুঝতে ভুল করেছি।’

১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এনিয়ে দ্বিতীয়বার হোম টেস্টে কোনও বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে ছাড়া খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান। আরেকবার তারা শুধু পেস আক্রমণ নিয়ে মাঠে নেমেছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, এই রাওয়ালপিন্ডিতে, যেটা ছিল ১০ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে প্রথম টেস্ট ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচের চতুর্থ দিন কোনও খেলাই হয়নি, বৃষ্টিতে ম্যাচ শেষ হয় ড্রতে।

এবার পাঁচ দিনের খেলায় চার পেসারের কৌশল কাজে লাগেনি। একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনারের শূন্যতা লুকাননি মাসুদ, ‘একজন স্পিনার সবসময় লাগে। সিডনিতে সাজিদ খান খেলেছিল, এই ম্যাচে চারজন পেসার নিয়ে খেলা কাজে আসেনি। ভিন্ন পিচ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল শিক্ষা, আমাদের নিজেদের কন্ডিশন থেকে কী প্রত্যাশা করতে হয়। কন্ডিশন বিবেচনা করা এবং এখানকার করা একই ভুল না করা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ।’ 

/এফএইচএম/
সম্পর্কিত
পাকিস্তানে সাফল্যের বোনাস পেলেন শান্ত-মুশফিকরা
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করায় ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন বড় অঙ্কের বোনাস
বাংলাদেশের কাছে হারের পর বিব্রত ওয়াসিম আকরাম
সর্বশেষ খবর
মুরাদনগরে নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা
মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশ-মরক্কোর নেতৃত্বমূলক ভূমিকা জোরদারে উপদেষ্টা আসিফের আহ্বান
মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশ-মরক্কোর নেতৃত্বমূলক ভূমিকা জোরদারে উপদেষ্টা আসিফের আহ্বান
ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার রায় আজ
ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার রায় আজ
মৌলভীবাজারের সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৮ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
মৌলভীবাজারের সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৮ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল