X
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

‘বাংলাদেশ দলে কেউ মার্টিনেজের মতো পারফরম্যান্স করে দেখাচ্ছে না’

তানজীম আহমেদ
০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:০৭আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৩:৪৪

নাম তার আনিসুর রহমান জিকো। সমর্থকরা তাকে বাংলার ‘বাজপাখী’ হিসেবেও চেনে। ২০২০ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ২৯টি ম্যাচ খেলেছেন। একসময়ে তেকাঠির নিচে বড় ভরসা ২৭ বছর বয়সী গোলকিপারের জীবন ওলট-পালট হয়ে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায়। এক বছর আগের সেই নেতিবাচক ঘটনার পর ‘এখনও ধুঁকছেন’ এক সময়ের এই অটোমেটিক চয়েজ। এখন কঠোর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন হারানো জায়গা ফিরে পেতে। মার্চের পর আবারও জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। মালদ্বীপের বিপক্ষে দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচে খুব করে চাইছেন একাদশে জায়গা করে নিতে।  তবে সেটা যে কঠিন তা মানছেন। নিজের ফেলে আসা ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন জিকো-

বাংলা ট্রিবিউন: মার্চে সবশেষ ফিলিস্তিনের বিপক্ষে দলে ছিলেন। এরপর দুটো ফিফা উইন্ডোতে ছিলেন বাইরে। নতুন করে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে কী ভাবছেন...

আনিসুর রহমান জিকো: জাতীয় দলে খেলতে পারলে কিংবা ডাক পেলে তো অনেক ভালো লাগে। মার্চে চোটের পর আর জায়গা পায়নি। এখন আমি খেলার জন্য পুরো ফিট। একাদশে জায়গা নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও রয়েছে। সেই প্রত্যাশা নিয়ে আবাসিক ক্যাম্পে যোগ দিতে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: একাদশে জায়গা নেওয়ার কথা বলছেন। তেকাঠির নিচে তো আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী এখন অনেক...

আনিসুর রহমান জিকো: তা জানি। তবে আমি তো প্রস্তুত। সবার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জায়গা করে নিতে চাই। আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশ দলে কেউ এমিলিয়ানো মার্টিনেজের মতো পারফরম্যান্স করে দেখাচ্ছে না। কিংবা পারফরমার নেই। থাকলে হয়তো তখন আমি ডাক পেতাম না। খেলার সুযোগও পাবো না। অন্য সবার পারফর্ম্যান্স গড়পড়তায় একই।

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু শুরু থেকে যে জিকোকে আমরা দেখে আসছি এখনও কি তেমনটাই আছে। মানে বলতে চাইছি সেই ‘বাজপাখী’র মতো পারফরম্যান্স আছে কিনা…

আনিসুর রহমান জিকো: থাকবে না কেন। আপনারা বা সমর্থকরা শুরু থেকে আমার পারফরম্যান্স দেখে আসছেন। এর কারণ হলো আমি তখন নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতাম।  তাই পারফরম্যান্স দেখাতে পেরেছিলাম। এখন তো সেই সুযোগ হচ্ছে না।  না খেলতে পারলে দেখবেন কীভাবে?

বাংলা ট্রিবিউন: গত বছরের অক্টোবরে এএফসি কাপ থেকে দেশে ফেরার সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আপনার ক্যারিয়ারে ওলট পালট হয়ে যায়। নিষেধাজ্ঞার শাস্তিও পেতে হয়েছে। সেই থেকে এখনও আপনি নিজের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন আগের জায়গায় ফিরতে। কারও অনুপস্থিতে তো জায়গা খালি থাকে না। কেউ না কেউ নিয়ে নেয়...

জাতীয় দলের জার্সিতে জিকো। আনিসুর রহমান জিকো: আমি আসলে এখনও অনুতপ্ত। ভুল মানুষ করে। না বুঝে করে ফেলেছিলাম।  এখনও আমার কাছে তা মনে হয়। তবে হ্যাঁ আমার জায়গায় যারা খেলছে তারা যদি সাধ্যের বাইরে গিয়ে ভালো খেলা দেখাতে পারতো তাহলে আমার কিছু বলার প্রয়োজন পড়তো না। সম্মান রেখে বলছি সবার পারফরম্যান্স দেখলে দেখতে পাবেন  এক্সট্রা অর্ডিনারি কেউ নেই। তাই আমি আবারও বলছি মার্টিনেজের মতো পারফরম্যান্স করতে পারলে কোনও কথাই ছিল না।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে জাতীয় দলে কেন এখনও  আপনি আগের মতো অটোমেটিক চয়েজ নন..
আনিসুর রহমান জিকো: সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে এটা বলতে পারি আমাকে খেলার সুযোগ দিলে আগের মতো পারফরম্যান্স করে দেখাতে পারবো। এই আত্ববিশ্বাস এখনও আমার আছে। এখন খেলতে না পারলে আপনি বিচার করবেন কীভাবে..

বাংলা ট্রিবিউন : হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে ভারতে অনুষ্ঠিত সাফে সেরা গোলকিপার হলেন। তারপর থেকে আপনি অনেকটাই ব্রাত্য। স্প্যানিশ কোচ তো আপনাকে চেনে জানে। এবার কেমন মনে হচ্ছে..

