X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিপজ্জনক রাজনৈতিক খেলায় বিএনপি

মো. জাকির হোসেন
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৬আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৬

শিরোনাম দেখে কেউ আমার ওপর ক্ষুব্ধ হতেই পারেন। আন্দোলন না বলে রাজনৈতিক খেলা কেন বলছি, কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন। সরকার অপসারণ করতে জনগণকে নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সীমিত থাকছে না বিএনপি। বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের চেয়েও বিএনপি বিদেশি শক্তি ব্যবহার করে সরকার উৎখাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ঘন ঘন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছে, লাঞ্চ, ডিনার করছে। বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছে গোপন চিঠি পাঠাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর কাছে লবিং করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে। সেই সঙ্গে ভাড়াটিয়া ওয়াগনার বাহিনীর মতো সাইবার সৈনিক নিয়োগ করেছে দেশে দেশে। এদের কেউ কেউ মিডিয়া ক্যু করতে সরকারবিরোধী ফিকশন থ্রিলার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’, ‘আয়না ঘর’, ‘বাংলাদেশের ‘‘ডেথ স্কোয়াডের’ ভেতরের কথা’ এমন সব সিরিজ তৈরি করছে। এসব ফিকশন বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচারও করছে। ইউটিউবে নিযুক্ত সাইবার জঙ্গিরা তো মিথ্যাকে শিল্পে পরিণত করেছে। গোয়েবলস বেঁচে থাকলে এদের গুরু মানতো হলফ করে বলতে পারি।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদদৌলাকে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়নি। বরং, মীরজাফর, ঘসেটি বেগম, উমিচাঁদ, কৃষ্ণবল্লভ, জগৎশেঠ, ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ গং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্লাইভ ও ওয়াটসন গংদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বিএনপি আন্দোলনকে প্রধান মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার না করে এ যুগের ক্লাইভ-ওয়াটসনদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পথ বেছে নিলো কেন? কারণ, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার মতো রাজনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশে বিরাজ করছে না।

গণতন্ত্র ও নির্বাচনজনিত কষ্ট অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও দৃশ্যমান মেগা প্রকল্পের সুফল অনেকখানিই প্রশমন করতে সক্ষম হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনিশিয়েটিভের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যথার্থই বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা যেমন আছে, তেমনি অনেক সাফল্যও আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এখনও জনপ্রিয়তা আছে। এই সরকার দেশের জন্য আরও সাফল্য আনতে পারে।’ এ অবস্থায় সরকার পতনে গণঅভ্যুত্থান অসম্ভব বলেই প্রতীয়মান হয়।

বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলছে। তাদের কথিত রাষ্ট্র ধ্বংসের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করছে। তার মানে বিএনপির শাসন আমলের ভয়ংকর দুঃশাসনের জন্য কোনও ভুল স্বীকার কিংবা অনুশোচনা তাদের নাই। মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি মনে রাখা উচিত যে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বর্তমানে বিরোধী দল বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন একই ধরনের কৌশল নিয়েছিল। তখনও দমন-পীড়ন, গুম ছিল। আজ যা যা ঘটছে তার অনেক কিছুই বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও ঘটেছে। আমি মনে করি, এটি স্মরণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’

বিএনপির সময় রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র কেমন ছিল তার কিছু উদাহরণ আমি সে সময়ের সংবাদপত্রের শিরোনাম থেকে উল্লেখ করছি– ‘খবরটি লজ্জার অপমানের: ট্রান্সপারেন্সির সূচকে বাংলাদেশ টানা পঞ্চমবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ’; ‘দুর্নীতি, বিশ্বব্যাংক টাকা ফেরত চায়’; ‘তারেক, বাবর, হারিছ, মামুন বিএনপির চার মহাদুর্নীতিবাজ’; ‘শিপিং মন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ডেনমার্ক ২৫০ কোটি টাকার সাহায্য প্রত্যাহার করেছে’; ‘বিমানকে নিঃস্ব করে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন শামীম এস্কান্দর’; ‘গ্যাটকোকে কাজ পাইয়ে দিতে টাকা নিয়েছিলেন কোকো’; ‘পুলিশ নিয়োগে দলীয়করণ ও অর্থের লেনদেন হয়েছে’; ‘মামুনের খাম্বা সিন্ডিকেট লুটে নিয়েছে বিদ্যুৎ খাতের হাজার কোটি টাকা’; ‘জোট সরকারের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সমবায় ব্যাংকে দেদার লুট’; ‘ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ’; ‘১০০ প্লটের ৮৪টিই পেলেন বিএনপির মন্ত্রী-সাংসদরা’; ‘দুর্নীতির দায়ে এডিবি বন প্রকল্পে সাত কোটি টাকা সহায়তা বাতিল করেছে’; ‘প্রশাসন বিএনপি-জামায়াতের কব্জায়’; ‘জঙ্গিদের মদতদাতা বিএনপির ৮ মন্ত্রী-সাংসদ’; ‘আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে পুলিশের তাণ্ডব’; হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের জনসভায় বিস্ফোরণে আরও ৪ জনের মৃত্যু, আহত ৭০’; ‘পুলিশের লাঠিচার্জে নাসিম-মতিয়াসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আহত’; ‘কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা’; ‘সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত’; ‘গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া নিহত’।

