X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

‘মোবাইল আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ক্রেতাদের কষ্ট বাড়াবে’

হিটলার এ. হালিম
২৭ জুন ২০১৯, ১৯:৫৮আপডেট : ২৭ জুন ২০১৯, ২২:০৯

সাকিব আরাফাত বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেটের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল আমদানিতে যে বাড়তি শুল্ক ধার্য করা হয়েছে তা কার্যকর‌ হলে দেশে অবৈধ পথে স্মার্টফোন আসা আরও বেড়ে যাবে। ফলে গ্রে মার্কেট বড় হবে। ক্রেতাদের বেশি দামে মোবাইল ফোন কিনতে হবে। ফলে ক্রেতাদের কষ্ট বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্মার্ট টেকনোলজিসের পরিচালক (টেলিকম বিজনেস) সাকিব আরাফাত। তিনি বলেন, আমাদের স্টকে যতদিন স্মার্টফোন আছে ততদিন আগের দামেই বিক্রি হবে। স্টক শেষ হলেই আমাদের টিকে থাকা কষ্টকর হবে।

বর্তমানে মোবাইল মার্কেটের অবস্থা, বিদেশি স্মার্টফোনের দাপট, মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য নিয়ে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো কী ভাবছে, কত শতাংশ মার্কেট দখল করে আছে ইত্যাদি বিষয়ে সাকিব আরাফাত কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।  

দেশে অবৈধ পথে স্মার্টফোন আসা আরও বেড়ে যাবে। ফলে গ্রে মার্কেট বড় হবে। ক্রেতাদের বেশি দামে মোবাইল ফোন কিনতে হবে। ফলে ক্রেতাদের কষ্ট বাড়বে 

বাংলা ট্রিবিউন: মোবাইল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা কী?

সাকিব আরাফাত: আমদানি শুল্ক আরোপের পরে এই জায়গাটাতে বেশ বড় ধরনের একটা ধাক্কা লেগেছে গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে। এখনও মার্কেট ভালো, বিক্রি ভালো, যতক্ষণ পর্যন্ত স্টক আছে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যখনই আমাদের স্টক শেষ হয়ে যাবে, তখন হয়তো নতুন শুল্কে আমাদের টিকে থাকা কষ্টকর হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: শুল্ক কমানোর জন্য আপনাদের কোনও উদ্যোগ আছে কি?

সাকিব আরাফাত: শুল্কের প্রভাবটা কার্যকর প্রতিটা গ্লোবাল ব্র্যান্ডে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে। তবে স্যামসাং, সিম্ফনি ও ওয়ালটন ছাড়া। এরা দেশীয় ব্র্যান্ড, ভালো করছে। তারা চেষ্টা করছে মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য তৈরি করার। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অন্যান্য গ্লোবাল ব্র্যান্ড কিন্তু ৬২ থেকে ৭০ শতাশং বিক্রি হারাবে। ক্রেতার চাহিদা তো আর স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি কিংবা আইটেলের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। ক্রেতারও নিজস্ব পছন্দ আছে। দেখা যাচ্ছে আপনি একটি গ্লোবাল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে চাচ্ছেন যেটির বাংলাদেশে দাম ১০ হাজার টাকা কিন্তু ভারতে সেটা ৭ বা ৫ হাজার টাকা। তখন আপনার ওই প্রবণতাই থাকবে ‘আনঅথরাইজড’ পণ্য কেনার। আমরা মনে করছি এই হারে শুল্ক বাড়লে অনুমোদনহীন পণ্যের সংখ্যা বেড়ে যাবে।

বাংলা ট্রিবিউন: কত টাকা দামের স্মার্টফোন এখন বাংলাদেশে জনপ্রিয়?

