X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
একান্ত সাক্ষাৎকারে বডিবিল্ডার মাকসুদা আক্তার

বাংলাদেশে মেয়েরা বডিবিল্ডিং করে নাকি- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল

তানজীম আহমেদ
১৫ জানুয়ারি ২০২২, ২১:২৭আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ২১:২৭

দেশের বডিবিল্ডিংয়ে মাকসুদা আক্তার বেশ আলোচিত নাম। মেয়েদের মধ্যে তিন বছর ধরে এই খেলায় আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। দেশে কিংবা দেশের বাইরে বডিবিল্ডিংয়ে অংশ নিয়ে পাচ্ছেন সাফল্য। ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক বাধা-বিপত্তি ছিল। তবে সেই প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২৮ বছর বয়সী এই বডিবিল্ডিার চোখ রেখেছেন বহুদূর। মেয়েদের দেখাতে চান নতুন পথ, বিশ্বাসের বীজ বুনে দিতে চান মনে। বডিবিল্ডিংয়ে চলার পথে আসা বাধা এবং সেটি কাটিয়ে এগিয়ে চলার গল্প বাংলা ট্রিবিউনের কাছে শুনিয়েছেন মাকসুদা।

বাংলা ট্রিবিউন: বডি বিল্ডিংয়ে কী মনে করে আসা?

মাকসুদা আক্তার: বডিবিল্ডিং অন্য ৮-১০টা খেলার মতোই। আমাদের দেশে আগে বডিবিল্ডিং নিয়ে বড় পরিসরে কাজ হয়নি। আমি যখন বাইরে ছিলাম, তখন দেখেছি এর ক্রেজ অনেক। বিশেষ করে, ভারতে দেখেছি ক্রেজ। তা দেখেই এখানে আসা।

বাংলা ট্রিবিউন: শুনেছি ভারতের পাঞ্জাবে পড়াশোনার সময়ে বডিবিল্ডিংয়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। ফিটনেসের ওপর পরবর্তীতে তো পড়াশোনাও করেছেন?

মাকসুদা: হ্যাঁ অনেকটা তেমনই। সেখানে (ভারতে) পড়াশোনা করার সময় আগ্রহ বাড়ে। ওখানে দেখেছি ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা ফিটনেস নিয়ে অনেক সচেতন। তারপর থেকে ২০১৮ সালে প্রথম অনুশীলন শুরু করি। পরবর্তীতে ফিটনেস নিয়ে আলাদা পড়াশোনাও করেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার শুরুটা কেমন ছিল?

মাকসুদা: বডিবিল্ডিং করবো তা চিন্তা করিনি। শুরুতে নরমাল ফিটনেসের জন্য জিমে যাই। আস্তে আস্তে দেখলাম বডি ট্রান্সফর্ম হচ্ছে। সেই সময় ভালো কোচ পেয়েছিলাম। গাইডলাইন পাচ্ছিলাম। তখন স্টাডি করে দেখি আমাদের দেশে এর কী অবস্থা। তখন আস্তে আস্তে বডিবিল্ডিং শুরু করি।

বাংলা ট্রিবিউন: পরিবার থেকে কোনও বাধা আসেনি?

মাকসুদা: প্রথম দিকে একটু সমস্যা হচ্ছিলো। সাধারণত আমরা আমাদের ছেলেমেয়েকে জিমে দিতে বলি না। বাসায় তখন বোঝাতে হয়েছে। তারপর এখন আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেছে। চার বোন, এক ভাই আমরা। বাবা-মা এখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে মেয়েরা বডিবিল্ডিং করে নাকি- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল বাংলা ট্রিবিউন: মেয়েদের বডিবিল্ডিংয়ে ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

মাকসুদা: ইতিবাচক দেখছি। ভালো ভবিষ্যতও আছে। দেখুন, বাইরের দেশে এর ক্রেজ অনেক। যেগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হয়। বিশেষ করে, আরনল্ড শোয়ার্জনেগারের বড় বড় শো হয়। ওগুলোতে অ্যাথলেট হিসেবে অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে। আর্থিকভাবেও ভালো করার সুযোগ আছে। তবে বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি হয়নি। স্পন্সর নেই। সামনে হয়তো একসময় হবে। বডিবিল্ডিং জনপ্রিয় হবে। স্পন্সর না থাকলেও অনেক মেয়েই এখন বিডবিল্ডিার হতে চাইছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আর পেশা হিসেবে যদি মূল্যায়ন করেন...