এ কথা অনস্বীকার্য, সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই সময় জঙ্গিবাদের উল্লম্ফন উত্থান হয়েছে। ৬৩ জেলায় জঙ্গিরা একযোগে বোমা হামলা করেছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জঙ্গি ও রাষ্ট্রযন্ত্র মিলে আওয়ামী লীগের জনসভায় সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে গেলেও ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। বেগম জিয়ার শাসনামলে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলাও শুরু করে। অন্ততপক্ষে ১০টি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয় তিন মাসের ব্যবধানে। এতে বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক কর্মী, পথচারীসহ ৩০ জন নিহত এবং কয়েকশ’ আহত হয়। ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা UNODC-র যৌথ প্রকাশনা “Asset Recovery Handbook”-এর ৫৩ ও ১৯৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ও এফবিআইর ওয়েবসাইটে খালেদা জিয়ার প্রয়াত সন্তান আরাফাত রহমান কোকো কর্তৃক ৩০ লাখ ডলার দুর্নীতির কথা উল্লেখ রয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের রাত থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোটের পুরো শাসন আমলজুড়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে ভয়ংকর নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে তা নজিরবিহীন। এসব ঘটনাই বিএনপির দুঃশাসনের সাক্ষ্য দিচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত যে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল তাতে আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছিল কয়েকশ’ নিরীহ মানুষ। অতীত দুঃশাসন ও সহিংসতার জন্য অনুশোচনা না করলে মানুষ কোন ভরসায় আন্দোলনে শামিল হয়ে সরকারের পতন ঘটানোর ঝুঁকি নেবে?

বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রমকে যে কারণে বিপজ্জনক বলছি, তা হলো –

এক. সরকার পতনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলছে বিএনপি। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের এই রায় রিভিউর মাধ্যমে পরিবর্তন করা ছাড়া সরকার একতরফাভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করলে তা সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হবে না কি?

সর্বোচ্চ আদালতকে অবজ্ঞা করা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক নয় কি?

দুই. বিএনপির চাওয়া সরকারের পদত্যাগ। সরকার প্রধান মন্ত্রিসভাসহ পদত্যাগ করলে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্যপদ বহাল রাখবেন এটি কি আশা করা যায়? আর সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন কাদের দিয়ে হবে? এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ওয়ান ইলেভেনের পুনরাবৃত্তির বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না, সেই নিশ্চয়তা আছে কি?

তিন. তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে প্রদত্ত রায়ে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে তথা বিচার বিভাগকে এর সঙ্গে না জড়ানোর কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রয়াত প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একজন প্রধান বিচারপতিকে সম্পৃক্ত করায় যথার্থই বলেছেন, এর ফলে সুপ্রিম কোর্টে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। আর কয়েক বছর বিচারপতিদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা থাকলে বোধকরি সুনামি হয়ে যেত। বিচারপতিদের বাদ দিলে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার বদলে কাদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে সেই রূপরেখা ছাড়া সরকার পদত্যাগ করলে শূন্যস্থান কি ভয়ানক বিপদ ডেকে আনবে তা বিবেচনা করে দেখেছি কি?

বিচারকদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলেও বিপদমুক্ত হওয়ার নিশ্চয়তা আছে কি? ওয়ান ইলেভেনের সময় তো সাংবিধানিকভাবেই বিচারপতিদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।

চার. সিরাজকে সরিয়ে মীরজাফর ক্ষমতায় আরোহণ করতে ক্লাইভ-ওয়াটসনদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সিরাজকে উৎখাত ও হত্যার পর ক্লাইভরা মীরজাফরকে মাত্র তিন মাস ক্ষমতায় রেখেছিল। তারপর মীরজাফরকে অপসারণ করে দুইশ’ বছরের গোলামির শাসন চালু করে এই উপমহাদেশে।

পাঁচ. আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালুপ ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার দুই দশক পর বেশিরভাগ ইরাকি মনে করেন, সাদ্দাম হোসেনের জমানায় দেশ ভালো ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকি অভিমত দেন, ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকে সে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকের ১৮টি প্রদেশে জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা অনুযায়ী ২ হাজার ২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইরাকির সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করে এই জরিপ চালিয়েছে গ্যালুপ ইন্টারন্যাশনাল।

ছয়. ২০১৯ সালে গণবিক্ষোভের মুখে সুদানে ওমর আল বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মানুষ গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিল। বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেনাবাহিনী ঘোষণা করে, সামরিক কাউন্সিল দু’বছরব্যাপী অন্তর্বর্তী প্রশাসন চালাবে, এবং তারপর নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার এই ঘোষণা জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে সামরিক-বেসামরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিকদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে, কারাবন্দি করে এককভাবে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। বশিরের ক্ষমতাচ্যুতির পঞ্চম বছরেও গণতন্ত্র সুদূরপরাহত সুদানে।

উপরন্তু, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সামরিক কাউন্সিলের শীর্ষ দুই নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর বিরোধে ভয়ংকর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে চার শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

এটি কেবল দুই জেনারেলের স্বার্থের দ্বন্দ্ব নয়, বিদেশি শক্তির স্বার্থের সংঘাতে রক্তাক্ত হচ্ছে সুদান। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফট ভ্যালি ইনস্টিটিউটের সুদানি বিশ্লেষক মাগদি এল-গিজৌলি বলেন, সবাই সুদানে একটি ভাগ চায়। সবার হস্তক্ষেপ আর স্বার্থের অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অনেক বেশি দাবির ফলে দেশটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কয়েকটি পরাশক্তির একটি পক্ষ বেছে নেওয়া ও সেই পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে সুদানের গণতন্ত্রপন্থি শক্তিগুলোকে দুর্বল করা হয়েছে। এইভাবে খার্তুমের রাজপথে লড়াইরত সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সহায়তার মাধ্যমে দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে সহযোগিতা করেছে। এমনকি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপও জড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক এসব সক্রিয়তাকে অপ্রত্যাশিত মনে হতে পারে। কিন্তু এতে দেশটির জটিল পরিস্থিতি উঠে আসছে, যা দুই জেনারেলের সংঘাত শুরুর আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। বছরের পর বছর ধরে সুদানকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা চলমান ছিল। ২০১৯ সালের বিপ্লবে বশিরের পতনে দেশটিতে একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ উদয় হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক শূন্যতা আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশে বহিরাগত শক্তিগুলোর নিজেদের স্বার্থ হাসিলের নতুন সুযোগ তৈরি করে। কৌশলগতভাবে নীল নদ ও লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত দেশটিতে রয়েছে প্রচুর খনিজসম্পদ, বিশেষ করে লোভনীয় স্বর্ণের খনি ও কৃষির সম্ভাবনা।

সাত. বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থান দেশের এক অমূল্য সম্পদ। সেই সঙ্গে সুবিশাল সমুদ্রসীমায় রয়েছে অফুরান প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার তথা সুনীল অর্থনীতির এক অপার সম্ভাবনা। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসম্পদ গবেষকরা বহুকাল আগে থেকেই বঙ্গোপসাগরকে বিভিন্ন ধরনের সম্পদের অফুরান ভাণ্ডার হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে খনিজসম্পদ রয়েছে তা পৃথিবীর আর কোনও সাগর, উপসাগরে নেই বলেও ধারণা অনেকের। মণি, মুক্তা, সোনা, রুপা, তামা, প্রবালসহ বিভিন্ন ধরনের মহামূল্যবান ধনরত্ন এখানে রয়েছে ধারণা করে ভারতবর্ষের পৌরাণিক কাহিনিতে বঙ্গোপসাগরকে রত্নভাণ্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিনিময় ছাড়া পশ্চিমারা গণতন্ত্র-মানবাধিকারের সওদা করে না। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের দাসখত অনুযায়ী কোনও পশ্চিমা রাষ্ট্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলায় ঘাঁটি গেড়ে বসে; পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন, রাশিয়া, ভারত, মিয়ানমারসহ অনেক রাষ্ট্র সক্রিয় হয়ে উঠবে নিশ্চিত করেই বলা যায়।

বিদেশি শক্তির স্বার্থের সংঘাতে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল ও রক্তাক্ত হয়ে ওঠার এক বিপজ্জনক রাজনৈতিক খেলায় জড়িয়ে পড়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