X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

রকেট সায়েন্স ল্যাব গড়ে তুলবে ইনোভেশন ফোরাম

হিটলার এ. হালিম
০৩ জুলাই ২০১৯, ২০:৩৩আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৯, ২১:৪৬

আরিফুল হাসান অপু দেশের তরুণ প্রজন্মের মেধা কাজে লাগাতে, তাদের ইনোভেশন আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কৃতি তৈরি এবং ছোটদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহী করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম। সংগঠনটি বর্তমানে কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছে। এর বাইরে ফোরামটি সরকারের সহযোগী পার্টনার হিসেবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু। তিনি বলেন, এই ইনোভেশন ফোরাম ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পরে এখন পর্যন্ত ১২৮টি প্রোগ্রাম করা হয়েছে। যার সবকিছুই তরুণ প্রজন্মকে ঘিরে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫ হাজার তরুণ এই ইনোভেশন ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সংগঠনটির শুরু, তাদের কার্যক্রম, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিয়জী হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি আরিফুল হাসান অপুর সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম সম্পর্কে জানতে চাই।

আরিফুল হাসান অপু: বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম গঠন করেছি দেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে ইনোভেশন এবং ইনোভেটিভ একটি কালচার তৈরি করতে। তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া এবং তাদের সাপোর্ট দেওয়া গেলে এই প্রজন্ম অনেক ভালো ভালো ইনোভেশন করতে সক্ষম। এ লক্ষ্যেই আমরা বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেছি।

সারাদেশে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের নিবন্ধিত সদস্য প্রায় ৫৫ হাজার। ১৬ হাজারের বেশি ভলান্টিয়ার কাজ করছে আমাদের সঙ্গে

বাংলা ট্রিবিউন: ইনোভেশন ফোরামের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পৃক্ত কীভাবে?

আরিফুল হাসান অপু: এই ফোরাম শুধু তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে না। এর বাইরেও যেখানে ইনোভেশন করা যায়, সেসব সেক্টর নিয়েও কাজ করছে। যদি নির্দিষ্টভাবে বলি, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান এই জায়গাগুলোতে একটু বেশি কাজ করছি আমরা।

বাংলা ট্রিবিউন: এই কাজে কত মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন?

আরিফুল হাসান অপু: সারাদেশে ফোরামের নিবন্ধিত সদস্য আছে প্রায় ৫৫ হাজারের মতো। ১৬ হাজারের বেশি ভলান্টিয়ার কাজ করছে আমাদের সঙ্গে। এর বাইরেও আলাদা আলাদা টিম রয়েছে। আইওটি টিম, ডেটাবেজ টিম, ডেটা সায়েন্স টিম। এরকম অনেক ছোট ছোট টিম রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫ হাজার তরুণকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। এর বাইরে কিন্তু আমরা স্কুল লেভেলেও কাজ শুরু করেছি। প্রথমে মূল লক্ষ্য তরুণদের নিয়ে থাকলেও পরে দেখলাম স্কুল লেভেল থেকেও কাজ করা উচিত। তাহলে পরবর্তী লেভেলের কাজগুলো আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা স্কুলের বাচ্চাদের জন্য অনেক প্রোগ্রাম করছি। যেমন, নিজের হাতে রোবট বানাই, রকেট মেকিং ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের একটি উদ্যোগের নাম নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্কে জানতে চাই।

 আরিফুল হাসান অপু: নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নাসার যত ধরনের প্রতিযোগিতা হয় তারমধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হলো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা। এটা আমরা বাংলাদেশের শুরু করি ২০১৪ সালে। তখন আমি বেসিসের পরিচালক  ও বেসিস স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি। আমি আহ্বায়ক হিসেবে এই প্রোগ্রাম  তিন বছর (২০১৪ থেকে ২০১৬)। ২০১৭  সালে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে প্রোগ্রামটা করি। এই মুহূর্তে প্রোগ্রামটাতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসিস। এর বাইরেও বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম ক্লাউডক্যাম্পসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই এটার সাপোর্টিং হিসেবে কাজ করছে।

এখানে তরুণ বিজ্ঞানীরা নাসার বিভিন্ন সায়েন্টিফিক প্রবলেম সলভ করার চেষ্টা করে। সেটারই আপডেট হচ্ছে, আমরা পাঁচ বছর কাজ করার পরে এবার আমরা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের বাংলাদেশের একটি টিম যারা ‘লুনার ভিআর’ নামের একটা প্রজেক্টে কাজ করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম (টিম অলীক) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নাসা আমাদের তাদের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে কেনেডি স্পেসে সেন্টারের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ফ্যালকন-৯ উৎক্ষেপণ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা ১৯ জুলাই সেখানে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: শিশুদের রোবট শেখাই নামে আপনাদের একটি প্রোগ্রাম আছে। এ পর্যন্ত কতজন শিশুকে আগ্রাহী করা গেছে। অভিভাবক লেভেল থেকে আপনারা কী ধরনের সাপোর্ট পেলেন।

মহাকাশচারীর পোশাকে আরিফুল হাসান অপু

আরিফুল হাসান অপু: শিশুদের রোবট শেখানো এটি অন্য একটি কাজের অংশ। বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম থেকে একটা প্রোগ্রাম চালু করেছি। যেটা নাসার একটি বড় প্রোগ্রামের পার্ট হিসেবে বাংলাদেশে চলছে। বাংলাদেশ নাসা সায়েন্টিফিক প্রবলেম সলভার নামে চলছে। আমরা নাসার বিভিন্ন প্রবলেম সলভিং নিয়ে এখানে কাজ করছি। এই প্রোগ্রামের সঙ্গে আমাদের এমআইটির একজন প্রফেসর আছেন। এছাড়া নাসার আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এর মাধ্যমে আমরা মূলত শিশুদের চারটি জায়গায় সাপোর্ট দিতে চাচ্ছি। সায়েন্স, টেকনোলজি, ম্যাথমেটিকস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং। এই চারটি বিষয়ে আমরা শিশুদের আগ্রহী করার জন্য কাজ করছি। সেটারই একটা পার্ট হচ্ছে রোবট বানাই এবং রকেট মেকিং ওয়ার্কশপ।

এ পর্যন্ত আমরা পাঁচটি প্রোগ্রাম করেছি। যেখানে আমরা প্রায় ছয় শতাধিক শিশুকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্পেস ক্যাম্প আগামী অক্টোবরে রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আয়োজন করতে যাচ্ছি। তিনদিনের একটি ক্যাম্প হবে। দুই হাজার শিশু সেখানে সেখানে অংশ নেবে। নার্সারি থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত তিনটা ভাগে তারা জয়েন করবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি স্বপ্ন দেখেন রকেট সায়েন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠার। এই বিষয়ে যদি কিছু বলতেন।

আরিফুল হাসান অপু: বিভিন্ন প্রোগ্রাম শেষে সবাই চলে যায়। সেটার ফলোআপ ঠিকভাবে হয় না। আমরা এই ফলোআপগুলো কন্টিনিউ করতে আগামী দুই বছরের মধ্যে একটা মানসম্পন্ন ল্যাব তৈরি করতে চাই। আমাদের মূল টার্গেট হলো দুটো। একটি শিশুদের জন্য, অন্যটি হবে সিনিয়রদের জন্য। সেখানে তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি, ও টেকনিক্যাল মেন্টরের সাপোর্ট পাবে। তারা নিয়মিত সেখানে গবেষণা করতে পারে।

আমরা পাঁচ বছর কাজ করার পরে এবার আমরা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের বাংলাদেশের একটি টিম যারা ‘লুনার ভিআর’ নামের একটা প্রজেক্টে কাজ করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম (টিম অলীক) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নাসা আমাদেরকে তাদের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে কেনেডি স্পেসে সেন্টারের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ফ্যালকন-৯ উৎক্ষেপণ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে

বাংলা ট্রিবিউন: ল্যাব তৈরি একটি ব্যয়বহুল কাজ। এগুলো আপনারা কীভাবে দেখছেন? সরকার বা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আপনারা কেমন সাড়া পাচ্ছেন।

আরিফুল হাসান অপু: ল্যাবের স্বপ্নের কথা জানানোর পরে আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই সহায়তা করতে চেয়েছেন। দেশের বাইরে থেকেও সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে আমরা একটি থ্রিডি প্রিন্টার আমেরিকা থেকে নিয়ে এসেছি। যেটি খুবই আধুনিক। টেলিস্কোপ নিয়ে এসেছি। রোবটিকসের বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট এনেছি। যেগুলো ল্যাবে আছে। এখনও ব্যবহার শুরু হয়নি। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই ল্যাবের জন্য সহায়তা করতে প্রস্তুত আছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আরিফুল হাসান অপু: বাংলা ট্রিবিউনকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

শ্রুতিলিখন: রাসেল হাওলাদার

 

/এইচএএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গোয়ালন্দে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কিত কৃষক-খামারিরা
গোয়ালন্দে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কিত কৃষক-খামারিরা
বেবিচকের নতুন চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক  
বেবিচকের নতুন চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক  
রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন ফের পিছিয়েছে
রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন ফের পিছিয়েছে
বৃহস্পতিবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
বৃহস্পতিবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
ঢাকা সিটি কলেজক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!