মাকসুদা: আমি একজন অ্যথলেট। ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রিগুলো যখন হবে, তখন আসলে অ্যাথলেট হিসেবে কাজের অনেক জায়গা তৈরি হবে। পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য অনেক অ্যাথলেট তখন তৈরি হবে। আমি নিজেও ট্রেনার হিসেবে কাজ করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: এগিয়ে যাওয়ার পথে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কেমন দেখছেন?

মাকসুদা: নতুন কিছু শুরু করতে হলে বাধা থাকবেই। বাধা ছাড়া কেউ যেতে পারে না। সেটাকে এত অগ্রাধিকার দেওয়ার কিছু নেই। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। সেটাকে এত গুরুত্ব দিয়ে নিজের রাস্তা ব্লক করার কোনও কারণ নেই।

FB_IMG_1642019332608 বাংলা ট্রিবিউন: বডিবিল্ডিংয়ে বাংলাদেশে ড্রেস কোড এক, আন্তর্জাতিকভাবে অন্যরকম। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মাকসুদা: ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক খেলাতে ড্রেস কোড আলাদা। আমি যখন ভারতে খেলতে যাই, তখন সব অ্যাথলেটের জন্য যা আইন আমার জন্য তা-ই। এমন নয় ওরা যা কাপড় পড়ে তা আমি পড়তে পারবো না। সেভাবেই অংশ নিতে হচ্ছে। আমি যখন সেখানে অংশ নিয়ে আসলাম, তখন অনেকেই তা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। ৯৫ ভাগ ইতিবাচক দেখছে। ৫ ভাগ কী বলছে বা কী ভাবছে, তা ভাবা উচিত নয়। আমাদের এখানে সেই পোশাকে প্রতিযোগিতা হওয়ার সম্ভাবনা কম। হয়তো একসময় হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি মুম্বাইতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। সাফল্য পেয়েছেন। ওই জায়গার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মাকসুদা: বাংলাদেশে মেয়েরা বডিবিল্ডিং করে নাকি- বিচারকসহ সবাই আমাকে দেখে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল। অবাকও হয়েছে। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতা হলেও এখানে সামাজিক দিক চিন্তা করে ড্রেস কোড দিয়ে দেয়। আমরা উন্মুক্তভাবে শো করতে পারবো না। সীমাবদ্ধতা থাকে। যে কারণে আন্তর্জাতিকভাবে হাইলাইটস হয় না। ওরা যেমন প্রগতিশীল, আমাদের এখানে তা নয়।

আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা যারা করেছে, তারা বয়সে আমার চেয়ে বড়। অনেক বছর ধরেই বডিবিল্ডিং করে আসছে। বাংলাদেশে যে বডিবিল্ডিং হয় তা তারা জানে না।

বাংলাদেশে মেয়েরা বডিবিল্ডিং করে নাকি- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মাকসুদা: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বেশি বেশি অংশ নিতে চাই। আরনল্ড শোয়ার্জনেগারের বড় ফ্যান আমি। দেশের বাইরে অনেক শো হয়। সেখানে অংশ নিতে চাই। এখন যা-ই আছে, তা ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে, জিমগুলোতে যখন যাই আমি, মেয়েদের উজ্জীবিত করে থাকি। তারাও এগিয়ে আসছে অনেক। পরিস্থিতি একটু একটু করে বদলাচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: যারা সামনে বডিবিল্ডিংয়ে আসতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

মাকসুদা: যেকোনও জায়গায় আসতে চাইলে বাধা থাকবে। মানুষের নেতিবাচক কথা না শুনে নিজের যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে এগিয়ে যেতে হবে। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। কোনও কম্প্রোমাইস করা চলবে না। যেহেতু শরীর চর্চার বিষয়। সেটা চিন্তা করেই এখানে আসা উচিত।

/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম