সমুদ্রঘেঁষা গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট। যা কিনা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (ডব্লিউটিসি) ২০২৫-২৭ নতুন চক্র। ঐতিহাসিক গলে মুখোমুখি হওয়ার আগে চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, আছে অনুপ্রেরণাও। ২০১৩ সালে এখানেই গাঁথা হয়েছিল লাল-সবুজের টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে গর্বিত স্মৃতি। ৬৩৮ রানের পাহাড়সম ইনিংসে প্রথমবারের মতো টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই স্মৃতি এখনও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। তবে লঙ্কান স্পিন আক্রমণে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশ দল ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত!
গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস।
গলের উইকেটের সঙ্গে স্পিনের বন্ধুত্ব আজও অটুট। এমন বন্ধুত্ব যে প্রথম দিন থেকেই স্পিনাররা পান বাড়তি সুবিধা। ম্যাচের তৃতীয় দিনেতো কথাই নেই। ব্যাটারদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় স্পিনারদের খেলা। তার মধ্যে লঙ্কান স্পিন বেশ ধারালো। স্পিন আক্রমণে আছেন আকিলা ধনাঞ্জয়া ও প্রভাত জয়সুরিয়া। অধিনায়ক ধনাঞ্জয়াও করতে পারেন অফ স্পিন। এছাড়া কামিন্দু মেন্ডিস দুই হাতেই বল করার সামর্থ্য রাখেন। স্পিন নির্ভর দলটিতে কাসুন রাজিথা আর আসিথা ফার্নেন্দোর ওপর থাকছে পেস আক্রমণের ভার। সবমিলিয়ে শেষ পাঁচ বছরে গলে ৩৭৩ উইকেট নিয়েছেন স্পিনাররা। এমন সুবিধা আর কোনও মাঠেই পায়নি। তাই বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য গলে থাকবে কঠিন চ্যালেঞ্জ!
সংবাদ সম্মেলনে গলের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, ‘আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ অবশ্যই থাকবে। তবে এই চ্যালেঞ্জটা আমরা উপভোগ করতে চাই। গলে ব্যাটিং করা কঠিন, বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে ভালো শুরুটা খুব জরুরি। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’
স্পিন আক্রমণে শ্রীলঙ্কার চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে না থাকলেও বাংলাদেশ দলে চিন্তার বিষয় মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে। জ্বরের কারণে একদিনও অনুশীলন করতে পারেননি মিরাজ। অনুশীলন ছাড়া গল টেস্ট যে খেলতে নামবে সেই সম্ভাবনাও কম। মিরাজকে নিয়ে স্পষ্ট করে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কিছুই বলা হয়নি। মিরাজ না থাকলে নিশ্চিতভাবেই বোলিং আক্রমণে ধার কিছুটা হলেও কমবে। মিরাজের বাইরে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল আছেন দলের সঙ্গে। এর পাশাপাশি আছেন বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ ও অফস্পিনার নাঈম ইসলাম। মিরাজ শেষ পর্যন্ত না খেলতে পারলে গল টেস্টের একাদশে এই দুইজনের দেখার সম্ভাবনা জোড়ালো থাকছে।
শান্ত অবশ্য এতো কিছু ভাবতে চান না। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রটা ভালো ভাবে শুরু করতে মুখিয়ে তিনি, ‘এই দল দিয়ে একটা নতুন চক্র শুরু হচ্ছে। যদি ভালো শুরু করতে পারি, তাহলে প্রতিদিন আমরা বুঝতে পারবো কী দরকার। এই দুটি টেস্টে আমরা কতটা ভালো খেলতে পারি, সেটাই আমার কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
এতো নেতিবাচক বিষয় থাকলেও বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে ২০১৩ সালের গল টেস্টের স্মৃতি। ২০১৩ সালে, এই গলেই ব্যাট হাতে দেশের হয়ে প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির পর মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৯০ রানের সেই ইনিংসটি এখনো এই মাঠে দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে। তাদের সঙ্গে নাসির হোসেনের সেঞ্চুরি (১০০) আর মুমিনুলে ফিফটিতে (৫৫) ভর করে দেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এক ইনিংসে ৬৩৮ রান করে বাংলাদেশ। গেলো এক যুগেও যা ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটারদের দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত টেস্টটি ড্র করে। ব্যাটারদের এমন পারফরম্যান্স পুরো দলের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। বিশেষ করে মুশফিকুর রহিম। লম্বা সময় ধরেই রানহীন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কথা মনে করে হয়তো কাল মুশফিকের ব্যাট আরও একবার জ্বলে উঠবে।
যদিও অধিনায়ক শান্ত এটিকে নতুন একটি ম্যাচ বিবেচনা করেই খেলতে নামতে চান, ‘প্রত্যেকটা সিরিজেই নতুন করে শুরু করতে হয়। অতীত অবশ্যই আত্মবিশ্বাস দেবে। আমার কিংবা মুশফিক ভাইয়ের এখানে ভালো স্মৃতি আছে। তবে আমার মনে হয় এখানেও আমাদের আবার নতুন করেই শুরু করতে হবে।’
তবে পুরনো কথাটা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন শান্ত। গলে ভালো করতে হলেও টপ অর্ডার ব্যাটারদের ভালো করার বিকল্প দেখেন না তিনি, ‘আমি বিশ্বাস করি ওপরের দিকে যারা ব্যাট করি, তারা একটা ভালো শুরু এনে দিতে পারবো। আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভালো শুরু করতে পারি সেটা দলের জন্যও ভালো হবে। যেরকম দল এবার পেয়েছি, আমরা যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।’
এদিকে, বাংলাদেশের বিপক্ষে গল টেস্ট খেলে অবসরে যাবেন, সেই ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। দীর্ঘ ১৬ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষটা স্মরণীয় করতে নিশ্চিতভাবেই চাইবেন তিনি। তারকা এই অলরাউন্ডারের বিদায়টা রাঙাতে চাইবেন তার সতীর্থরাও। সংবাদ সম্মেলনের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছিল অতীত এবং স্মৃতিচারণ। গল টেস্ট নিয়ে খুব কমই ছিল প্রশ্ন। এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথুজ বলেছেন, ‘শেষ টেস্টটা অবশ্যই জিততে চাই। আশা করি খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো। যেখানে শুরু করেছিলাম, সেখানে শেষটা করতে পেরে দারুণ লাগছে।’
শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কানরা বরাবরই সিংহ। বাংলাদেশ দল সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠের চেয়ে ঘরের বাইরে দারুণ খেলছে। গত চক্রে বিদেশের মাটিতে দাপট দেখানো বাংলাদেশ ২০১৩ সালের স্মৃতি নিশ্চিত ভাবেই ফিরিয়ে আনতে চাইবে। সেটি করতে পারলে গলের ঐতিহাসিক ভেন্যুটিতে জমে উঠবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লড়াই! সেই অপেক্ষাতেই গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।