আলী সুজেইন এখন নিজেকে সুখী মানুষ ভাবতেই পারেন। মালদ্বীপের ফুটবল ইতিহাসে যা হয়নি, সেটাই করে দেখিয়েছেন তিনি। তাদের ৪৫ বছরের ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশের মাঠে তপু-মিতুলদের হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
আলী সুজেইন আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে না থাকলেও তার দল স্কিলে এগিয়ে। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের বিপক্ষে গোল বের করে আনবে। কোচের কথারই প্রমাণ মিললো সফরকারীদের পারফরম্যান্সে। ফ্রি কিক থেকে আলি ফাসির মাথা ছুঁইয়ে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছেন।
পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ আক্রমণের পসরা মেলে ধরলেও কাঙ্ক্ষিত গোলটা পায়নি। কোনও সময় বারে লেগেছে, আবার রক্ষণে বাধা পড়েছে। আবার নিজেরা কখন কী করতে হবে সেটাই ভুলে গেছে! এমন জয়ের পর মালদ্বীপের খেলোয়াড়রা মাঠে উচ্ছ্বাস করেছে। নতুন ইতিহাস গড়লে যা হয়। তবে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটি ফিফা র্যাঙ্কিংসহ পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে কেন? এমন কথার উত্তর জানতে চেয়েছিলাম সুজেইনের কাছে। যিনি জাতীয় দলে খেলেছেন। কয়েক বছর ধরে কোচ হয়েও কাজ করছেন।
সুজেইনের কথাতে এটা পরিষ্কার যে, তারা ফুটবলে উন্নতির জন্য অনেক আগে থেকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগুচ্ছে। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করার চেষ্টা করে যাচ্ছে দ্বীপদেশটি।
শুধু তাই নয় ছোট্ট দেশ থেকে আলী আশফাকের মতো তারকাও বেরিয়ে এসেছে। একাধিক খেলোয়াড় আছেন যারা দেশের বাইরে লিগ খেলছেন কিংবা খেলেছেন। এছাড়া ফাসির-নাইজের মতো স্কিলফুল খেলোয়াড়ও তাদের বড় শক্তি।
৩০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দেশ হলেও মালদ্বীপে রয়েছে ৮০-১০০টি কৃত্রিম টার্ফ। সমুদ্রঘেরা হওয়ায় তাদের চারদিকে পানি। তারপরও স্থলভাগে জায়গা বের করে সবাই ফুটবলে মেতে উঠে। দিনের আলোতে অবশ্যই। সঙ্গে ফ্লাড লাইটেও চলে খেলা।
দেশটিতে রয়েছে প্রায় চারশোর মতো লাইসেন্সধারী কোচ। যারা তৃণমূলে কাজ করে থাকে। রয়েছে একাডেমি। যেখানে ৬ বছর বয়সীদের নিয়ে ফুটবলের প্রাথমিক পাঠের কাজ হয়ে থাকে। প্রিমিয়ার লিগ তো হয়ই। এবার নতুন করে বয়সভিত্তিক লিগ ১০,১২ কিংবা ১৪ বয়সীদের নিয়ে হতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে মালদ্বীপ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে দক্ষিণ এশিয়াতে একটা ধারা তৈরির চেষ্টা করছে।
সুজেইন তাই বলছিলেন,‘আমাদের সরকার ফুটবলে অনেক সহায়তা করে থাকে। প্রায় সব টার্ফ সরকারি অর্থায়নে হয়েছে। ফিফা দিয়েছে চারটি। পুরো দেশেই ফুটবল চর্চা ব্যাপক হয়ে থাকে। লিগ হয় নিয়মিত। ৬ বছর বয়সীদের নিয়ে আমাদের ফুটবল শুরু হয়। তাই আমরা একটা পর্যায় পর্যন্ত লড়াই করতে পারি। সাফ অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হয়।’
বিপরীতে ১৭ কোটি জনসংখ্যার পাশাপাশি আয়তনে বহুগুণ বড় হয়েও সেভাবে কোনও একাডেমি নেই বাংলাদেশের। কমলাপুর স্টেডিয়ামে একটি ট্রেনিং সেন্টারের মতো আছে। তাও ১৬-ঊর্ধ্ব বয়সীদের। এছাড়া নেই বাফুফের কোনও স্বীকৃত একাডেমি।
আনাচে কানাচে বেসরকারি উদ্যোগে খেলোয়াড়রা অনুশীলন করে থাকেন। তারপর ঢাকার লিগে সুযোগ পান। সেখান থেকেই খেলোয়াড় বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে বাফুফের কোনও ভ্রুক্ষেপও নেই। এমনকি প্রিমিয়ার লিগ নিয়মিত হলেও অন্য সব কিছুই অনিয়মিত। সিলেটে তো একাডেমি পেয়েও হেলায় হারাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ কেন ফুটবলে তেমন এগুতে পারছে না তা সবাই জানে। মালদ্বীপ কোচও বললেন, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে না এগুলে ফুটবলে উন্নতি সম্ভব নয়। বাফুফের নতুন কর্মকর্তারা কী শুনছেন...।