দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তার কারণে আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে রংপুর বিভাগ ছাড়া সব বিভাগের ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, ফেনী, সিলেটের নদীগুলোর পানি বাড়ছে দ্রুত। আগামী দুই দিন এই ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে করে আগামী তিন দিন এসব এলাকার নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে কিছু নদীর পানি বিপদসীমার অতিক্রম করারও শঙ্কা রয়েছে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় ও অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজকের মতো আগামীকাল বুধবারের পূর্বাভাসেও বলা হয়, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এসিকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা ২৪, টাঙ্গাইল ও নিকলিতে ১৬, তেতুলিয়া, রাজশাহী ও ফরিদপুর ১১, মাদারীপুর ২৬, গোপালগঞ্জ ৭৪, ময়মনসিংহ ও আরিচা ১৫, নরসিংদী ২০, নারায়ণগঞ্জ ৪১, ঈশ্বরদী ১৯, বগুড়া ১২ বদলগাছী ৪, তাড়াশ ১৬, বাঘাবাড়ী ৯, নেত্রকোনা ২৫, সিলেট ৪১, শ্রীমঙ্গল ২১, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ৫০, রাঙামাটি ৫২, কুমিল্লা ৬০, চাঁদপুর ৩৮, মাইজদীকোর্ট ১৮৯, সন্দ্বীপ ১৬৬, সীতাকুন্ড ৭৬, হাতিয়া১৪৪, কুতুবদিয়া ২০, টেকনাফ ১৩৫, আমবাগান ৮১, বান্দরবান ৫৯, রামগতি ২২৫, খুলনা ৫৮, মোংলা ১১৩, সাতক্ষীরা ৯৭, যশোর ৩৩, চুয়াডাঙ্গা ২৭, কুমারখালী ১০, কয়রা ৯০, বরিশাল ৮৩, পটুয়াখালী ২৪৮, খেপুপাড়া ১১৫, ভোলা ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, ফেনী, সিলেটের নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনো প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরি, হালদা, গোমতী, ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোমতী, মুহুরী, ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীগুলোর অববাহিকায় আগামী দুই দিন পর্যন্ত ভারী থেকে অতি-ভারী এবং তৃতীয় দিন মাঝারি-ভারী থেকে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। নদীগুলোর পানি আগামী তিন দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে। আগামী ২ দিন ফেনী জেলার মুহুরি নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
সিলেট বিভাগের কংস নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যাদুকাটা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং সারিগোয়াইন ও সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অববাহিকায় আগামী দুই দিন পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী এবং তৃতীয় দিন মাঝারি-ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। ওই নদীগুলোর পানি আগামী তিন দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সিলেট জেলার সারিগোয়াইন নদী, সুনামগঞ্জ জেলার যাদুকাটা নদী ও নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
সুরমা-কুশিয়ারা নদীগুলোর পানি বাড়ছে; নদীগুলোর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে; তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী দুই দিন পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী এবং তৃতীয় দিন মাঝারি-ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগামী দুই দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে, তৃতীয় দিন বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি কমছে। নদ-নদীর পানি কমা আগামী দুই দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে ও তৎপরবর্তী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি কমছে। নদীগুলোর পানি আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে; এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।