X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটি বিভাগে যাচ্ছে বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের টাকা!

হিটলার এ. হালিম
১৩ এপ্রিল ২০১৭, ২০:৪৩আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০১৭, ২০:৫৮

বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি গঠিত সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (এসওএফ) অলস পড়ে থাকা টাকা যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডোমেস্টিক নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেশন কমিটির (ডিএনসিসি) ২৪তম সভায় সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের একটি বিশাল অংকের টাকা আইসিটি বিভাগের একটি প্রকল্পে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে টেলিযোগাযোগ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টাকা টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত কার্যক্রমে খরচ করা হলে তা যথার্থ হতো।
অথচ, গত বছরের ডিসেম্বরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় টেলিযোগাযোগভিত্তিক পাঁচটি খাতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। ওই বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, ‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এই টাকা দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যয় করা হবে। এতে করে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের মানুষগুলো তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পাবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিযোগাযোগ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘বিষয়টি অনেকেই পছন্দ করছেন না।’ অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেও তা বাদ দিয়ে নতুন খাতে অর্থ ব্যয় টেলিকম খাতের উন্নয়নে কোনও কাজে লাগবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
ডিএনসিসির ২৪তম সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের ৭শ ৭২টি ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি স্থাপনের জন্য আইসিটি বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। পাশাপাশি ইউনিয়ন কানেক্টিভিটিগুলো ইউডিসি (ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার) প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করা হয় সভায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে ৬৫০ কোটি টাকা দেওয়া হতে পারে। সূত্র আরও জানায়, কানেক্টেড বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের বাজেটও ৬৫০ কোটি টাকা। ওই সভার কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, বিটিআরসি, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও আইসিটি বিভাগ।
জানা যায়, দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশ অর্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (এসওএফ) জমা রাখে। তহবিল গঠনের পর থেকে গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফান্ডে জমা ছিল সবমিলিয়ে ৭শ ৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এতদিনে তহবিলের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এদিকে, গত ১৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই তহবিলের টাকা খরচের খাত নির্ধারণে সিদ্ধান্ত হয়। তাতে এই তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাঁচটি খাতকে বেছে নেওয়া হয়—
প্রথমত, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সুবিধা বঞ্চিত এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সুবিধা বিস্তৃতকরণের লক্ষ্যে ফাইবার অপটিক সংযোগ সুবিধা স্থাপনের পাশাপাশি দ্বীপাঞ্চল, পাহাড়ি, হাওর ও চর এলাকায় ওয়্যারলেস টেলিযোগাযোগসহ ই-ব্যবস্থা স্থাপনের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ব্যবহার করা হবে।
দ্বিতীয়ত, সাইবার ক্রাইমকে সামাজিক দুর্যোগ বিবেচনায় এনে সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে। বর্তমানে এই তহবিলে গচ্ছিত অর্থের ১৫ ভাগ সাইবার সিকিউরিটির ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া, ভবিষ্যতে সাইবার সিকিউরিটির জন্য কী পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে কমিটি পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী পদ্ধতি বা সিস্টেম কেনার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
চতুর্থত, পাবলিক বাস বিশেষ করে যেসব বাসে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে সেসব বাসে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা দিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে।
পঞ্চমত, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহারের নিমিত্তে বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে এবং অর্থ বরাদ্দের জন্য কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
তহবিলে টাকা থাকলেও কীভাবে তা খরচ করা হবে এবং খরচ করার কোনও কর্তৃপক্ষ ঠিক না থাকায় কোনও টাকা খরচ করা যাচ্ছিল না। পরে, গত ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে তহবিল থেকে টাকা খরচ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়, সামাজিকে দায়বদ্ধতা তহবিলের ব্যাংক হিসাব বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালকের (এসএস) যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে। তবে ভাইস-চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কমিশনার (লিগ্যাল ও লাইসেন্সিং) এবং মহাপরিচালকের (এসএস) অনুপস্থিতিতে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সেই দায়িত্ব পালন করবেন। শেষ পর্যন্ত এই তহবিলের টাকা যাচ্ছে আইসিটি বিভাগের প্রকল্পে।

আরও পড়ুন-

আপনার ফোনের ক্যামেরা দিয়ে কেউ আপনাকে দেখছে!

কলড্রপের শীর্ষে গ্রামীণফোন, গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেয় না টেলিটক

/এইচএএইচ/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাকিব আল হাসানকে দেখতে ছাদে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিক্ষার্থী আহত
সাকিব আল হাসানকে দেখতে ছাদে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিক্ষার্থী আহত
কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিলেন তারা
কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিলেন তারা
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা