X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে প্রযুক্তিখাতে আলো ছড়িয়েছে ‘গিগ অর্থনীতি’

হিটলার এ. হালিম
১৯ আগস্ট ২০২০, ১২:৩০আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২০, ১২:৫৮

গিগ অর্থনীতি

করোনাকালে দেশের প্রযুক্তিখাতে আলো ছড়িয়েছে ‘গিগ অর্থনীতি’। ফলে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে দেশের সফটওয়্যার, সেবাপণ্য, কো-ওয়ার্কিং স্পেস, স্টার্টআপ ইত্যাদি খাতে। করোনার এই সময়ে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া এসব খাত আবারও সুদিন দেখছে রিসোর্স শেয়ার করে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু রেখে, অফিস ছোট করে বা কো-ওয়ার্কিং স্পেসে গিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গিগ ইকোনমি প্রযুক্তি খাতে সুদিন ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মানুষ নতুন সিস্টেমে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। সুদিন ফিরলে এই ইকোনমি তুমুল জনপ্রিয়তা পাবে দেশে।

গিগ ইকোনমি হলো এক প্রকার পার্টটাইম কাজ। ধরা যাক, কোনও প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ না করে অল্প সময়ের জন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ কর্মী বিশেষ শর্তের আওতায় নিয়োগ করে। সেসব বিশেষজ্ঞ কর্মীর নিয়ম মেনে অফিস করতে হয় না। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাহিদা মোতাবেক কাজ করে দেন। তারা একইসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তবে ধরাবাঁধা নিয়মে কোনও অফিস করেন না। তারা তাদের জ্ঞান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার করেন। মাস শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে তাদের আয় ভালো হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠান ও কর্মী দুই পক্ষই খুশি থাকে। সামগ্রিকভাবে এটাই হলো গিগ ইকোনমি।

প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গিগ ইকোনমিকে শেয়ারড ইকোনমিকও বলা হয়ে থাকে। একই রিসোর্স একসঙ্গে অনেকে শেয়ার করতে পারে। এতে করে দক্ষ কর্মীদের ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়। সংশ্লিষ্টরা আরও মনে করেন, যেহেতু আমাদের দেশে প্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। ফলে এই সময়ে রিসোর্স শেয়ারের বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে।

জানা গেছে, গিগ ইকোনমি আমাদের দেশে বেশ আগে থেকেই আছে। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং, রাইড শেয়ারিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, কো-ওয়ার্কিং স্পেস ইত্যাদিতে অনেক আগে থেকেই এই মডেলে কাজ হচ্ছে। কিন্তু করোনার এই সময়ে বিষয়টি বেশি করে উপলব্ধি করছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, করোনার ফলে লকডাউনের সময় অনেক সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য নির্মাতাদের অফিস বন্ধ ছিল। ফলে আয় ছিল না কোনও। অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতন, ইউটিলিটি চার্জ অন্যান্য খরচ সামাল দিতে রীতিমতো তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এর থেকে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে উদ্যোক্তারা অফিস ছোট করা, ক্ষেত্র বিশেষে ছেড়ে দেওয়া, কর্মী ছাঁটাই করা, বেতন কমানো, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কমিয়েও যখন টিকে থাকতে পারছেন না ঠিক এ সময়ে সামনে চলে এলো গিগ অর্থনীতি। এই অর্থনীতিকে অবলম্বন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন এখন প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে দেশের সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য নির্মাতাদের সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, আমরা উদ্যোক্তাদের বুঝিয়েছি রিসোর্স শেয়ার করেও টিকে থাকা সম্ভব। অফিস ছোট করে বা কর্মীদের বেতন কমিয়েও যদি না হয় তাহলে দক্ষ কর্মীদের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ দিয়ে সেই কর্মীর বেতন সবাই মিলে শেয়ার করলে ভালো কাজ যেমন পাওযা সম্ভব তেমনি টিকে থাকাও সম্ভব। সারা দুনিয়ায় এখন এটা ফলো করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, কর্মী ছাঁটাই করলে অর্থনীতির ওপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বরং কর্মী ছাঁটাইয়ে না গিয়েও সমস্যার সমাধানে যাওয়াই ভালো।

সৈয়দ আলমাস কবীর আরও বলেন,এখনকার এই অবস্থা স্বাভাবিক হতে ২-৩ বছর লেগে যাবে। এ সময়ে জনপ্রিয় হবে গিগ অর্থনীতি। এ অর্থনীতির আওতায় একজন কর্মী বেশি আয় করতে পারবে, সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হবে। ফলে দক্ষ কর্মী বাহিনীও তৈরি হবে। একজন কর্মী একইসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।

গৃহস্থালি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেবা ডট এক্সওয়াইজেড উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। সেবা নিজেদের সাইটে (মার্কেট প্লেসে) বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের জায়গা করে দিয়ে সেই উদ্যোক্তাদের সেবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিচ্ছে। সেবা গ্রহীতারা সেবার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সেইসব উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিচ্ছেন। ২০১৬ সালে সেবা তাদের সাইটে ১৪২ জন উদ্যোক্তা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০১৮ সালে এসে সেবার উদ্যোক্তা সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ হাজারে। বর্তমানে তা ২০ হাজারের বেশি বলে জানা গেছে।

দেশে গড়ে উঠেছে একাধিক রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠান। নিজের রাইড যাত্রীদের সঙ্গে শেয়ার করে অনেকেই বাড়তি আয় করছেন। আবার অনেকেই এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ফুড ডেলিভারি, ই-কুরিয়ার, রান্না করা খাবার সরবরাহ, ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার মতো সার্ভিস প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা ইত্যাদি গিগ ইকোনমিতে আলো ফেলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু করেছে মার্কেট প্লেস প্ল্যাটফর্ম। সেসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনেকে ব্যবসা করছেন। যাদের ই-কমার্স নিয়ে বড় পরিসরে যাওয়ার সুযোগ নেই তারা বড় বড় মার্কেট প্লেস, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা বাড়াচ্ছেন।

স্টার্টআপদের জন্য সুযোগ হয়ে এসেছে কো-ওয়ার্কিং স্পেস। বড় অফিস ভাড়া নেওয়ার টাকা নেই, অফিস ফার্নিচার কেনা, বিলের জন্য রেডি হওয়া বড় ঝামেলার কাজ। এসব চিন্তা না করে স্টার্টআপরা সহজেই কো-ওয়ার্কিং স্পেসে একটা বা দুটো সিট (চেয়ার বা ছোট কক্ষের অফিস) ভাড়া নিতে পারেন। এরকম ১৩টি কো-ওয়ার্কিং স্পেসের খোঁজ পাওয়া গেছে। গিগ ইকোনমিতে এই করোনাকালে আলো ছড়াচ্ছে কো-ওয়ার্কিং স্পেস ধারণা। এমনই একটি কো-ওয়ার্কিং স্পেস ‘কো-স্পেস’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ ইবনে ওয়াহাব বলেন, করোনার এই সময়ে অনেকে অফিস ছেড়ে দিয়ে আমাদের এখানে স্পেস নিচ্ছেন। কেউ নিচ্ছেন একেবারে ছোট অফিস। দুই বা চার জন বসতে পারেন এমন স্পেস নিয়ে বাকি কর্মীদের হোম অফিস করার সুযোগ দিয়েছেন। ফলে অফিস খরচ যেমন কমেছে তেমনি ভালো একটা লোকেশনে অফিস ঠিকানা ব্যবহার করা যাচ্ছে, যা ক্লায়েন্টদের কাছে ভালো একটা ভাবমূর্তি তুলে ধরছে প্রতিষ্ঠানটির।

বেসিস বলছে, বিশ্বের আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশ এখন ৩ নম্বর অবস্থানে (কর্মী সংখ্যায় বিশ্ববাজারের ১৬ শতাংশ) রয়েছে। দেশের ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি। এরমধ্যে মাসিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করে ৫ লাখের কিছু বেশি। তাদের বেশিরভাগই তরুণ। চাকরি না করে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। ১৬ শতাংশর বেশিরভাগই ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করতে বেশি উৎসাহ পাচ্ছে। তারা ডাটা এন্ট্রি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ বেশি করছে।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত