X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

ই-কমার্সে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ নেই কেন?

হিটলার এ. হালিম
০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০০আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১৬

মুন্সিজি ডট কমের হাত ধরে বাংলাদেশ ২০০০ সালে প্রথম ই-কমার্স জগতে প্রবেশ করে। সে সময় ই-কমার্সের পোশাকি নাম ছিল ‘অনলাইন স্টোর’। এরও অনেক পরে এসে দেশে ই-কমার্স ডালপালা মেললো, শক্ত ভিত পেলো, কিন্তু কখনোই ই-কমার্স খাতের কোনও অভিভাবক ছিল না। আজ এতদিনেও ই-কমার্সের কোনও লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ নেই। খাত-সংশ্লিষ্টদের আশা— নিয়মতান্ত্রিক উদ্যোগ, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন, শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মার্কেট পুনর্নির্মাণ, ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার মতো উদ্যোগ নিলে ই-কমার্স খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে গঠন করেছে ‘ডিজিটাল কমার্স সেল’। অপরদিকে আছে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-ক্যাব। সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতাদের সংগঠন বেসিস ২০১৫ সালে ‘বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্স’ গঠন করলেও সংগঠনটির তেমন কোনও সক্রিয় কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ফলে ই-কমার্স খাতের সাম্প্রতিক সময়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে— তাহলে এই খাতের অভিভাবক কে? 

জানা গেছে, দেশে ই-কমার্সের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিলেই হয়। যদিও ট্রেড লাইসেন্সে ‘ই-কমার্স’ নামে কোনও অপশন নেই। আইটি ব্যবসা বা কোনও ব্যবসার কথা লিখে ব্রাকেটে ই-কমার্স লিখতে হয়। অপরদিকে সরকারের যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর (আরজেএসসি) থেকে কোম্পানি নিবন্ধন নিয়েও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু করা যাচ্ছে। ফলে কোথাও সরাসরি ই-কমার্স নিয়ে কাজ হচ্ছে না। সরকার বছর তিনেক আগে ‘ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত -২০২১)’ করেছে। সংশোধিত নীতিমালা অনুসারে ই-কমার্স পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও সবাই তা মানেছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।     

দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স উদ্যোগ ‘আজকের ডিলের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম মাশরুর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ই-কমার্সের জন্য নতুন কোনও লাইসেন্স করার প্রয়োজন নেই। লাইসেন্স করলে এই খাতে যে হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছে, তাদের খরচ বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘যা দরকার সেটা হচ্ছে— বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। প্রতারণা ঠেকানোর জন্য অনেক আইন আছে, তার প্রয়োগ করতে হবে। বেশিরভাগ প্রতারণা ঘটে অ্যাডভান্স পেমেন্ট ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে কোনও পেমেন্ট অ্যাডভান্স নেওয়া হলে, সেটার ডেলিভারির আগে পর্যন্ত টাকা কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্টে না দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি দরকার— যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিয়ে উদাহরণ তৈরি করা। যাতে অন্যরা তাদের অনুসরণ করতে না পারে।’

এদিকে ভিন্নমত পোষণ করেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রিয়শপ ডট কমের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খাঁন। তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে প্রি-পেমেন্ট সিস্টেম আছে, আমাদের দেশে সমস্যার কারণে বন্ধ করতে যাচ্ছি। কয়েকজন করাপটেড ই-কমার্স উদ্যোক্তার কারণে আজ এমনটা হয়েছে। মার্কেট নষ্ট হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে।’  তিনি আরও বলেন, ‘ই-কমার্সে ক্রেতাদের আস্থা ভীষণভাবে নষ্ট হয়েছে। সেটা পুনরুদ্ধার করতে সময় লাগবে। এ সময়ে মনিটরিং বাড়াতে হবে।’

তিনি মনে করেন, শুধু ডিজিটাল কমার্স সেল থাকলেই হবে না। প্রয়োজন লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষও। তাহলে ই-কমার্স নিয়ে এখন যা হচ্ছে, সেসব হতো না।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থাকা প্রয়োজন কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘‘অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে আমরা মনে করি, ট্রেড লাইসেন্সে ‘ই-কমার্স’ নিয়ে একটা আলাদা ক্যাটাগরি করা যেতে পারে। তাহলে ই-কমার্সের জন্য ইতিবাচক হয় বিষয়টি। আমরা আরও মনে করি, দুই-একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির দায় কেন সব ই-কমার্সকে নিতে হবে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান, যারা এ ধরনের দুর্নীতি করে বা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া, শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৃথক নিয়ম কানুন করা যেতে পারে।’ তিনি মনে করেন, সরকারের উচিত ই-কমার্সের এন্ট্রিটাকে আরও সহজ করা। কঠিন হলে এ খাতে উদ্যোক্তারা আসতে উৎসাহী হবে না।

নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বলেন, এ দেশে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানেরও লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ আছে। অথচ যে কুরিয়ার সেবা প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়, তাদের কোনও কর্তৃপক্ষ নেই। এটা থাকা দরকার। অনেক সময় পার হয়ে গেছে। তার বিশ্বাস, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থাকলে ই-কমার্স খাতে এ ধরনের নৈরাজ্য চলতো না। অভিযোগ উঠলে লাইসেন্স হারানোর ভয় থাকতো, কর্তৃপক্ষের কাছে জমা রাখা বন্ড এনক্যাশমেন্ট’র (নগদায়ন) ভয় থাকতো। ফলে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকতো।

/এপিএইচ/ইউএস/
সম্পর্কিত
ইভ্যালির রাসেল ও শামীমার তিন বছরের কারাদণ্ড
প্রতারণা মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড
প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামীমার কারাদণ্ড 
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে আরও তিন জনের করোনা শনাক্ত
চট্টগ্রামে আরও তিন জনের করোনা শনাক্ত
ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক!
ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক!
বিসিসিআইর গাইডলাইন অমান্য করেও শাস্তি পেলেন না জাদেজা
বিসিসিআইর গাইডলাইন অমান্য করেও শাস্তি পেলেন না জাদেজা
রাশিয়ার কাছে প্রথম স্বীকৃতি পেলো তালেবান
রাশিয়ার কাছে প্রথম স্বীকৃতি পেলো তালেবান
সর্বাধিক পঠিত
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল