X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা ভাষার শক্তি কি ফুরিয়ে যাচ্ছে?

মো. জাকির হোসেন
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৪আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৪

শারীরিক গঠন, ভাষা, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে মিল সত্ত্বেও বাঙালির ধমনীতে রয়েছে অস্ট্রিক, মোঙ্গলীয়, দ্রাবিড়, আর্য, পাঠান, মোগল, ইরানি বিচিত্র রক্তের স্রোতধারা। জাতিসত্তা অন্বেষণে বিভ্রান্ত, বিপর্যস্ত বাঙালি সমাজে ধর্মীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সামাজিক কুসংস্কার, সংকট, লোভ, দাসত্ব বারবার আঘাত হেনেছে। এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বাঙালি। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তাই সুদূর পরাহত হয়েছে হাজার বছর ধরে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের সৃজনশীলতা, দূরদর্শিতা, একনিষ্ঠতা, সততা ও  সাহসিকতা বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে আপাদমস্তক বিকশিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় গোঁড়ামি আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মহাজাগরণ ঘটিয়েছিল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাঙালি একাট্টা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। বাঙালির একাট্টা হওয়ার শুরু ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টো নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) দু’টি ভূখণ্ডকে নিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মতামত দেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাসহ বাংলার বুদ্ধিজীবী, লেখকগণ এর প্রতিবাদ করেন। রাষ্ট্রভাষার বিতর্কের মধ্যেই পাকিস্তানের অভ্যূদয় ঘটে। পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬ শতাংশ বাংলা ভাষী এবং ৩.২৭ শতাংশ ছিল উর্দু ভাষী। তবুও শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বাঙালিকে শোষণ করার কৌশল হিসেবে বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে। বাঙালি ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি সমাজ এই অন্যায় ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। এরপর রাজনীতিবিদরা জড়িত হন বাংলা ভাষার আন্দোলনে।

তরুণনেতা শেখ মুজিবসহ অন্যান্য ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দও প্রতিবাদ জানান। এভাবেই পূর্ব-বাংলায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সে সময়ের পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোপন নথি নিয়ে প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্যা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এর ১ম ও ২য় খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে। প্রথম খণ্ডটির সময়কাল ১৯৪৮-১৯৫০ এবং দ্বিতীয় খণ্ডটির সময়কাল ১৯৫১-১৯৫২। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ, বাংলা ভাষা-বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিশ ও মুসলিম লীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এখানে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ৪ মার্চ ঢাকা জেলা গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে কাজ করেছে তারাই বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লিফলেট ছড়াচ্ছে’। গোপন দলিলের ২৭ নং এন্ট্রিতে ১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ ও চালু করার বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর একাধিক ভাষণে জোর দিয়েছেন।’

জাতীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিলে বঙ্গবন্ধু তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য করাচি যান। সোহরাওয়ার্দীর কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বাংলার দাবির সমর্থনে তাকে একটি বিবৃতি দিতে বলেন। সোহরাওয়ার্দী মিশনে বঙ্গবন্ধু সফল হন। এ বিষয়ে ১৯৫২ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মওলানা ভাসানীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষার পক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত পরিবর্তনে মুজিব সক্ষম না হলে শুধু ভাষা আন্দোলন নয়-আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তো।” ১৯৫২ সালে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই স্বাধীন পাকিস্তানে প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই সময়ে আরও গ্রেফতার হয়েছিলেন শামসুল হক, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ অনেকে। ভাষার জন্য প্রতিবাদী আন্দোলনে পৃথিবীতে প্রথম শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ অনেকেই। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই দীর্ঘ সময়ে বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি রচনা করেছিল ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। যার প্রেরণায় দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলা ভাষা আন্দোলনের কি অমিত তেজ ও শক্তি ছিল, যা পরিণতি লাভ করে ভাষাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে।

ভাষা আন্দোলনের ধাপে ধাপে ভাষার আরও যে শক্তিমত্তা দেখতে পাই তা অতুলনীয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের আগে রাজনীতি বন্দী ছিল অভিজাত সম্প্রদায়ের হাতে। ভারতের কংগ্রেস আর পাকিস্তানের মুসলিম লীগের রাজনীতি মধ্যবিত্তের জন্য অবারিত ছিল না। কিন্তু ভাষা আন্দোলনটি সংঘটিত হয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। অভিজাত থেকে মধ্যবিত্তের রাজনীতির গোড়াপত্তন ঘটে। ভাষা আন্দোলনের আগে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতি ধর্মভিত্তিক ছিল। রাজনীতি-সমাজ বিভক্ত ছিল ধর্ম তথা সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে। ভাষা আন্দোলনে সকল ধর্মের মানুষের সম্মিলনে অসাম্প্রদায়িক তথা ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতির সূত্রপাত ঘটে। এক ধরনের সাম্যবাদের উন্মেষ ঘটে। ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে সংকীর্ণ ধর্মাচ্ছন্নতাকে ছাপিয়ে জেগে উঠেছিল জাতিগত চেতনা। সেই চেতনা আমাদের এই মর্মে সচেতন করেছে যে আমরা বাঙালি। আমরা অনুধাবন করেছি বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্বের অঙ্গীকার। বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ স্ফটিক স্বচ্ছভাবে নিজেদের সামনে উপস্থিত হওয়ার ফলে জাতি হিসেবে বাঙালি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এদেশের মানুষ অনুধাবন করে বাঙালি সংস্কৃতির উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও বিশ্বজনীনতার মধ্যে আত্মপরিচয়কে নিরাপদ রাখার এক অপূর্ব শক্তি রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে উৎসারিত চেতনাকে রাজনৈতিক শক্তিতে রুপান্তর করে বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে প্রস্তুত করেন স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের সংগ্রামের জন্য।

চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ এবং ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ এই মাইলফলকসমূহ পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির আত্মপরিচয়ের ভৌগোলিক ঠিকানা স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বুকের রক্ত দিয়ে হায়েনাদের জবরদস্তি থেকে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। আবার রক্তমূল্যে কেনা মায়ের ভাষার প্রতি এত অনাদর আর অবহেলার ঘটনাও বিশ্ব চরাচরে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অনাদর আর অবহেলার সুযোগে ইংরেজি ভাষার দাসত্ব আমাদের সত্তা আর স্বতন্ত্র পরিচিতিকে একদিকে যেমন গিলে খেতে চাইছে অন্যদিকে ভাষান্তরিত হওয়ার একটি প্রবণতাও ক্রমাগতই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের দরদ অনেকাংশেই আনুষ্ঠানিকতার ফাঁদে আটকা পড়েছে। ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা’ ওষ্ঠ সেবার মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ছে। ‘গরব’ আর মর্যাদার জায়গা এখন বাংলা নয়, ইংরেজি ভাষা। বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে মোক্ষ-জ্ঞান করেন আমাদের অনেকেই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করা মানুষদের দেখি বাংলার প্রতি অনাস্থা, অবহেলা। মাত্রাতিরিক্ত ইংরেজি প্রীতি। এর কারণও আছে। ইংরেজি বলতে পারলে ভালো চাকরি মেলে। ইংরেজি বলতে পারলে সমাজে মর্যাদা কয়েক ধাপ উন্নীত হয়। ইংরেজিতে পাঠদান করতে না পারলে মর্যাদার অবনমন হয়। বাংলায় গবেষণা প্রবন্ধ কিংবা উত্তরপত্র লিখলে তাকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়।

কোনও কোনও ক্ষেত্রে নম্বরও হেরফের হয়। ইংরেজি যেখানে অনেক মুশকিল আসান করে দেয়, সেখানে বাংলার শক্তি ক্রমাগত ফুরাবেই এ সত্যি অস্বীকার করার জো নেই। ১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘শিক্ষার বাহন’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষাকে আমাদের দেশের জিনিস করিয়া লইতে হইবে। পশ্চিম হইতে যা কিছু শিখিবার আছে জাপান তা দেখিতে দেখিতে সমস্ত দেশে ছড়াইয়া দিল, তার প্রধান কারণ, এই শিক্ষাকে তারা দেশি ভাষার আধারে বাঁধাই করিতে পারিয়াছে। অথচ জাপানি ভাষার ধারণা শক্তি আমাদের ভাষার চেয়ে বেশি নয়। নতুন কথা সৃষ্টি করিবার শক্তি আমাদের ভাষায় অপরিসীম… বাংলা ভাষাতেই আমরা উচ্চশিক্ষা দিব এবং দেয়া যায়, এবং দিলে তবেই বিদ্যার ফসল দেশ জুড়িয়া ফলিবে।’

প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের আইন ও সংবিধান সম্পর্কে সম্যক পরিচয় ও উপলব্ধি মাতৃভাষার মাধ্যমে অর্জিত না হলে দেশের প্রশাসনে নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে না এবং আইনের শাসনের আলোকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে না।’ বিচারপতি হাবিবুর রহমান বাংলায় বিচারিক রায় প্রদানের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যে-ভাষায় বিচারকর্ম সমাধা হয় না, সে-ভাষা বল সঞ্চার করে না, দুর্বল হয়ে থাকে। বাক্যগঠন ও বাক্যবিন্যাসে সে-ভাষায় ঋজুতা, দৃঢ়তা, নির্দিষ্টতা ও নিশ্চয়তার অভাব দেখা দেয়। আইন ও বিচারকার্যে ব্যবহারের ফলে একটি ভাষার উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ইংল্যান্ডে বিচারকর্মে নরম্যান-ফ্রেঞ্চ ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজির প্রচলন ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নিজেদের ভাষার কল্পিত দৈন্যের অজুহাতে অন্য ভাষার দ্বারস্থ হওয়া কোনও কাজের কথা নয়। আমাদের ভাষার দৈন্যমোচনের প্রথম পদক্ষেপটাই হবে আদালতে সেই ভাষার প্রচলন, সে ব্যবহার তেমন দক্ষহস্তে না হলেও।’ এতদসত্ত্বেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতি আমাদের অনাদর ও অবহেলা এবং বাংলা থেকে ভাষান্তরিত হওয়ার প্রবণতা স্পষ্টতই লক্ষণীয়।

যে সকল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করলে এই প্রবণতা সহজেই উপলব্ধি করা যায় তা হলো –

এক. ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধনকালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে সেদিন থেকেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে গিয়ে সে বাংলা যদি ভুল হয় তবে পরে সংশোধন করে নেওয়া হবে।’ কথা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক আদেশে বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে স্বাধীনতার তিন বছর পরেও অধিকাংশ অফিস-আদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালোবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষার পরও বাংলাদেশের বাঙালি কর্মচারীরা ইংরেজি ভাষায় নথিতে লিখবেন সেটা অসহনীয়। এ সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তী নির্দেশ সত্ত্বেও এ ধরনের অনিয়ম চলছে। আর এ উচ্ছৃঙ্খলা চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এ আদেশ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও আধা-সরকারি অফিসসমূহে কেবলমাত্র বাংলার মাধ্যমে নথিপত্র ও চিঠিপত্র লেখা হবে। এ বিষয়ে কোনও অন্যথা হলে উক্ত বিধি লঙ্ঘনকারীকে আইনানুগ শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন অফিস-আদালতের কর্তাব্যক্তিগণ সতর্কতার সঙ্গে এ আদেশ কার্যকরী করবেন এবং আদেশ লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি-বিধান ব্যবস্থা করবেন।’

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলা প্রচলনে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ আস্থা তৈরি হয়েছিলো যে, বাংলা শিখলে চাকরি পাওয়া যাবে, মিলবে সামাজিক-অর্থনৈতিক স্বীকৃতি। তাই বাংলা শেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অন্য অনেক বিষয়ের মতো বিপরীতমুখিতা সৃষ্টি হয় বাংলার ক্ষেত্রেও। বাংলার মর্যাদা হ্রাস করা হয়, সে সাথে ক্রমেই কমতে থাকে বাংলার অর্থমূল্য আর বাড়তে থাকে ইংরেজির কদর। রাষ্ট্র উপনিবেশিক কায়দায় পুনরায় ইংরেজিমুখী হয়ে ওঠে। ইংরেজির অর্থমূল্য বাড়ার প্রক্রিয়ায় শহরের অলি-গলি থেকে গ্রামের ধানক্ষেত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে শুরু করে ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডার গার্টেন।

ইংরেজি ভাষার প্রতি প্রীতি দোষের কিছু না, কিন্তু বাংলাকে বিসর্জন বা নির্বাসন দেওয়া অবশ্যই অপরাধ। অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি লেখা উত্তরপত্র যদি আপনি দেখেন মুর্ছা যাবেন। ভয়ংকর ইংরেজির কারণে অনেক সহকর্মী আমাকে পরামর্শ দেন ভাষার দিকে না তাকিয়ে ভাবের দিকে তাকিয়ে নম্বর দেবেন। আমি তাদের বলি, ওই গরুটি আমার বাবার এর ইংরেজি যদি হয় ‘দ্যাট কাউ ইজ মাই ফাদার’ তাহলে এখানে ভাব কোথায়, পুরোটাইতো ‘অভাব’। আমাদের অনেকেরই ইংরেজির অবস্থা বেশি ভালো নয়।

আমাদের ইংরেজির জ্ঞান উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উপযোগী না হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদান যে, বাধ্যতামূলক করা হলো তার পিছনে ইংরেজির অর্থমূল্য ও ভাষান্তরিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। আমাদের শিক্ষাক্রমে তিনটি পৃথক ভাষা বিদ্যমান। সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েছে ঔপনিবেশিক ইংরেজি ভাষানির্ভর শিক্ষাক্রমে। অন্যদিকে প্রান্তিক-হতদরিদ্র শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করছে দেশের মাদরাসাগুলোতে।

যেখানে আরবি ভাষাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রয়োগ হচ্ছে, বাংলা ভাষা সেখানে অনেকটা আরোপিত। সাধারণের জন্য রয়েছে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করার ব্যবস্থা। শিক্ষাক্ষেত্রে এই নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল অবস্থা আমাদের ভাষা আন্দোলনের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দুই. ভুল ইংরেজি বলা বা লিখার বিষয়ে আমরা সন্ত্রস্ত থাকি, লজ্জিত হই; কিন্তু ভুল বাংলায় আমাদের কোনও ভাবান্তর হয় না। বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অনাদর এ ভাবেই প্রকাশ পায়।

তিন. অকারণে অনাবশ্যকভাবে ইংরেজির ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। শহরের সামান্য দোকানের নামফলক থেকে শুরু করে বেতার ও দূরদর্শনের নাম, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম যা ইংরেজিতে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই সেখানেও ইংরেজিতে নামকরণ করে জাতে ওঠার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। ইংরেজি আমাদের ফুটানির ভাষায় পরিণত হয়েছে। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র লেখা হয় ইংরেজিতে। বেতার, দূরদর্শনে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা ও বাংলা উচ্চারণকে বিদেশি ভাষার আদলে উচ্চারণ এক ভয়ংকর রুপ নিয়েছে।

ছেলে-মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো আভিজাত্যের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশে ছেলে-মেয়েরা আঠারো বছর পূর্ণ হলে ডেটিং না করলে মা-বাবা তাদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর আমাদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা সারাক্ষণ ইংরেজিতে কথা না বললে জাত গেলো বলে মা-বাবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

১৮৭২ সালে ‘বঙ্গদর্শন’পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র এই শ্রেণিকে লক্ষ্য করেই লিখেছিলেন ‘লেখাপড়ার কথা দূরে থাক, এখন নব্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো কাজই বাংলায় হয় না…।

চার. রাষ্ট্রভাষার প্রতি আমাদের অনাদর আর অবহেলা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কেবল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় কাজ না হওয়ায় সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর জন্য ১৯৮৭ সনে বাংলাভাষা প্রচলন আইন করতে হয়েছে।

তারপরও অবস্থা তথৈবচ। রোগী ইংরেজি বুঝুক আর না-বুঝুক ডাক্তার সাহেব ব্যবস্থাপত্র ইংরেজিতে লিখবেনই, গ্রাহকের ইংরেজি জ্ঞান থাকুক আর না-থাকুক ব্যাংক-বীমার কাগজপত্র ইংরেজিতে লেখা হবেই, বিচারপ্রার্থীর ইংরেজি জ্ঞান যাই হোক উচ্চ আদালতের বিচার কাজ ইংরেজিতেই হবে। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইনে বলা হয়েছে, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতে সওয়াল জবাব এবং আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। উল্লিখিত কোনো কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহলে তা বেআইনি বা অকার্যকর বলে গণ্য হবে’।

বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের ৩(৩) ধারার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন অমান্য করলে তা হবে অসদাচরণ। তজ্জন্য তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাহী ও আইন বিভাগের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের ভাষা বাংলা। উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারপতিও বাংলায় রায় লিখেছেন। আদালতে রাষ্ট্রভাষার দাবিটা শুধু ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যই নয়। বরং নিজের ভাষায় রায় পাওয়ার সার্বজনীন অধিকার প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে। ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকোর্ট স্পষ্টতই বলেন, বিচারপ্রার্থীর বোধগম্য ভাষাতেই বিচার পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। একান্তই সম্ভব না হলে সেটার অনুবাদ তাকে করে দিতে হবে।

মালয়েশিয়ার সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ ও ১৯৬৩ সালের জাতীয় ভাষা আইনের ৮ ধারা মতে, আদালতের আরজি-আপিল-রায় ইত্যাদি বাহাসা ভাষায় লেখা বাধ্যতামূলক।

২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের দায়ের করা আপিল ইংরেজিতে লেখার কারণে মালয়েশিয়ার কোর্ট অব আপিল তা খারিজ করে দিয়েছিলেন। রাশিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, চীন, ফ্রান্স, জাপানসহ বিশ্বের অনেক দেশের আদালত তাদের নিজেদের ভাষায় চলে। আমাদের সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ মতে, ‘প্রকাশ্য বিচারলাভ’ মৌলিক অধিকার। অন্ধ ব্যক্তির কাছে সাদা আর কালোর মধ্যে পার্থক্য করা যেমন মুশকিল তেমনি ইংরেজি না জানা বা না বোঝা আসামির বিচার ইংরেজি ভাষায় হলে প্রকাশ্য বিচার আর গোপন বিচার তো একই কথা।

পাঁচ. প্রতিদিন মুঠো ফোনে যে ক্ষুদে বার্তাগুলো পাই তার সিংহভাগ ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা দিয়ে লেখা। ভিন্ন কোনও ভাষার বর্ণমালা দিয়ে বিশেষ কোনও ভাষা লিখতে গেলে কী বিপর্যয় ঘটতে পারে, তার উদাহরণ পাওয়া যাবে বলিভিয়ার ভাষা থেকে।

বলিভিয়ার মানুষ প্রধানত Quechua, Aymara ও Guaraní ভাষায় কথা বলতো। ষোড়শ শতাব্দীতে বলিভিয়ার খনিজ সম্পদ তেল ও সিসার আকর্ষণে যখন স্প্যানিশরা দলে দলে বলিভিয়ায় ঢুকে পড়ল, তখন দেখা দিল ভয়ংকর ভাষা-বিপর্যয়। স্প্যানিশ ভাষায় লেখা হতে লাগল বলিভিয়ার মানুষদের মনের ভাব। কয়েক বছরের মধ্যে স্প্যানিশ, আয়মারা, কুয়েছুয়া ও গুয়ারনি ভাষার মিশ্রণে সৃষ্টি হলো অদ্ভুত এক খিচুড়ি ভাষার। এক পরিসংখ্যান বলছে বলিভিয়ার ১ কোটি মানুষের মধ্যে আজ মাত্র ১০ লাখ মানুষ নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে, বাকিরা চলে খিচুড়ি ভাষায়। স্প্যানিশ ভাষা দখল করে নিয়েছে Quechua, Aymara ও Guaraní ভাষার স্থান।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে Quechua, Aymara ও Guaraní ভাষা পুনরুজ্জীবনের জন্য বলিভিয়া সরকার ভাষা প্রশিক্ষণ বৃত্তি ঘোষণা করেন। এতেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হওয়ায় সরকার প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সবত্র Quechua, Aymara ও Guaraní ভাষায় শিক্ষাদান প্রচলন করেছে। এরপরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্প্যানিশ ভাষার বদলে Quechua, Aymara ও Guaraní ভাষায় শিক্ষাদানের সরকারি এ উদ্যোগকে মেনে না নেওয়ায় ২০০৭ সনে বলিভিয়া সরকার স্কুল কর্তৃপক্ষ বরাবর নির্দেশনা জারি করেন যে, Quechua, Aymara ও Guaraní ভাষা শিক্ষা নিশ্চিত করা না হলে সে স্কুল সরকারি স্বীকৃতি পাবে না।

ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা দিয়ে যেভাবে বাংলা লেখা হচ্ছে, অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করে যে জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে আমাদেরও বলিভিয়ার ভাগ্যবরণ করতে হয় কিনা সে শংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের মতো স্বাস্থ্যদায়ক বলে অভিহিত করেছেন। রাষ্ট্রভাষার প্রতি আমাদের অনাদর, অবহেলা তো মা-মাতৃদুগ্ধকে অবহেলা করা। মাতৃদুগ্ধকে অবহেলা করলে বলসঞ্চার হবে কীভাবে? পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জন্ম নেওয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতার মূলমন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে নির্বাসন দেওয়া হয়। নতুন করে সাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করার ও বিভাজনের রাজনৈতিক, সামাজিক সংস্কৃতি গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ আবার সংবিধানে স্থান পায়। কিন্তু পঁচাত্তর-পরবর্তী সাম্প্রদায়িক-বিভাজনের রাজনীতির বিষবাষ্পের প্রভাবে জাতীয় ঐক্য অনেকাংশেই আজ ক্ষুণ্ন। ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়ে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অনাদর ও অবহেলা বাংলার শক্তিকে  ক্রমাগত নিঃশেষ করে চলেছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে বাংলাকে জীবিকার ভাষায় রুপান্তর করতে হবে। প্রযুক্তির এই যুগে বাংলাকে প্রযুক্তিবান্ধব করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজিতে শিক্ষাদান আমাদের সংবিধান, বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ও ভাষা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। এ বিষয়ে একটি ভাষানীতি আবশ্যক। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও রাষ্ট্রের ভাষা আজও বাংলা হয়নি। আর এভাবেই বাংলা ভাষার অমিত শক্তি ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে যা আত্মঘাতি।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