সাফে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জমজমাট ম্যাচ উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হওয়ায় পরে তা আক্ষেপ হয়েই থেকেছে। বেশ কয়েকবার আক্রমণে গেলেও কুয়েতের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালের দুই অর্ধে স্কোর লাইন ছিল গোলশূন্য। নির্ধারিত সময়ের খেলায় ব্যবধান গড়তে পারেনি কেউ। ফলে খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেই বাংলাদেশ গোল হজম করে ১-০ তে পিছিয়ে পড়েছে।
অতিরিক্ত সময়ে পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ দলে। হৃদয়ের জায়গায় নেমেছেন মজিবর রহমান জনি। দুই অর্ধে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখার কৃতিত্ব আনিসুর রহমান জিকোর। অতিরিক্ত সময়েও বীরত্ব দেখান তিনি। ৯৯ মিনিটে কুয়েত গোলের সুযোগ তৈরি করলেও দুই দফা আল রশিদির শট অতিমানবীয়ভাবে ফিরিয়ে দেন জিকো। তবে ১০৭ মিনিটে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। আল বাউসি বক্সে ঢুকে নিঁখুত শটে গোল করে কুয়েতকে এগিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য এই গোলের সময় সামনে তপু বর্মণ থাকায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন জিকো। বলটি তপুর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে আল বাউসি জালে পাঠিয়েছেন। জিকো মনে করেছিলেন তপু হয়তো বলটি ক্লিয়ার করবেন।
দ্বিতীয়ার্ধেও গোল পায়নি কেউ
বিরতির পর শুরুতে কুয়েত ফ্রি-কিক ও কর্নার থেকে গোল করার চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয়নি। ৫৪ মিনিটে বরং চমক দেখানোর চেষ্টা করেছেন রাকিব। কিন্তু তার নেওয়া বাঁ পায়ের বুলেট গতির শট অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেছে।
৬১ মিনিটে আবারও ত্রাস ছড়ান রাকিব। মোরসালিনের রক্ষণ চেরা পাসে আগের ম্যাচের মতো বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন। কিন্তু এই উইঙ্গারের শট ক্রস বারে লেগে প্রতিহত হলে আবারও হতাশ হতে হয় তাদের । ৬৩ মিনিটে কুয়েতের একটি ফ্রি-কিক প্রতিহত করেন জিকো। একটু পর আবারও গোলের চেষ্টা করে কুয়েত । কিন্তু আল রশিদির শট সেভ করেন জিকো।
দ্বিতীয় মিনিটে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো-ইন থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে রাকিবের নিচু ক্রস বক্সে পেয়েছিলেন মোরসালিন। কিন্তু প্রথম দফায় ফাঁকায় গোলকিপারের গায়ে মেরে প্রথম সুযোগটি নষ্ট করেছেন তিনি। ফিরতি বল দ্বিতীয় দফায় কাছে পেলেও তা ঠিকমতো আয়ত্তে নিতে পারেননি।
৭ মিনিটে কুয়েত তাদের প্রথম সুযোগটি পায়। কর্নার থেকে মুহাইসিনের হেড ডিফেন্ডার ইসা ফয়সাল প্রায় গোললাইন থেকে প্রতিহত করে বাংলাদেশ দলকে ম্যাচে রেখেছেন। তার পর চাপ বাড়াতে থাকে কুয়েত। বাংলাদেশকে বক্সের মধ্যে ঢুকতেই দিচ্ছিল না। তাই গোলকিপারকে অপ্রস্তুত করার কৌশল নেন রাকিব। ২৮ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলকিপার জায়গা থেকে একটু সরে এসে তালুবন্দি করেছেন তা।
২৯ মিনিটে আল রশিদির সরাসরি ক্রস গোলকিপার জিকো হাত উঁচিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন। সামনে থেকে ইসা ফয়সালও বিপদমুক্ত করেন বল। তবে রাকিব বার বার ত্রাস ছড়ানো অব্যাহত রাখেন। ৩১ মিনিটে মোরসালিনের বাঁ প্রান্তের ক্রসে রাকিব আবার শট নিতে গেলে এর আগেই ক্লিয়ার করে দেন কুয়েতের ডিফেন্ডার।
৪০ মিনিটে সুযোগ তৈরির চেষ্টায় ছিল কুয়েত। বক্সের বাইরে থেকে কুয়েতের আল রশিদির বাঁ পায়ের জোরালো নিচু শট গোলকিপার জিকো ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে গোল হজম করা থেকে রক্ষা করেছেন।
একাদশে ফিরেছেন তাকির কাজী
আজ সেমিফাইনালে একাদশে ফিরেছেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজী। তারিক না থাকায় ভুটান ম্যাচে রহমত মিয়া খেলেছিলেন। আজকে তারিক চলে আসায় রহমতের জায়গা হয়েছে বেঞ্চে। এছাড়া আগের ম্যাচে খেলা ১০ জনই একাদশে রয়েছেন।
আজও সম্ভাব্য ৪-৪-২ ছকে খেলছে বাংলাদেশ। এই ছকে সফলতা আসায় কোচ হাভিয়ের কাবরেরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কুয়েতের বিপক্ষে আগের দু’বারের দেখায় বাংলাদেশ জিততে পারেনি। হেরেছে দু’বারই। তবে আজ আরব দেশটির বিপক্ষে জেতার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ মাঠে নামতে যাচ্ছে। জিততে পারলে ২০০৫ সাফের পর আবারও ফাইনালে উঠার সুযোগ পাবে লাল সবুজ দল।
বাংলাদেশ একাদশ:
আনিসুর রহমান জিকো, জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মণ, মোহাম্মদ হৃদয়, রাকিব হোসেন, শেখ মোরসালিন, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, মোহাম্মদ সোহেল রানা, সোহেল রানা ও ঈসা ফয়সাল।