আনিসুর রহমান জিকো: এবার আমি এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে দুটি ম্যাচ খেলেছি। কেমন পারফরম্যান্স করেছি তা সবাই দেখেছে। এছাড়া ঢাকায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। আমার মনে হয় সেভাবে কোনও সমস্যা হয়নি। এখন মালদ্বীপের বিপক্ষে একাদশে থাকতে পারলে তখন নিজের আগের পারফরম্যান্সও দেখানোর সুযোগ থাকবে। আমি আশাবাদী অনুশীলনে সেরাটা দিয়ে একাদশে থাকতে পারবো। সেই আশা নিয়ে আবাসিক ক্যাম্পে যোগ দিতে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কথা বলছেন। সেখানে তো বসুন্ধরা কিংস শূন্য পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরেছে।  এমন কি ভুটানের ক্লাবের কাছে হেরেছে। যা আগে কোনও দল হারেনি। কেন এমন খারাপ ফল হলো?

আনিসুর রহমান জিকো: এবার চোট ও ভালো বিদেশি খেলোয়াড়ের অভাবে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। তাছাড়া গোলের অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম, মিস হয়েছে। আমাদের ভাগ্য এবার সহায় হয়নি। তাই কোনও ম্যাচ জিততে পারিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: আবার আপনার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসি। মাঝে আপনি মনোবিদের শরণাপন্নও হয়েছিলেন। কেন?
আনিসুর রহমান জিকো:  হ্যাঁ, হয়েছিলাম নিজের উন্নতির জন্য। মনোবিদের কাছে গিয়ে অনেক উপকার হয়েছিল।  আমি মনে করে এটার প্রয়োজন আছে। অনেক সময় মনোবিদের কাছে গেলে জীবনের অনেক দিক নিয়ে উন্নতির ছোঁয়া থাকে।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের মেয়েরা টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতেছে। তাদের নিয়ে তো দেশে অনেক উচ্ছ্বাস বইছে।  নিশ্চয়ই তা দেখছেন। আপনাদের নিয়ে কবে এমনটি হবে? এমন স্বপ্ন অদূর ভবিষ্যতে দেখেন কিনা…

আনিসুর রহমান জিকো: মেয়েরা দুবার ট্রফি জিতেছে। এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। আমাদের মেয়েরা অনেক উন্নতি করেছে তারই প্রমাণ এটা। আমরাও গতবার বেঙ্গালুরুর সাফে সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে হেরে যাই। তা নাহলে হয়তো ফাইনালে খেলার সুযোগ থাকতো। তবে আমরাও স্বপ্ন দেখি ২০০৩ এর পর আবারও হয়তো একসময় শিরোপা জিতবো। আমাদের নিয়ে হইচই হবে। আমরাও পাবো ছাদখোলা সংবর্ধনা! সেই আশা নিয়ে এখনও আছি।

বাংলা ট্রিবিউন: মাঠের প্রসঙ্গে আসি। মালদ্বীপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ, কী ভাবছেন?

আনিসুর রহমান জিকো: মালদ্বীপকে ঘরের মাঠে হারাতে চাই। সেই শক্তি আমাদের আছে। তাদের হারাতে পারলে তখন এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ড্রয়ের আগে র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হবে। পরের বছর এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলা ট্রিবিউন: শেষ প্রশ্ন। নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে আপনি কাবরোর দলে তৃতীয় গোলকিপার হয়ে ফিরেছিলেন। মাঝে চোটের কারণে ছিলেন না।  এবার একাদশের খেলার  চাপ নিতে আপনি প্রস্তুত?

আনিসুর রহমান জিকো: হ্যাঁ, আমি শতভাগ প্রস্তুত। আমি মনে করি আগের সেই জিকোকে দেখতে পাবেন। যদি আমাকে নিয়মিত খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। সুযোগ পেলেই নিজের মুন্সিয়ানা দেখানোর সুযোগ থাকবে। আমি যে তেকাঠির নিচে আগের মতো পারফরম্যান্স করে দেখাতে পারি সেটাই নতুন করে দেখবেন। তানাহলে কীভাবে সম্ভব..

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার জন্য শুভকামনা..

আনিসুর রহমান জিকো: ধন্যবাদ আপনাকে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন আগের মতো পারফরম্যান্স করে দেখানোর সুযোগ পাই।

/এফআইআর/
সম্পর্কিত
‘দোহাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অনেকেই আতঙ্কিত ও ভয় পেয়ে যায়’
নানার সূত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি জায়ান হাকিম
ফুটবলের জন্য এমন ঢল কবে দেখা গেছে... 
সর্বশেষ খবর
ইরানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের দাবি নেতানিয়াহুর
ইরানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের দাবি নেতানিয়াহুর
যেসব উপায়ে কাজে লাগাতে পারেন পুরনো খবরের কাগজ
যেসব উপায়ে কাজে লাগাতে পারেন পুরনো খবরের কাগজ
জীবন পেয়েও বিজয়ের ডাক
জীবন পেয়েও বিজয়ের ডাক
জ্বর আতঙ্কে জনজীবন, অবহেলা না করার পরামর্শ চিকিৎসকদের
জ্বর আতঙ্কে জনজীবন, অবহেলা না করার পরামর্শ চিকিৎসকদের
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
ক্রুদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি বিমানের
ক্রুদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি বিমানের
নির্বাচনি সমঝোতার পথে পাঁচ ধর্মভিত্তিক দল
নির্বাচনি সমঝোতার পথে পাঁচ ধর্মভিত্তিক দল
সিনেমা: হাদ আছে হু আছে, দুধ-বাটি নাই!
সিনেমা: হাদ আছে হু আছে, দুধ-বাটি নাই!
বদলির আদেশ ছিঁড়ে এনবিআরে প্রতিবাদ
বদলির আদেশ ছিঁড়ে এনবিআরে প্রতিবাদ