সাকিব আরাফাত: ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে যে রেঞ্জটার বিক্রি বেড়েছে তা হলো ৭ থেকে ১২ হাজার টাকার স্মার্টফোনের। সাত হাজার টাকার নিচে মার্কেটটা বড় থাকবে। এর কারণ হচ্ছে, গ্রামে যারা সবে স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করেছে তাদের হয়তো কেনার ক্ষমতা একটু কম। তারা হয়তো সাত হাজার টাকার নিচে থাকবে। কিন্তু বিভাগীয় শহর বা জেলা শহরগুলোর মার্কেট ৭ হাজার টাকার ওপরে থাকবে। সেই জায়গায় ৭ থেকে ২০ হাজার টাকার এই রেঞ্জের মার্কেটটা সবচেয়ে বেশি বাড়বে সামনের দিকে।

কিন্তু অন্যান্য গ্লোবাল ব্র্যান্ড কিন্তু ৬২ থেকে ৭০ শতাশং বিক্রি হারাবে। ক্রেতার চাহিদা তো আর স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি কিংবা আইটেলের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। ক্রেতারও নিজস্ব পছন্দ আছে। দেখা যাচ্ছে আপনি একটি গ্লোবাল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে চাচ্ছেন যেটির বাংলাদেশে দাম ১০ হাজার টাকা কিন্তু ভারতে সেটা ৭ বা ৫ হাজার টাকা। তখন আপনার ওই প্রবণতাই থাকবে ‘আনঅথরাইজড’ পণ্য কেনার

বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা তো মটোরোলা মোবাইলের ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সাকিব আরাফাত: মাত্র নয় মাস হলো আমাদের অপারেশন শুরু হয়েছে। আমাদের দরকার ছিল মানুষের কাছে পৌঁছানো যে, আমরা মটোরোলা নিয়ে কাজ করছি। আমরা এখনও ওই লেভেলের ডিস্ট্রিবিউশন শুরু করিনি। ২২টি জেলায় কাজ করছি। এই দিয়ে যে সাড়া পাচ্ছি তা ‘নস্টালজিক ব্র্যান্ড’ হিসেবে। এখন আমরা ‘ব্র্যান্ড ইনভেস্টের’ কথা চিন্তা করছি। এই চিন্তার সময়ই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলো। মানুষ এখন মটোরোলা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। করপোরেট টাইআপ করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রেতারা কেন মটোরোলা ফোন কিনবে?

সাকিব আরাফাত: মানের জন্য মটোরোলা কিনবে। আসলে মোবাইলের জনক বলা হয় মোটোরোলাকে। যদিও স্মার্টফোনের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু মানের কথা চিন্তা করলে যেকোনও ব্র্যান্ডের চেয়ে ভালোমানের সেবা দেবে। এখন পর্যন্ত আমাদের যা বিক্রি করেছি, তার বিপরীতে আমরা যে সার্ভিস রিসিভ (মোবাইল ফেরত আসা বা সার্ভিসের জন্য আসা) করেছি তা ০ দশমিক ২ শতাংশের কম। এটা বিশাল ব্যাপার। এত ভালোমানের পণ্য আমরা আগে দিইনি। এর আগেও বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে আমি কাজ করেছি, কিন্তু এমন সাড়া পাইনি।

স্মার্ট টেকনোলজিসের পরিচালক সাকিব আরাফাত

বাংলা ট্রিবিউন: হুয়াওয়ে একটা বড় ধাক্কা খেলো, এতে লাভবান হলো কারা?

সাকিব আরাফাত: আসলেই ধাক্কাটা বড়। এটা স্বীকার না করার কিছু নেই। হুয়াওয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে। এটি অনেক বড় ধাক্কা। হুয়াওয়ের কিছু বাজার এখন স্যামস্যাং নিয়ে নিয়েছে, কিছু ভিভো নিয়েছে। শাওমি তো এখানে ভালো ভূমিকা পালন করছে। মটোরোলাও কিছুটা নিয়েছে।

যদি বিশ্ব মার্কেটের কথা চিন্তা করি তাহলে চীনে হুয়াওয়ের কোনও বিকল্প নেই। বিশ্ব বাজারের কথা চিন্তা করলে হুয়াওয়ের বেনিফিটটা কিন্তু সবাই পাচ্ছে। সেটা মটোরোলার কথা বলেন বা স্যামসাং, সবাই কিন্তু হুয়াওয়ের বেনিফিট নিচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা (স্মার্ট টেকনোলজিস) তো হুয়াওয়ের সঙ্গে আছেন? তারা কি বলছে?

