মাত্র এক বছর বয়সী আরহাম ইসলামকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান আরিফুল ইসলাম ও নুসরাত শাহ নাজ দম্পতি। বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও শিকড় কিন্তু ভোলেননি। নিয়মিত যোগাযোগ ছাড়াও বড় ছেলে আরহামকে ঠিকই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাই তো মাত্র ১৭ বছর বয়সে শিকড়ের টানে আরহাম এখন লাল-সবুজ দলে এসে জায়গা করে নিয়েছেন। এই ফরোয়ার্ড খেলতে যাচ্ছেন কম্বোডিয়াতে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার মনোরম আবহাওয়া ছেড়ে ঢাকার প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতায় নিজেকে ঠিকই কদিনে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন আরহাম। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের ডরমেটরিতে থেকে রাতে ট্রাক ও বাসের প্রচণ্ড শব্দের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। শুরুতে গরমে ও অন্য সব কিছুতে বেশ কষ্ট হলেও মনোবল হারাননি। দৃঢ় মনোবল রেখে সাইফুল বারী টিটুর ‘গুড বুকে’ জায়গা করে নিয়েছেন।
ছেলের এমন সুযোগ প্রাপ্তিতে বুয়েট থেকে পাস করা বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম উচ্ছ্বসিত। আজই ছেলের সঙ্গে একই ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাচ্ছেন। ছেলে যাবেন কম্বোডিয়াতে খেলতে। আর বাবা অস্ট্রেলিয়া। বাংলা ট্রিবিউনকে আরিফুল নিজের উচ্ছ্বাস লুকাননি, ‘আসলে আরহাম ছেলেবেলা থেকে প্রচণ্ড খেলাধুলাপ্রেমী। সব খেলা খেলেছে। এরমধ্যে ফুটবলকে একপর্যায়ে বেছে নিয়েছে। ও ফুটবল খেলে যে আনন্দ পায়, তা বলার মতো নয়। ওটা দেখে আমরা খুশি। আমরা চাই ধীরে ধীরে লাল-সবুজ দেশের জন্য খেলুক। ওর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাক।’
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন ইউনাইটেড অনূর্ধ্ব-১৮ দলের খেলোয়াড় থেকে এখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে খেলার অপেক্ষায় আরহাম। বসুন্ধরা কিংস মাঠে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়ে কম্বোডিয়া যাওয়ার আগে আরহাম বললেন, “আমি ৬ বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে খেলে বড় হয়েছি। আমার ইচ্ছা ফুটবল খেলে যাবো। বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে পারলে অনেক ভালো লাগবে। আর ওয়েস্টার্ন ইউনাইটেডের কোচ তো বলেই দিয়েছেন, ‘নিজের মাতৃভূমির জন্য খেলবে, নিজের সর্বোচ্চটা দিতে হবে। নিজেকে উজাড় করে দেবে।’ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ প্রতিযোগিতা আমাকে ফুটবলার হয়ে উঠতে দারুণ সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন। কারণ, এই প্রতিযোগিতা আমার অভিজ্ঞতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।”
কমলাপুর স্টেডিয়ামে ক্যাম্প হয়েছে। রাতে থাকা ও সতীর্থদের নিয়ে অভিজ্ঞতাও বেশ ইতিবাচক বললেন আরহাম, ‘আমার অন্য টিমমেটরা তো ওখানেই থাকে। আমি আলাদা কেউ তো না। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে আমি খেলবো, দলের ক্যাম্প ওখানে, আমার যদি কোনও অসুবিধাও হয়, মানিয়ে নিতেই হবে। না হলে আমি এলাম কেন এখানে? আমার টিমমেটরা সবাই এত ভালো, এত ফ্রেন্ডলি, আমার সব সমস্যা ওরাই সমাধান করে দেয়। তবে যে এলাকাটায় ক্যাম্প, ওখানে অনেক আওয়াজ আর একটু কোলাহলপূর্ণ। এছাড়া কম্বোডিয়াতে শুনেছি গরম। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকবে।’
বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কোনও ধারণা নেই মেলবোর্ন প্রবাসী ফুটবলারের। তবে এখন অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছেন। তার কথায়, ‘একেবারেই ধারণা ছিল না। এখন ধারণা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল উন্নতির চেষ্টা করছে। আমি আসলে বাংলাদেশের কোনও ফুটবলারকে সেভাবে চেনার সুযোগ পাইনি।’
আরহামকে বাবা ও মা ছাড়াও খেলতে বেশ উৎসাহ দেন একমাত্র ছোট ভাই ৯ বছর বয়সী আদিয়ান ইসলাম। তার সঙ্গেই ফুটবল নিয়ে বেশি সময় কাটে তার। তবে পরিবার বা আরহাম যতই আশাবাদী হোন না কেন কোচ সাইফুল বারী টিটু কিন্তু সাবধানী, ‘আরহামের মধ্যে একজন ফুটবলার হওয়ার তীব্র ইচ্ছা আছে। টেকননিক্যালি ভালো ও। ওর পজিশনে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে ভালো করবে। তবে এখনই মাতামাতি কিছু করার নেই। প্র্যাকটিস ম্যাচ ও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ওকে আগে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।’