ব্লক করেও মোবাইল ফোনে যখন-তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত এসএমএস আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কাজের মধ্যে বা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায় এগুলো। অনেক সময় প্রয়োজনীয় এসএমএস খুঁজে পাওয়া যায় না বা অযাচিতগুলোর ভিড়ে হারিয়ে যায়। ফলে উপকারের চেয়ে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এসব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় এসএমএস আসার পেছনে আছে মূলত তিনটি কারণ। এগুলো হলো— মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বাল্ক (একসঙ্গে অনেক) এসএমএস বিক্রি, গ্রাহকদের মাস্কিং প্রযুক্তির চর্চা ও একাধিক নম্বর ব্যবহার করে এসএমএস পাঠানো।
তবে এ বিষয়ে প্রতিকারের জন্য সহযোগিতা চাওয়া যাবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনে (বিটিআরসি)। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে কিংবা কল করেও অনাকাঙ্ক্ষিত এসএমএস বন্ধের সুযোগ রয়েছে।
সব মোবাইল অপারেটরের এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বর থাকলেও সেগুলোতে মেসেজ পাঠালে অনাকাঙ্ক্ষিত এসএমএস আসা বন্ধ হয়— সংশ্লিষ্টরা এমন দাবি করেন। তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হয় না বলে অভিযোগ আছে।
এছাড়া মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানোতে কড়াকড়ি থাকলেও তা মেনে চলা হয় না। গ্রাহকদের দাবি, মাঝরাত থেকে ভোরেও মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সেবামূলক তথ্যসংবলিত এসএমএস আসে।
বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম জানান, এ বিষয়ে ২০১৫ সালের মে মাসে ‘ডিরেক্টিভস অন সার্ভিস অ্যান্ড ট্যারিফ’ বিষয়ক একটি নির্দেশনা জারি করে বিটিআরসি। ওই নির্দেশনায় গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা এসব সেবা না চাইলে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে এতে।
বিটিআরসির এই সচিব বলেছিলেন, ‘এসব অনাকাঙ্ক্ষিত এসএমএস পেয়ে যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হন তাহলে প্রতিকারের জন্য তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান বা সচিব বরাবর অভিযোগ করতে পারেন। আমরা সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করবো। এতে অপারেটর দায়ী প্রমাণিত হলে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হবে।’
তবুও বিভিন্ন অফারের এসএমএস পাঠানোর বিষয়টি বন্ধ হয়নি। এ কারণে ২০১৬ সালের ১৫ মে মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন,‘আগেই এ বিষয়ে বলা হয়েছে, কিন্তু এসব বন্ধ হয়নি।’
তখন অপারেটরগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাত ১২টার পর থেকে ভোরে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে এসব এসএমএস পাঠানো যাবে না।’
জানা যায়, বিটিআরসির ওয়েবসাইটে ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া আছে, অভিযোগ বক্সও রয়েছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সেখানে অভিযোগ পাঠালে কমিশনের যে ‘কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট টিম’ আছে তারা তা যাচাই-বাছাই করে গ্রাহকের পক্ষে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন।’
বিআরসির ওয়েবসাইটের (http://www.btrc.gov.bd/complain-management) লিংকে গিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে। এছাড়া বিটিআরসির শর্টকোড ২৮৭২ নম্বরে অফিস সময়ে ফোন করেও অভিযোগ জানানো যাবে।
বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিজেকে উদ্ধৃত না করে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ব্লক করে হয়তো সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের পাঠানো অপ্রয়োজনীয় এসএমএস পাওয়া বন্ধ করা যাবে। কিন্তু যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নম্বর থেকে এসএমএস পাঠায় সেগুলো ব্লক করা কঠিনই বটে। তার ভাষ্য, ‘এছাড়া মাস্কিং করে (প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নামে) এসএমএস পাঠালে ব্লক করা মুশকিল। যদিও এই প্রযুক্তিও আছে। তবে এত জটিলতার মধ্যে মানুষ যেতে চায় না।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে গিয়ে অফার নেওয়ার জন্য নিজের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে আসেন। তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও এসএমএস পাঠিয়ে থাকে। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের টেলিফোন ডিরেক্টরি রয়েছে। সেসব জায়গা থেকে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের অফার পাঠিয়ে থাকে। ফলে সব এসএমএস যখন একের পর এক আসতে থাকে তখনই বিষয়টি বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায়। অনেকে মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছ থেকে বাল্ক (একসঙ্গে অনেক) এসএমএস কিনে থাকেন। সেগুলো বিভিন্ন নম্বর থেকে পাঠানো হয়ে থাকে। এ কারণে একটা ব্লক করলে আরেক নম্বর থেকে তা আসতে থাকে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির এই কর্মকর্তা বলেছেন, “মোবাইল ফোনে এসএমএস আসা ব্লক বা বন্ধ করার জন্য সাধারণত কমিশনে অভিযোগ আসে না। যদি আসে তাহলে ‘কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট’-এর দায়িত্বরতরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর আর সংস্থা থেকেও প্রচারণামূলক এসএমএস পাঠানো হয়। বিশেষ দিবসগুলোতেও এসএমএস আসে মোবাইল ফোনে। অনেক সময় এসব এসএমএসও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মনে হয় গ্রাহকদের।”
এ প্রসঙ্গে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসএমএস পাঠায়, কয়টাকেই বা ব্লক করা যায়। এসব অপ্রয়োজনীয় এসএমএস এলে আমরাও বিরক্ত হই। তারপরও সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলোতে এসএমএস পাঠিয়ে বা মোবাইল অপারেটরগুলোর কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোতে গিয়ে এগুলোর আসা ব্লক করা যায়।
অ্যামটবের মহাসচিব জানান, একটি প্রতিষ্ঠান কখনও একই নম্বর থেকে এসএমএস পাঠায় না। বিভিন্ন সময়ে একাধিক নম্বর থেকে পাঠায়। এ কারণে সব বন্ধও করা যায় না। তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে সরকার ও বিটিআরসির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত।
ডিরেক্টরি থেকে নম্বর কপি করা বা বিভিন্ন জায়গা থেকে নম্বর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিপণন কাজে এসএমএস পাঠানো বন্ধের সংস্কৃতি তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন অ্যামটবের মহাসচিব। তা না হলে নীতিমালা করেও এসব ঠেকানো যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তার কথায়, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। কিসে মানুষ আনন্দ পাবে আর কিসে বিরক্ত হবে তা বুঝতে হবে।’
অপ্রয়োজনীয় এসএমএস বন্ধের নিয়মাবলী
গ্রামীণফোনের কোনও গ্রাহক এসব এসএমএস পেতে না চাইলে ১২১ নম্বরে ফোন করে বন্ধের জন্য অনুরোধ জানাতে পারবেন। এরপরই এসব বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে।
রবি গ্রাহকরা ১২৩ নম্বরে ফোন দিয়ে ডিএনডি (ডু নট ডিস্টার্ব) সেবা চালুর জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। এজন্য ফোন করে বলতে হবে, ‘আমি এই সেবা চাই না।’ তাহলে সংশ্লিষ্টরা ফোনদাতাকে নিয়ে যাবে ডিএনডি বিভাগে।
এয়ারটেলের গ্রাহকরা ১২৩ নম্বরে ফোন দিয়ে ডিএনডি (ডু নট ডিস্টার্ব) সেবা চালুর জন্য অনুরোধ করতে পারবেন।
কেউ বাংলালিংক নম্বরে এসএমএস না চাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে অফ (OFF) লিখে ৬১২১ নম্বরে এসএমএস পাঠানো যাবে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের এ ধরনের কোনও সেবা (এসএমএস ব্লক) নেই বলে জানা গেছে।