সাকিব আরাফাত: আমরা গত দুই মাস হলো হুয়াওয়ের ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের সঙ্গে হুয়াওয়ের যে পার্টনারশিপ তা ‘লংটার্ম পার্টনারশিপ’। এক বছরের মধ্যেই আমাদের অবস্থান শক্তিশালী হবে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ, পার্টনারশিপ হতে যাচ্ছে। এ জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় দরকার।

হুয়াওয়ে আমাদের ১০০ শতাংশ মানিব্যাক গ্যারান্টি অফার দিচ্ছে। মার্কেটে একটি কথা ছড়ানো হচ্ছে- এই ফোন কিনলে ফেসবুক কাজ করবে না, আজকে কিনলে এক বছরের মধ্যে আপডেট পাওয়া যাবে না। এসব কথা মিথ্যা। আমাদের কাছে হুয়াওয়ের রিটার্ন কমিটমেন্ট আছে। এখন পর্যন্ত যত প্রোডাক্ট মার্কেটে এসেছে, আগামী দুই মাসে আসবে- সব মোবাইল ফোনে সিকিউরিটি আপডেটসহ গুগল অ্যাপস, ইউটিউব, ফেসবুক, জি-মেইল সব ব্যবহার করা যাবে। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে হুয়াওয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরাও মানিব্যাক অফারে চলে গেছি। 

হুয়াওয়ে আমাদের ১০০ শতাংশ মানিব্যাক গ্যারান্টি অফার দিচ্ছে। মার্কেটে একটি কথা ছড়ানো হচ্ছে, এই ফোন কিনলে ফেসবুক কাজ করবে না, আজকে কিনলে এক বছরের মধ্যে আপডেট পাওয়া যাবে না। এসব কথা মিথ্যা। আমাদের কাছে হুয়াওয়ের রিটার্ন কমিটমেন্ট আছে। এখন পর্যন্ত যত প্রোডাক্ট মার্কেটে এসেছে, আগামী দুই মাসে আসবে- সব মোবাইল ফোনে সিকিউরিটি আপডেটসহ গুগল অ্যাপস, ইউটিউব, ফেসবুক, জি-মেইল সব ব্যবহার করা যাবে। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে হুয়াওয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরাও মানিব্যাক অফারে চলে গেছি। যদি এক বছরের মধ্যে এ ধরনের কোনও সমস্যা হয় তাহলে আমরা শতভাগ টাকা ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেবো। এসব কথা যখন মূল কোম্পানি বলবে তখন বুঝে নিতে হবে তারা কতটা শক্ত অবস্থানে আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: হুয়াওয়ে নতুন অপারেটিং সিস্টেম হংমেং নিয়ে আসছে। এটা নিয়ে আপনারা কতটা আশাবাদী?

সাকিব আরাফাত: স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ। কিন্তু এটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপারও। খুব দ্রুততার সঙ্গে এটি কাজ করবে, মানুষের ভেতরে সহজে ঢুকে যেতে পারবে- এটা অতটা সহজে হবে না। হুয়াওয়ের মতো একটা কোম্পানি এ জায়গা থেকে খুব দ্রুত কামব্যাক করবে। হংমেং-এর কথা আমরাও শুনেছি। অফিসিয়ালি এখনও কিছু জানিনি। নিউজে পড়েছি, হংমেং অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাকিব আরাফাত: সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপ করার জন্য বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।

শ্রুতিলিখন: রাসেল হাওলাদার

/এইচএএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নেত্রকোনায় ঝটিকা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
নেত্রকোনায় ঝটিকা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
বর্ষা এলেই দুর্ভোগ বাড়ে পাহাড়ের বাসিন্দাদের
বর্ষা এলেই দুর্ভোগ বাড়ে পাহাড়ের বাসিন্দাদের
ফিরে দেখা: ৭ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৭ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত