X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

‘এখন ব্র্যান্ড নয়, একটা ল্যাপটপ হলেই চলে!’

হিটলার এ. হালিম
১৪ অক্টোবর ২০২০, ১৫:০১আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৪:০৭

ল্যাপটপ

যেসব ব্যবসায়ী আগে মাসে ২০-২৫টি ল্যাপটপ বিক্রি করতেন, তারা এখন বরাদ্দই পাচ্ছেন ২-৩টি। ল্যাপটপ সংকট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, আগেভাগে বিক্রেতাদের বলে রেখেও ল্যাপটপ মিলছে না। ফলে কোনও বাছবিচার নেই, নেই ব্যান্ডের চাহিদা। ল্যাপটপ যেন একটা হলেই চলে। কোর আই থ্রি, ফাইভ বা সেভেন—সবই এখন চাহিদার এক কাতারে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব ল্যাপটপ বিক্রির আশা ছেড়ে দিয়ে তারা স্টক ভারি করেছিলেন, অবিক্রীত হিসেবে খাতায় তুলেছিলেন—এই ক’দিনে সেই স্টকও খালি।

প্রযুক্তি বাজার ঘুরে জানা গেলো, আগস্ট মাসে সর্বাধিক ২৬ হাজারের বেশি ইউনিট ল্যাপটপ বিক্রি হয়েছে, জুলাই মাসে যা ছিল ২২ হাজার ইউনিটের বেশি। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ইউনিটের নিচে। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১২-১৫ হাজারের মধ্যে। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর দুই-তিন আগে প্রতিমাসে এই সংখ্যায় (২০-২৫ হাজার ইউনিট) ল্যাপটপ বিক্রি হতো। বর্তমানে আবারও সেই ধারা ফিরে এসেছে। প্রচুর পরিমাণে ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে তারা বলছেন করোনা পরিস্থিতির কথা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২-১৩ সালে দেশে ডেস্কটপ কম্পিউটার (পিসি) ও ল্যাপটপ বিক্রির অনুপাত ছিল ৬০:৪০। ২০১৭ সালের পর থেকে এই অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫০:৫০। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালের পর থেকে দেশে উচ্চ কনফিগারেশনের স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়ে যায়। ফলে এ সময় ল্যাপটপ বিক্রি কমে বাড়তে থাকে পিসি বিক্রি। বর্তমানে ল্যাপটপের বিক্রি বাড়লেও কমেনি পিসি বিক্রি। উচ্চ কনফিগারেশনের পিসি বিশেষ করে গেমিং পিসির বিক্রি বেড়েছে এ সময়ে। গড়ে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দামের পিসি বিক্রি হচ্ছে বেশি। প্রযুক্তি পণ্যের পরিবেশকরা পিসি বিক্রির বেজ প্রাইস বা ভিত্তিমূল্য ধরছেন ৮০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যুগ্ম মহাসচিব মুজাহিদ আল বেরুনি সুজন বলেন, ‘আগামীতে সংকট আরও বাড়বে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের আগে বলা যাবে না পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে।’ তিনি জানান, প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদকরা করোনার সময়ে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন, কর্মী ছাঁটাই করেছেন উৎপাদন ও প্রযুক্তি পণ্যের কমপোনেন্ট (একসেসরিজ) নির্মাতারা। ফলে সব কমপোনেন্ট একসঙ্গে না পাওয়ায় উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে। স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাজারে ল্যাপটপের চাহিদা ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। ডিলারদের ল্যাপটপ দিতেই পারছি না। যেখানে সংশ্লিষ্ট ডিলার মাসে বিক্রি করতো ২০-২৫ ইউনিট ল্যাপটপ। এখন তাদের বিক্রি নেমে এসেছে মাত্র ২-৩টিতে। একেবারে কাড়াকাড়ি অবস্থা। আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতেই পারছি না।

এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের পরিবেশক ইউসিসির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সারওয়ার মাহমুদ খান বলেন, ‘প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে- এটা আমাদের বাড়তি বিজনেস দিচ্ছে। বাড়তি বিজনেস সব সময়ই ভালো। কিন্তু এটা সাময়িক। এই বাড়তি বিজনেসের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করা যায় না। দেখা যাক কতদিন এমন গ্রোথ থাকে। তবে গ্রোথের এই ধারা আরও কিছুদিন চলবে বলে হচ্ছে।’ তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে ল্যাপটপ ও পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সংকট তীব্র হচ্ছে। তার ধরণা, এই সংকট আগামীদিনগুলোতে আরও বাড়বে। তিনি জানান, গ্রাফিকস কার্ড, মাদারবোর্ড, মনিটরের সংকট সামাল দেওয়া যাচ্ছে। কারণ, একটা না একটা ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট বাজারে ঢুকছে। সেটা দিয়ে চাহিদা মোটামুটি সামাল দেওয়া যাচ্ছে।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদা এখন এমন যে, কেউ আর কোনও ব্র্যান্ডের নাম ধরে বা মডেল হিসেবে ল্যাপটপ আছে কিনা জানতে চায় না। শুধু জানতে চায় ল্যাপটপ পাওয়া যাবে কিনা। তবে অনেকেই একটা পেয়ে গেলে জানতে চান, তার পছন্দের ব্র্যান্ড বা মডেলটা পাওয়া যাবে কিনা। যিনি কোর আই ফাইভ কিনতে এসেছিলেন তিনি সেটা না পেয়ে কোর আই-থ্রি খুঁজছেন। না হলে দেখছেন কম জেনারেশনের প্রসেসরের কোনও ল্যাপটপ পাওয়া যায় কিনা। এরকম দেখা গেলো রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে। এ দোকান, ও দোকান ঘুরে ক্রেতারা ল্যাপটপের খোঁজ করছেন। না পেলে বেরিয়ে পড়ছেন এলিফ্যান্ট রোডের কম্পিউটার মার্কেটের দিকে। গত মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) বিসিএস সিটি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, আমরা কিছু পণ্য সব সময় স্টকে রাখি আর কিছু পণ্য তুলে রাখি একেবারে নেই বলে। যাতে হঠাৎ কোনও চাহিদা এলে সামাল দিতে পারি। আমাদের সেই ব্যাক স্টকও শেষ। এখন আমরাই এর ওর স্টক চেক করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসার ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের মানেজার (কমার্শিয়াল বিজনেস) সারওয়ার জাহান সোহেব জানান, ‘এ সময়ে এসার পণ্যের বিক্রিতে তিনি বেশ খুশি, বিশেষ করে ল্যাপটপে সেগমেন্টে। তিনি বলেন, ‘মার্কেটের এমন ঊর্ধ্বগতি বেশিদিন থাকবে না। মার্কেট ছোট হবে তবে গ্রোথ থাকবে।’ সেই গ্রোথের (প্রবৃদ্ধি) পরিমাণ অন্তত ১০ শতাংশ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে