চলতি প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচে নুরুল হাসান সোহান করেছেন ৫১২ রান। যেখানে দুটি সেঞ্চুরি ছাড়াও ছিল দুটি হাফসেঞ্চুরি। ব্যাটিং গড় ৫৮ এবং স্ট্রাইকরেট ৯৩.৫৪। এমন পারফরম্যান্সের পরও শ্রীলঙ্কা সিরিজের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি তার। ধারণা করা হচ্ছিল মুশফিকুর রহিমের অবসরের পর তার জায়গাতে সোহান আসবেন। কিন্তু নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন লিটন দাসের ওপর। অথচ লিটনের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভীষণ হতাশজনক। শেষ ৮টি ওয়ানডেতে মাত্র ৩৫ রান এসেছে ব্যাট থেকে। অপর দিকে, গতকাল লাল ও সবুজ দলে ভাগ হয়ে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেছেন সোহান। তাতে কি নির্বাচকদের কোনও বার্তা দিয়ে রাখলেন?
সোমবার যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দল ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন চট্টগ্রামে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সোহান। ওই ম্যাচে শেষ অব্দি ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। এমন ভালো ইনিংসের পর নিশ্চিতভাবেই আফসোসে পুড়ছেন তার ভক্তরা। সোহান নিজেও হতাশ। ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমকে সোহান বলেছেন, ‘ওয়ানডে সবশেষ যখন খেলেছি, তখন হয়তো ভালোভাবে শেষ করেছিলাম। যদি নিয়মিত হতে পারতাম, তাহলে হয়তো ক্যারিয়ারটা অন্যরকম এক জায়গায় থাকতো। অবশ্যই সেখানে আক্ষেপ আছে। সেখানে সুযোগটা হয়তো কাজে লাগাতে পারিনি। সব সময় জাতীয় দলে খেলাকে প্রাধান্য দিয়েছি। জাতীয় দলের জন্য খেলতে চাই, যখন সেই স্বপ্নটা থাকবে না, হয়তো ক্রিকেটটাই খেলবো না।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করলেও ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে জাতীয় দলে ফেরার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে সোহানের। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি দারুণ করছেন। তার নেতৃত্বেই গত বছর গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর রাইডার্স। বিপিএলেও খেলেছেন দুর্দান্ত। আর লিস্ট ‘এ’ সংস্করণের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ২০২৩-২৪, ২০২৪-২৫—দুই মৌসুমে সোহান করেছেন ৪৯৫ ও ৫২২ রান। সোহানকে দলে না নেওয়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, ‘সোহানের ব্যাপারটা হচ্ছে, তিনি আমাদের বিবেচনায় আছেন। কিন্তু একই দলে আমরা এই পজিশনে একাধিক উইকেটকিপার নিতে পারি না।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সুযোগ না পাওয়া সোহান চট্টগ্রামে প্রস্তুতি ম্যাচে ৭০ বলে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। সবুজ দলের বিপক্ষে গতকাল তিনি ৫০ ওভারের ম্যাচে খেলেছেন লাল দলের হয়ে। ৯৭ রানের ইনিংসটা কি তবে আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘এই ইনিংসটা দিয়ে তো আক্ষেপের কিছু না। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে ৫০ ওভারের ম্যাচে ভালো যাচ্ছে। যে মৌসুমগুলো ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি, সেই মৌসুমগুলো ভালো যাচ্ছে। আমি নিজেকে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করছি।’
সোহানের কাছে জাতীয় দলের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দল আমার কাছে প্রাধান্যের জায়গায় সবার ওপরে। পাশাপাশি রংপুরের একটা ম্যাচও আছে জিএসএলে। এখানে (বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ) সুযোগ মেলেনি, সেখানে (জিএসএল) হয়তো খেলতে পারি। যেটা বললাম যে জাতীয় দলে খেলার আশা বা স্বপ্ন যখন থাকবে না, তখন আর ক্রিকেট খেলবো না।’
চলতি বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা হয়নি লিটনের। সেই তিনি ওয়ানডে দলে ফিরে এসেছেন। দল থেকে বাদ পড়ার পর সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তিনি খেলেছিলেন গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। সেখানে ৬ ইনিংসে করেছেন ২৩৭ রান, ফিফটি আছে ২টি, সেঞ্চুরি একটিও নেই। সর্বশেষ খেলা ৮ ওয়ানডেতে তার রান ৩৫। লিপু মনে করেন, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির দুটি ইনিংসেই লিটন বদলে গেছেন! সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ৪৮ রানের ইনিংস, গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে একটা ৯০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। আর তাতেই নির্বাচক প্যানেলের মনে হয়েছে, তার বাজে সময়টা কেটে গেছে।
এ ব্যাপারে লিপুর যুক্তি ছিল, ‘শেষ সিরিজে লিটন দাস ছিলেন না। আপনারা জানেন, সে সময় তিনি একটু খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা সময় তিনি ছিলেন আমাদের সেরা ফিনিশারদের একজন। সেই কারণে এবং তিনি এখন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কও হয়েছেন।’