বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলে তারা ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাব দেন। কোনও সেঞ্চুরি কিংবা মাইলফলকে উচ্ছ্বাসও থাকে মাত্রাতিরিক্ত! কখনও কখনও তাদের সেসব উচ্ছ্বাসে থাকে ক্ষোভ-অভিমানের জবাব। দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত গলে উচ্ছ্বাস করেছেন, তাতে কোন ক্ষোভ অভিমান ছিল কিনা জানা যায়নি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে যেভাবে ব্যক্তিগত মাইলফলক ছুঁয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, সেটি ছিল ভীষণরকম দৃষ্টিকটূ! ব্যক্তিগত অর্জন দলীর সাফল্যকে তরান্বিত করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দিন শেষে ভাবনাতো দল কেন্দ্রীক হতে হবে। অধিনায়ক শান্তর সেই ঘাটতিটা আজ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।
গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টটিতে বৃষ্টির প্রভাব ছিল। পাঁচদিনে অন্তত দুই সেশনের বেশি নষ্ট হয়েছে। তবু জয়ের সুযোগ নিতে পারতো শান্তরা। সেই সুযোগটি নেননি বলেই শান্তকে নিয়ে হচ্ছে প্রবল সমালোচনা। ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্য খেলতে গিয়ে শান্ত-মুশফিক দলের কথা, ভক্তদের কথা অনেক সময়ই ভুলে যাচ্ছেন।
গলে মুশফিকুর রহিম ও অধিনায়ক শান্তর প্রথম ইনিংসে করা জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৪৯৫ রানের বড় সংগ্রহ করে। মাঝারি মানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে লঙ্কানরা দারুণ শুরু পায়। যদিও ম্যাচের চতুর্থ দিন সকালে অফস্পিনার নাঈম হাসানের ঘূর্ণিতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ, পায় ১০ রানের লিড। চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে দিন শেষে করে সফরকারীরা। ১৮৭ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে জেতার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। জয় তুলে নেওয়া কঠিন হলেও জেতার চ্যালেঞ্জটা নিতে পারতো বাংলাদেশ। সবার প্রত্যাশা ছিলো আজ (শনিবার) প্রথম এক/দেড় ঘণ্টায় ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ২৫০ কিংবা ২৭০ রানের লক্ষ্য দিয়ে লঙ্কানদের লাঞ্চের আগেই ব্যাটিংয়ে পাঠাবে!
কিন্তু বাস্তব মিললো অন্য কিছু! অভিজ্ঞ মুশফিক ও শান্ত ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্য খেললেন! মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে গিয়ে রান আউট হলেন। শান্ত নিজের সেঞ্চুরির জন্য খেলতে গিয়ে পরে করলেন স্লো ব্যাটিং। শান্তর এই সেঞ্চুরিতে ক্ষতিটা হলো বাংলাদেশেরই! বৃষ্টির কারণে এমনিতেই সময় কমে গেছে। তার মধ্যে বৃষ্টি কমার পরও অধিনায়ক শান্ত ইনিংস ঘোষণা করলেন না। যা ছিল অনেকের চোখে বিস্ময়কর। শান্ত ধীরস্থিরভাবে ১৯০ বল খেলে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। এরপরের ৯ বলে করলেন ২৫! অথচ এই ব্যাটিংটাই মুশফিক ও শান্ত সকালে করতে পারলে অনায়াসেই আগেভাগে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠানো যেত। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিকতাই যে আলাদা। এমন একটি ম্যাচ জয়ের চেষ্টাও না করার দায় অধিনায়ক শান্ত কোনওভাবেই এড়াতে পারবেন না। এর আগে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ মেলানোর চেষ্টাও করেননি ক্রিকেটাররা। শুধু এক –দুইটা ঘটনাই নয়, এমন বহু ঘটনাই আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
শান্ত হয়তো সেঞ্চুরি করলেন। টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করে বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেটারদের কাতারে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু এটাতো কেবল স্রেফ একটি ব্যক্তিগত অর্জন হয়েই থাকলো। অথচ ম্যাচের যা অবস্থা ছিল তাতে করে লাঞ্চের পর নিজেদের ব্যাটিংয়ে নামার প্রয়োজনই ছিল না। তবু কেবল ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্যই নামলেন তিনি। সেঞ্চুরি করে দলের স্কোরকে নিয়ে গেলেন ২৮৫ রানে। শ্রীলঙ্কা পায় ২৯৬ রানের লক্ষ্য। ততক্ষণে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। তবু শ্রীলঙ্কা মাটি কামড়ে ৩২ ওভার ব্যাটিং করে ৪ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৭২ রান। ম্যাচটা যদিও আরও কিছুক্ষণ চলতে পারতো, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে দুই দলই ড্র মেনে নেয়। অথচ বাংলাদেশ দল ঘণ্টা খানেক বেশি সময় পেলে গল টেস্টের ফলাফলটা ভিন্নরকম হতে পারতো।
তাতে এই যে বাংলাদেশ দল গল টেস্ট জেতার চেষ্টা করলো না, সেই দায়টা অধিনায়ক হিসেবে শান্তকে পুরোপুরিই নিতে হবে। এমনিতেই দেশের ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সমর্থকদের অনেকে। তার মধ্যে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণের জায়গা হয়ে যাচ্ছে জাতীয় দল। এভাবে চলতে থাকলে, ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বেই। আর এটি হলে ক্ষতিটা আদতে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের।