বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার তিনি। ৫৮ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু এমন বিব্রতকর সময় মনে হয় আগে আসেনি নিয়াজ মোর্শেদের সামনে। বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে দশম রাউন্ডে বাংলাদেশের কাছে 'নিষিদ্ধ' ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলা শুনে মাথায় হাত! শেষ পর্যন্ত বিবেকের সঙ্গে যুদ্ধ করে আগেই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। অনেকটা বয়কটের মতোই! তার দেখাদেখি আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবও একই পথে হাঁটেন। যে কারণে একটি বোর্ডে ইসরায়েলকে ওয়াকওভার দিতে হয়েছে। তবে এনিয়ে নিয়াজের কোনও আক্ষেপ নেই। তার কাছে মানবতাই সবার আগে।
হাঙ্গেরিতে আগের দিন যখন নিয়াজ জানতে পারলেন, দশম রাউন্ডে ইসরায়েল প্রতিপক্ষ, একটু সময় নিয়ে টিম অধিনায়ককে না সূচক বার্তা পাঠিয়ে দেন। অথচ আজই বোর্ডে তার নাম থাকার কথা ছিল। শেষ দিকে এসে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নিয়াজ বুদাপেস্টের হোটেল থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আসলে কিছু করার ছিল না। ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েল যা করছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। একজন বিবেকবান মানুষের জন্য এটা কষ্টকর। তাই যখন ইসরায়েলের নাম শুনলাম, নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এছাড়া কিছু করার ছিল না। আমার পক্ষে ইসরায়েলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হেসে কয়েক ঘণ্টা খেলা সম্ভব নয়। মানসিকভাবে আমি তা মেনে নিতে পারতাম না। তাই আগেভাগেই নাম সরিয়ে নিয়েছি। আজ ছুটি কাটিয়েছি।’
২০২৪ সালে এসে ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলেননি নিয়াজ। তবে অলিম্পিয়াডে ১৯৯৬ সালে কিন্তু ঠিকই খেলেছিলেন। আর্মেনিয়াতে সেই ম্যাচ খেলা নিয়ে নিয়াজ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, '১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ দলের হয়ে আমি খেলেছিলাম। তখন আজকের এই অবস্থা ছিল না। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি হয়েছিল। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। যে কারণে খেলেছিলাম। এবার যেমন স্মরণকালের ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফিলিস্তিনের ওপর যে নিদারুণ অত্যাচার হচ্ছে, তা আগের সবকিছুকে হার মানিয়েছে। বাধ্য হয়ে খেলিনি।'
বাংলাদেশ না খেলায় ইসরায়েল ওয়াকওভার পেয়েছে। নিয়াজ নাম প্রত্যাহারের পর রাজীবও বয়কট করেছেন। নিয়াজ অবশ্য রাজীবের পাশেই দাঁড়িয়েছেন, ‘রাজীব যা করেছে, তাতে আমার সমর্থন আছে। একজন মানবিক মানুষ হিসেবে এটা আমি সমর্থন করি। এখন পয়েন্ট হারালেও কী করার আছে। এমনিতে ইসরায়েল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। তবে লড়াই করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কিছু করার নেই। ইচ্ছে করলেই প্রতিপক্ষ বদল করা যাবে না।'
বাংলাদেশের দাবাড়ু না খেলায় শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন থেকে। নিয়াজ বলেছেন, ‘দাবার সর্বোচ্চ সংস্থা ফিদে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না। পুরো দল যদি ওয়াকওভার দিতো তাহলে হয়তো সম্ভাবনা ছিল। আর বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন কী করবে তা তো জানি না। আমার কাছে মনে হয় মাঝে মধ্যে দেশের চেয়ে মানবিকতা বড়। এক পয়েন্ট হারানোর চেয়ে না খেলার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো খারাপ কিছু না। কারণ ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এমন নির্মম অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না।'