ইন্টারনেট থেকে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও শুল্কবাবদ সরকারের বছরে আয় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সাত সংগঠন যৌথভাবে দাবি জানিয়েছে এই কর ও শুল্ক প্রত্যাহারের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আশার প্রতিফলন না হওয়ায় বুধবার (২০ জুন) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যামটব, বিসিএস, বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্য ও ই-ক্যাবের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্ক মিলিয়ে মোট কর ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দেশে যে পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহার হয়, তা থেকে (২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ) সরকারের আয় হয় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। বক্তাদের দাবি, এই শুল্ক কর প্রত্যাহার করা হলে সরকার এই খাত থেকে পরোক্ষভাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে। তারা মনে করেন, ইন্টারনেট এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটনির্ভর শিল্পে ইন্টারনেট হলো কাঁচামাল। এর ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার না করলে এই শিল্প কখনও শক্ত ভিত পাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট থেকে টেলিকম খাত কিছুই পায়নি।’
বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) –এর সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, ‘দেশে এখন বছরে চার কোটি (বৈধ ও অবৈধ) মোবাইলফোন আসছে। দেশের অন্তত সাতটি প্রতিষ্ঠান মোবাইল উৎপাদনের জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করেছে। সে সময়ে মোবাইলফোন আমদানিতে ৩১ এবং অ্যাসেম্বিলিংয়ের (সংযোজন) জন্য ৩৪ শতাংশ শুল্ক ও কর নির্ধারণ করা হয়েছে এবারের বাজেটে। এটা প্রত্যাহার করা না হলে দেশে মোবাইলফোন তৈরির কারখানা টিকতে পারবে না।’ তিনি অ্যাসেম্বিলিং খাতকে ভ্যাটমুক্ত রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস)সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর ইন্টারনেটকে কাঁচামালের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘ইন্টারনেটনির্ভর শিল্পখাত বাঁচাতে হলে দীর্ঘমেয়াদে এ খাতকে কর ও শুল্ক মুক্ত রাখতে হবে।’
ইন্টারেনট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম ইন্টারনেটকে ভ্যাট মুক্ত রাখার দাবি করে আইটিইএস সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া ইন্টারনেট সেবায় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ শুল্ক ও কর রয়েছে।’ তিনি দেশে ইন্টারনেট প্রসারে এই শুল্ক ও করের যৌক্তিক সমাধান চান।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচালক এই উ খান জুয়েল বলেন, ‘বাজেটে কম্পিউটারের ওপর ৫ শতাংশ এটিভি (অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট) ও খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অন্তত ১১ শতাংশ দাম বেড়ে যাবে কম্পিউটারের।’ তিনি জানান, বর্তমানে যে কম্পিউটারের দাম ৪০ হাজার টাকা, বাজেট পাস হলে ওই কম্পিউটারের দাম কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। তিনি এই কর প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আউটসোর্সিং অ্যান্ড কল সেন্টারের (বাক্য) যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, ‘এ খাতে বর্তমানে দেশের ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই খাতে বিদ্যমান ভ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।’ তিনি মনে করেন, এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে তাদের ব্যয় বেড়ে যাবে, যা নির্বাহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা তৃণমূলে ই-কমার্স ছড়িয়ে দিতে ডিভাইসের দাম কমানো এবং ইন্টারনেটের ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
