দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞের ২১তম আসর। তার আগের প্রতিযোগিতাটিগুলো কেমন ছিল, কারাই বা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল- ফুটবল উৎসবের বানে ভেসে যাওয়ার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেখানে-
প্রথম বিশ্বকাপেই ফাইনাল, কিন্তু শিরোপা জিততে আর্জেন্টিনাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৮ বছর। উরুগুয়ের বিপক্ষে ১৯৩০ সালের ফাইনাল হারের পর আরেকটি ফাইনাল খেলতে লম্বা সময় অপেক্ষায় ছিল তারা। মাঝে কয়েকটি বিশ্বকাপ বয়কট ও বাজে পারফরম্যান্সে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে সফল ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে।
ফুটবল মহাযজ্ঞের ১১তম আসর বসেছিল লাতিন আমেরিকার দেশটিতে। ১ থেকে ২৫ জুনের ওই আসরের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। রিভার প্লেটের ঘরের মাঠ স্তাদিও মনুমেন্তালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ফাইনাল জিতে পঞ্চম আয়োজক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতে আলবিসেলেস্তেরা। তাদের আগে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ জিতেছিল উরুগুয়ে, ইতালি, ইংল্যান্ড ও পশ্চিম জার্মানি।
১৬ দলের শেষ বিশ্বকাপ ছিল আর্জেন্টিনায়। ওই আসর পর্যন্ত ১৫ দলের সঙ্গে স্বাগতিকরা অংশ নিতো ফুটবল মহাযজ্ঞে।
অন্য চোখে: ইরান ও তিউনিশিয়া প্রথমবার সুযোগ পায় বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনার ওই আসরেই ফল নিষ্পত্তির জন্য ফিফা প্রথমবার চালু করে পেনাল্টি শুট-আউট।
একনজরে:
আয়োজক: আর্জেন্টিনা
মোট দল: ১৬
ভেন্যু: ৬
চ্যাম্পিয়ন: আর্জেন্টিনা
রানার্স-আপ: নেদারল্যান্ডস
মোট ম্যাচ: ৩৮
মোট গোল: ১০২
সর্বোচ্চ গোলদাতা: মারিও কেম্পেস (আর্জেন্টিনা), ৬ গোল।
সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়: আন্তোনিও কাব্রিনি (ইতালি)।
ফরম্যাট:
আগের বিশ্বকাপের ফরম্যাটেই হয়েছে ১৯৭৮ সালের আসর। ১৬ দল চার গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে রবিন রাউন্ড। এরপর চার গ্রুপ থেকে আসা আট দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে দ্বিতীয় রাউন্ড। ওই দুই গ্রুপের শীর্ষ দুই দল জায়গা পায় ফাইনালে, আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই দল মুখোমুখি হয় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে। আর্জেন্টিনার এই আসর দিয়েই ফিফা প্রথমবার শুরু করে পেনাল্টি শুট-আউট।
গ্রুপ পর্ব:
দ্বিতীয় হয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছিল আর্জেন্টিনা। গ্রুপ ‘১’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যায় ইতালি। গ্রুপ ‘২’ থেকে পরের রাউন্ডে যায় পোল্যান্ড ও জার্মানি। গ্রুপ ‘৩’ থেকে সুযোগ পায় অস্ট্রিয়া ও ব্রাজিল। আর গ্রুপ ‘৪’ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে পেরু ও নেদারল্যান্ডস।
দ্বিতীয় রাউন্ড:
নেদারল্যান্ডস প্রথম রাউন্ডে মাত্র একটি ম্যাচ জিতলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ঘুরে দাঁড়ায়। ৩ ম্যাচে ২ জয় ও এক ড্রতে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করে ডাচরা। অস্ট্রিয়াকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে শুরু করে দ্বিতীয় রাউন্ড, এরপর পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে ২-২ গোলে ড্রয়ের পর ইতালিকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পায় নেদারল্যান্ডস।
ফাইনালে যাওয়ার পথে দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে হারায় পোল্যান্ডকে। পরের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র। আর শেষ ম্যাচে পেরুকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে ১৯৩০ সালের পর আবারও ওঠে ফাইনালে।
ফাইনাল:
আগের বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় নেদারল্যান্ডসের। ১৯৭৮ সালে তাই আবারও আশায় বুক বাঁধে ডাচরা। যদিও বুয়েনস এইরেসের এস্তাদিও মনুমেন্তালে আরেকটি হতাশার অধ্যায় যোগ হয় তাদের ইতিহাসে। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ফাইনাল আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে জিতে নিয়ে প্রথমবারের মতো করে শিরোপা উদযাপন।
মারিও কেম্পেসের লক্ষ্যভেদে ৩৮ মিনিটে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। ওই গোলেই শিরোপার স্বপ্ন উজ্জ্বল হয়েছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু ৮২ মিনিটে ডিক নানিঙ্গা জাল খুঁজে পেলে সমতায় ফেরে নেদারল্যান্ডস। নির্ধারিত সময় ১-১ ব্যবধানে শেষ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে আর্জেন্টিনা আরও দুই গোল করে ৩-১ ব্যবধানে জেতে বিশ্বকাপ।
দুর্দান্ত কেম্পেস ১০৫ মিনিটে করেন নিজের ও দলে হয়ে দ্বিতীয় গোল। আর ১১৫ মিনিটে ডাচদের স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দেন দানিয়েল বেরতোনি লক্ষ্যভেদ করে।